কোচ ফুজা তোপের সঙ্গে এক নম্বর অস্ত্র আদিলেজা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মাসে আদিলেজার বেতন মাত্র এক লক্ষ টাকা। গত বছর ইউনাইটেড সিকিমে খেলেছিলেন। নাইজিরিয়ান এই স্ট্রাইকারই এ দিন পিছনে ফেলে দিলেন পিয়ের বোয়া, কাতসুমিদের মতো দামি বিদেশিদের।
বছর দু’য়েক আগে ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া সুুনীল কুমার প্রতি মাসে পান পঞ্চাশ হাজার। সেটপিস থেকে করা তাঁর দুরন্ত গোলেই জয় ছিনিয়ে নিল মহমেডান।
এই মরসুমে মহমেডান টিমের বাজেট মাত্র নব্বই লক্ষ। অথচ নব্বই লক্ষের টিমই পর পর দু’টি বড় ম্যাচে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের মতো প্রায় দশ থেকে এগারো কোটি বাজেটের টিমকে।
কোটি টাকার বিদেশি পিয়ের বোয়া, লিও বার্তোস, র্যান্টি মার্টিন্স বা দামি দেশি ফুটবলার মেহতাব, জেজে, বলবন্ত--- দু’প্রধানের বড় নামগুলোর ভিড়ে কোথায় যেন হারিয়ে যান আদিলেজা, উগোচুকু, সুনীল, ফুলচাঁদ, বসন্তরা। অথচ সাদা-কালো জার্সিতে কলকাতা লিগে ফুল ফোটাচ্ছেন মহমেডানের এই অনামীরাই।
কলকাতা লিগে খেলতে নামার মাত্র এক মাস আগে অনুশীলন শুরু করেছিল মহমেডান। আদিলেজা, অ্যালফ্রেডরা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মাত্র কয়েক দিন আগে। কিন্তু রবিবার ম্যাচের পর মনে হল, মহমেডানের ফিটনেস মোহনবাগানের চেয়ে অনেক বেশি।
নব্বই লক্ষের মহমেডানকে এ বছর ছোট টিমের আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তা ভুল প্রমাণ করার তাগিদে যেন মাঠে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন আদিলেজারা। মহমেডানের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার বলেই দিলেন, “আসার থেকে শুনছি মহমেডান নাকি ছোট দল। তা ভুল প্রমাণ করতে সবাই মুখিয়ে ছিলাম। এটা টিম গেম।”
মহমেডানের এই সাফল্যের পেছনে অবশ্য কতকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করেছে।
এক) অসীম ছাড়া সে অর্থে বড় নাম নেই টিমে। আর তারকার ভিড় না থাকায় ফুটবলারদের মধ্যে কোন ইগো সমস্যা নেই। স্বভাবতই টিমে একতা বেড়েছে।
দুই) ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এ বছর আবাসিক শিবির না করলেও মহমেডান কিন্তু এক সপ্তাহের জন্য হলেও আবাসিক শিবির করেছে কল্যাণীতে। যা মাঠে কাজে লেগেছে।
তিন) ফুজা তোপের মতে, তিনি নাকি ফুটবলের আধুনিক ট্রেনিংয়ে বিশ্বাসী। তাঁর ব্যাখ্যা, “আগে ফুটবলারদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ফিট করে তার পর পরিস্থিতি বুঝে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছি।” তিন-চার ঘণ্টার টানা কঠিন অনুশীলনের বদলে ট্যাকটিক্যাল অনুশীলনই সাফল্য আনছে বলে মনে করেন মহমেডান কোচ।
গত বছর প্রায় দশ কোটির টিম করেছিল মহমেডান। ডুরান্ড কাপ ও আইএফএ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া কোনও সাফল্য পায়নি তারা। উল্টে আই লিগে অবনমন হয়েছিল। এ বার তাই কর্তারা বড় নামের পেছনে না ছুটে মূলত জুনিয়রদের নিয়েই টিম করেছেন। নিয়ে এসেছেন আদিলেজার মতো কম দামি বিদেশিদের। যার নিট ফল, দুই প্রধানকে হারানোর পাশাপাশি পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম দাবিদার ফুজা তোপের টিমও।
এ দিন ম্যাচের পর মুখোমুখি দুই ড্রেসিংরুমে দু’রকম চিত্র উঠে এল। আর্মান্দো কোলাসোর টিমের পর সুভাষ ভৌমিকের মোহনবাগানকে হারিয়ে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসল সাদা-কালো শিবির। সতীর্থদের জল ছিটিয়েই ফুটবলাররা সেলিব্রেশনে মাতলেন। কোচকে কোলে তুলে রীতিমতো নাচানাচিও হল। যেন কলকাতা লিগটাই ঢুকে গিয়েছে মহমেডানে। উল্টো দিকে সবুজ-মেরুনে তখন শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা।
ডার্বির ঠিক এক সপ্তাহ আগে নব্বই লক্ষের টিমের কাছে এই হারের প্রভাব ৩১ অগস্ট পড়বে কি? প্রশ্ন সেটাই।