ক্রিকেট থেকে ফিফা, জুয়ার রমরমা শহরেও

ছ’বছর বেঙ্গালুরুতে ক্রিকেট জুয়ার সাম্রাজ্য চালানোর পরে ডেরা বদল হল কলকাতায়। প্রথমে পোস্তা, তার পরে জোড়াবাগান, তার পরে সব শেষে বালিগঞ্জ! সেখানকার বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাটে ক্রিকেট জুয়া চালানোর অভিযোগে গত মঙ্গলবার ধরা পড়েছে রাজেন্দ্রকুমার জাজোদিয়া ওরফে রাজু। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় রাজু জানিয়েছে, সে ধরা পড়লেও যাদের হয়ে সে কলকাতায় ক্রিকেট জুয়া চালাচ্ছে, সেই তিন জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই তিন জন কোথায় আছে? গোয়েন্দারা জানান, তাদের এক জন কলকাতায় গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। বাকি দু’জন পুলিশের তাড়া খেয়ে কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছে।

Advertisement

শমীক ঘোষ ও শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

ছ’বছর বেঙ্গালুরুতে ক্রিকেট জুয়ার সাম্রাজ্য চালানোর পরে ডেরা বদল হল কলকাতায়। প্রথমে পোস্তা, তার পরে জোড়াবাগান, তার পরে সব শেষে বালিগঞ্জ!

Advertisement

সেখানকার বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাটে ক্রিকেট জুয়া চালানোর অভিযোগে গত মঙ্গলবার ধরা পড়েছে রাজেন্দ্রকুমার জাজোদিয়া ওরফে রাজু। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় রাজু জানিয়েছে, সে ধরা পড়লেও যাদের হয়ে সে কলকাতায় ক্রিকেট জুয়া চালাচ্ছে, সেই তিন জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। ওই তিন জন কোথায় আছে? গোয়েন্দারা জানান, তাদের এক জন কলকাতায় গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে। বাকি দু’জন পুলিশের তাড়া খেয়ে কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছে।

কিন্তু বেঙ্গালুরু থেকে রাজু পালিয়ে এল কেন? কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের দাবি, রাজুকে বেঙ্গালুরু পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল। মঙ্গলবার রাজুর সঙ্গে পবন অগ্রবাল নামে তার এক সঙ্গীকেও জুয়া চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

গোয়েন্দাদের দাবি, রাজু আরও জানিয়েছে, শুধু ক্রিকেটের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট নয়, ফিফা বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-সহ বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টেও জুয়া-চক্র চলে কলকাতায়।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জুয়ার টাকার লেনদেন হয় হাওলার মাধ্যমে। আর কলকাতার ক্ষেত্রে নগদ টাকায়।

গোয়েন্দারা জানান, ক্রিকেট জুয়া চলে বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে। নতুন খেলুড়েদের জন্য প্রয়োজন হয় এক জন ‘গ্যারান্টার’-এর। ফোন করে বাজির দর লাগানো হয়। বাজির দর নিয়ে পরে যাতে কেউ অস্বীকার করতে না পারে, সে কারণে দামি ভয়েস রেকর্ডার ব্যবহার করা হয়। রাজুদের গ্রেফতারের সময়ে বালিগঞ্জের ওই ফ্ল্যাট থেকে বিদেশি দু’টি ভয়েস রেকর্ডার বাজেয়াপ্ত

করেন গোয়েন্দারা। তাঁরা আরও জানান, খেলার পর থেকে অন্তত ১২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা লেনদেন হয়। বুকিদের এজেন্টরা এই টাকা দেওয়া-নেওয়া করে। অনেক পরিচিত খেলুড়েরা নিজেরাই বুকিদের সঙ্গে টাকা লেনদেন করে।

কী ভাবে কাজ করে জুয়া-চক্র? গোয়েন্দারা জানান, বিদেশের একটি ওয়েবসাইট খেলা অনুযায়ী জুয়ার দর ঠিক করে। এ দেশের জুয়া চক্রের পাণ্ডারা সেই ওয়েবসাইটে মোটা টাকা বিনিয়োগ করে ‘মাস্টার কোড’ কেনে। সেই কোড তারা বিলি করে বিভিন্ন এজেন্ট ও সাব-এজেন্টকে। এজেন্ট বা সাব-এজেন্টরা স্থানীয় স্তরে গিয়ে জুয়া চক্র চালায়।

গোয়েন্দারা জানান, রাজু জেরায় জানিয়েছে, ওই ওয়েবসাইটের দরের সঙ্গে স্থানীয় বুকিদের দরের হুবহু মিল থাকে না। ২-৫ শতাংশ কম-বেশি হয়। তবে আন্তর্জাতিক জুয়া চক্রের কাছে কোন দল ‘ফেভারিট’ এবং কোন দল পিছিয়ে, সে বিষয়ে আঁচ মেলে। সেই তথ্য দেখেই ফোনে-ফোনে জুয়া খেলা হয়ে যায়।

লালবাজার সূত্রের খবর, কোন দলের সঙ্গে কোন দলের খেলা, সেই অনুযায়ী জুয়ার দরের হেরফের হয়। অনেক সময় ম্যাচ চলাকালীন তা বদলেও যায়। ম্যাচ চলাকালীন জুয়ার বাজি ওঠানামা করতে থাকে। কোনও সময় ১০০ টাকায় ২০ টাকা বেশি মেলে, কখনও ৬০। কখনও কখনও জুয়া হয় ক্রিকেটের প্রতি বল নিয়েও। একই ভাবে ফুটবল ম্যাচে কোন দল আগে গোল করবে, পেনাল্টিতে গোল হবে কি না, এ সবও জুয়ার আওতায় পড়ে।

এক গোয়েন্দা কর্তা জানিয়েছেন, আইপিএল টুর্নামেন্টে জুয়াড়িদের কাছে ‘কিংস ইলেভেন পঞ্জাব’ দলের রেট সব চেয়ে বেশি। তার পরেই রয়েছে ‘রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু’। ঠিক সে রকমই ফুটবলে জুয়ার দর বেশি ‘রিয়াল মাদ্রিদ’ দলের।

তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বই থেকে এই জুয়া চক্র চালানো হলেও চক্রের চাঁইরা পশ্চিমবঙ্গেরই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে। পলাতক বুকিদের খোঁজে শুক্রবার এবং শনিবার রাতে বালিগঞ্জ, ফুলবাগান, বেলেঘাটা-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দারা হানা দিলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।

ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের ‘কল ডিটেল্স’ খতিয়ে দেখখার পরে গোয়েন্দাদের দাবি, এ রাজ্যে কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও সক্রিয় এই জুয়া চক্র। কলকাতা ছাড়াও শিলিগুড়িতেও আইপিএল এবং ফুটবলের উপরে জুয়া বা বেটিং চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন