দুরন্ত সেভ
নেদারল্যান্ডসের গোলকিপার টিম ক্রুলের পেনাল্টির সেভগুলো দেখে আমার কিপার জীবনের কথা মনে পড়ছিল।
চিমা, হরজিন্দর সিংহ, মানস ভট্টাচার্যদের পেনাল্টি বাঁচানোর সময় এ রকম মাইন্ড গেম তো আমিও খেলতাম। সাফল্যও পেয়েছি বেশ কয়েক বার। সব গোলকিপারই এটা করে। যখন পেনাল্টি স্পটে বলটা বিপক্ষের ফুটবলার বসায়, তখন গোলকিপাররা তাদের গিয়ে বলে আসে, তোমার শট আমি আটকাবই। তার পর নিজের জায়গায় গিয়ে ইচ্ছে করেই কোনও একটা দিকে ঝুঁকে দাঁড়ায়। এর পিছনে কাজ করে একটাই অঙ্ক--- বিপক্ষ ফুটবলার যাতে কিপারের পছন্দের দিকেই শটটা মারে।
কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ঠিক এই কাজটাই করতে দেখলাম ক্রুলকে। এবং দেখলাম, সবাই ওর ফাঁদে পা দিল। তার মধ্যে দু’টি রুখে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস কিপার। কিপাররা পেনাল্টির সামনে দাঁড়িয়ে মাইন্ড গেম খেলে দু’টি কারণে। এক)
জয়োল্লাস
নিজেকে চাঙ্গা করার জন্য। দুই) বিপক্ষ যে ফুটবলার কিক মারতে আসছে তাকে চাপে ফেলার চেষ্টা। শনিবার রাতে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা যদি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ফেলে কাটাছেঁড়া করা যায়, তা হলে দেখা যাবে, কোস্টারিকার গোলকিপার নাভাস বেশ কিছু দুর্দান্ত গোল সেভ করেছে রবেন, ফান পার্সিদের। ক্রুলের মতো টাইব্রেকারে নাভাস-ও কিন্তু মাইন্ড গেম খেলার চেষ্টা করেছে। সফল হয়নি। ফান গলের টিমের ফুটবলাররা পেনাল্টিটা ঠিকঠাক মেরেছে বলে।
নেদারল্যান্ডস কিপারের কৃতিত্ব আমার মতে একশো শতাংশ। কেন? কারণ, অতিরিক্ত সময়ের ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে তাকে নামিয়ে ফাটকা খেলেছিলেন ফান গল। ক্রুল মাঠে নেমে একটা বলও ধরার সুযোগ পায়নি। তার উপর টাইব্রেকারের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়েছে ওকে। এই অবস্থায় কোনও কিপারের সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। কারণ, মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে না।
টিভি-তে ভাষ্যকার বলছিলেন, যে ছেলেটা গত পাঁচ বছরে ২০টি পেনাল্টি কিকের সামনে পড়ে মাত্র দু’টি বাঁচিয়েছে, কেন তাকে নামানো হল এই অবস্থায়? সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছিল, ফান গল একটা বড় ভুল করলেন কি না! আসলে এই পরিস্থিতিতে অনেক কোচই ফাটকা খেলেন কিপার বদল করে। আমাদের ফুটবলার জীবনেও প্রদীপদা, অমলদা- দের দেখেছি এ রকম করতে। কয়েক দিন আগে আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মহমেডান কোচ সঞ্জয় সেন অতিরিক্ত সময়ের শেষ দিকে কিপার বদলে নামিয়ে দিয়েছিলেন নাসিম আখতারকে। মহমেডানও সফল হয়েছিল। এটা হয়েই থাকে। কোচেরা একটা ঝুঁকি নেন অকুতোভয় হয়েই।
সেটা করেই ফান গলও সফল। কিন্তু ম্যাচটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল, কোস্টারিকা খেলাটা টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চাইছে মূলত তাদের কিপার ভাল বলে। হল ঠিক উল্টোটা। ম্যাচটা অবশ্য বরাবরই ঢলে ছিল কমলা ব্রিগেডের দিকে। ডাচরা নির্ধারিত সময়ে জিততে পারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাচটা টাইব্রেকারে গেল মূলত কোস্টারিকার আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবলের জন্য। সে দিক থেকে ভালই হয়েছে। না হলে টিম ক্রুলের এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আমাদের দেখা হত না।
এ বার লিওনেল মেসির আর্জেন্তিনার সামনে নেদারল্যান্ডস। আমি নিশ্চিত, ওই ম্যাচে ক্রুলকে প্রথম একাদশে খেলাবেন না ফান গল। খেলবেন জ্যাসপর সিলেসেনই। ক্রুল থাকবে হয়তো রিজার্ভ বেঞ্চে। ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে পেনাল্টি বাঁচানোর অপেক্ষায়। ক্রুল খেলুক না খেলুক, ও কোস্টারিকার বিরুদ্ধে যে ভাবে, যে পরিস্থিতিতে একার কৃতিত্বে নেদারল্যান্ডসকে জিতিয়েছে তা বিশ্বকাপের ইতিহাসে কিপারদের কাছে মাইলস্টোন হয়েই থাকবে।