কোহলি-নির্ভরতা না ছাড়লে কাপের আশা ছাড়তে হবে

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ উদ্বোধনী ম্যাচে নামতে বাকি আর ঠিক পনেরো-ষোলো দিন। যুক্তি বলে, বিশ্বকাপে যারা নামবে তাদের এখন একবার পুরোটা ঝালিয়ে নেওয়ার সময়। প্রস্তুতি তাদের শেষ হয়ে থাকবে, এখন শুধু ফিনিশিং টাচের সময়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে, এরা উল্টো পথে হাঁটছে। যে সমস্যাগুলো এত দিন ধরে ভোগাচ্ছিল টিমকে, এখনও সেগুলো আছে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৩
Share:

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ উদ্বোধনী ম্যাচে নামতে বাকি আর ঠিক পনেরো-ষোলো দিন। যুক্তি বলে, বিশ্বকাপে যারা নামবে তাদের এখন একবার পুরোটা ঝালিয়ে নেওয়ার সময়। প্রস্তুতি তাদের শেষ হয়ে থাকবে, এখন শুধু ফিনিশিং টাচের সময়।

Advertisement

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে, এরা উল্টো পথে হাঁটছে। যে সমস্যাগুলো এত দিন ধরে ভোগাচ্ছিল টিমকে, এখনও সেগুলো আছে। অস্ট্রেলিয়ায় মাস দু’য়েক কাটিয়ে ফেলল ধোনিরা। কিন্তু একটা ম্যাচও জিততে পারল না। একটা সাইড ম্যাচও না! অ্যাডিলেড টেস্ট ভারত জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিল, বাকিগুলোতেও খারাপ খেলেনি এ সব কথাবার্তার কোনও মানেই থাকে না, তুমি জিততে না পারলে। জেতা যেমন একটা অভ্যেস, হারটাও তেমন একটা অভ্যেস। ভারত দ্বিতীয়টায় পুরো ঢুকে পড়েছে। বোলিং নিয়ে সমস্যা। ওপেনিং নিয়ে জট। ধোনি অস্ট্রেলিয়ায় আড়াই মাস কাটিয়ে ফেলেও বিশ্বকাপে ওর প্রথম এগারো কী হবে, জানতে পারল না।

আসলে টিমটার প্রস্তুতিই এখনও সম্পূর্ণ নয়। টেকনিক্যালি বিশ্বকাপে নামার আগে ভারত শুক্রবার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলে ফেলল। আর তাতে টিম নিয়ে স্বস্তির চেয়ে আশঙ্কার জায়গা বেশি। বিশ্বকাপের দেশে বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে নামা মানে, ওটাই বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ প্রস্তুতি। ধোনিদের সেটা অত্যন্ত খারাপ হল। অন্তত দশে চারের বেশি তো কোনও ভাবে দেওয়া যাবে না।

Advertisement

কেন? কারণগুলো পরপর তুলে দিচ্ছি।

এক) ওপেনিং: শিখর ধবন এ দিন বহু দিন পর তিরিশের বেশি পেরোল। ওকে দেখে মনে হয়েছে অন্তত ও ক্রিজে নেমে লড়তে চাইছে। এত দিন ধবনকে দেখছিলাম, নেমেই দুমদাম চালিয়ে অফ ফর্মের গাঁট থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওর ৩৮ ওর অবস্থাকে সামান্য ভাল করবে, কিন্তু ধোনির কাছে সেটা কোনও ভাবেই বিরাট স্বস্তির কিছু নয়।

বিশ্বকাপে নামার আগে দু’টো ওয়ার্ম আপ ম্যাচ পাবে ধোনি। সেখানে অন্তত একবার ওপেনিংয়ে স্টুয়ার্ট বিনিকে পাঠিয়ে দেখতে পারে। আমি যখন অধিনায়ক, তখন তো আমাকে অপশনগুলো সব দেখে নিতে হবে। বিনি যদি ওপেনিংয়ে ক্লিক করে যায়, ভারতের তো অনেকগুলো বিকল্প খুলে যাবে। একটা বাড়তি বোলার বা একটা বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে তখন নামা যেতেই পারে। ধোনি এই সিরিজেই সেটা করে দেখতে পারত। জানি না, কেন ওপেনিংয়ে ওর বিকল্পগুলো দেখে নিল না।

দুই) মিডল অর্ডার: বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ নয়। কিন্তু কিছুটা তো অবশ্যই। ত্রিদেশীয় সিরিজ শুরুর আগে মিডল অর্ডার টিমকে ভাবায়নি। কিন্তু ব্রিসবেন আর পারথে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের মিডল অর্ডার যা খেলল, তার পর ভাবতে হবে। সবচেয়ে যেটা খারাপ, মিডল অর্ডারের কাউকে দেখছি না ক্রিজে গিয়ে সময় দিতে। বিরাট, রায়না সবাই একই রোগে ভুগছে। টসের সময় সব সময় বোঝা যায় না উইকেট কেমন। তখন যেটা আড়াইশোর উইকেট মনে হয়, পরে ব্যাট করতে নামলে অনেক সময়ই সেটাকে তিনশোর উইকেট মনে হতে পারে। কিন্তু রানটা তো তুলতে হবে ক্রিজে সময় দিয়ে। ওপেনাররা রান করল, অথচ মিডল অর্ডারের অযথা তাড়াহুড়োয় দু’শোয় টিম শেষ হয়ে গেল লাভ কী?

তিন) অতিরিক্ত কোহলি-নির্ভরতা: এটা মারাত্মক রোগ। যা ভারতীয় টিমকে এখন তাড়া করছে। কোনও চ্যাম্পিয়ন টিমকে দেখবেন না এক জনের উপর ভরসা করে কাপ জিততে চাইছে। নয়ের দশকে ভারতীয় ক্রিকেটে এটা ছিল। একটা সচিন তেন্ডুলকর আর তার আশেপাশে বাকি দশ। এবং ভারত তখন কোনও বিশ্বকাপও জেতেনি।

অথচ ২০০০ সালের পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে এই একজনের উপর নির্ভর করার ব্যাপারটা উঠে গিয়েছিল। দাদিরা (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) যখন কাপ ফাইনাল খেলল, তখন একটা সচিন ছিল। সচিন না পারলে দাদি ছিল। দাদি না পারলে রাহুল দ্রাবিড় ছিল। আবার চার বছর আগে ওয়াংখেড়েতেও সচিনের সঙ্গে গম্ভীর ছিল। যুবরাজ, কোহলি, রায়না ছিল। ওরাও না পারলে একটা ধোনি ছিল। তিরাশিতেও কিন্তু একটা কপিল দেবের উপর টিম দাঁড়িয়ে থাকেনি।

কিন্তু এ বার দেখছি রোগটা ফিরে এসেছে। জেতালেও কোহলি। হারালেও কোহলি। মানছি, কোহলি এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। হয়তো বা সেরাই। কিন্তু তার পক্ষেও একা বিশ্বকাপ জেতানো সম্ভব নয়।

চার) বোলিং কম্বিনেশন: এখনও চূড়ান্ত করা গেল না। ইশান্ত শর্মার চোট। বাকিরাও কে কতটা ফিট বা ঝরঝরে আছে, সন্দেহ। মোহিত শর্মাকে একমাত্র দেখে মনে হচ্ছে, ওর বলে কিছু হতে পারে। কিন্তু ও আবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডেই নেই। আমার মনে হয়, ইশান্তদের চোট নিয়ে যখন এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, মোহিতকে স্ট্যান্ডবাই রাখা উচিত। কারও চোট না সারলে সোজা ঢুকিয়ে নেওয়া উচিত টিমে। প্রথমত ওর বৈচিত্র অনেক বেশি। তা ছাড়া ও অত্যন্ত লড়াকু ক্রিকেটার। টিম যখন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, মোহিতের মতো ক্রিকেটার পজিটিভ এনার্জি নিয়ে আসে।

পাঁচ) ডেথ ওভার আতঙ্ক: যে পরীক্ষাটা ভারতীয় বোলারদের সিরিজে দিতেই হল না। প্রত্যেক বার প্রথমে ব্যাট করল ভারত। আর এমন একটা রান তুলল যে, তা দিয়ে লড়া সম্ভব নয়। ডেথ ওভার ভারতীয় বোলিং মোটেও ভাল করেনি গত এক বছর ধরে। আর প্রতিপক্ষ প্রথমে ব্যাট করে পঞ্চাশ ওভার না ব্যাট করায় বিশ্বকাপের আগে জানাও গেল না, সেই সমস্যাটা কোন জায়গায় রয়েছে।

মোটামুটি এই পাঁচ। যে কারণে প্রস্তুতিকে খারাপ বলতে হচ্ছে। তবে এত কিছুর পরেও টিমটাকে ধর্তব্যের বাইরে কিছুতেই রাখব না। কারণ টিমটার ব্যাটিং লাইন আপ। রোহিত, রাহানে, কোহলির মতো ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে সফল হবে না, বিশ্বাস করি না। আর এটাও বলব, সচিন-দ্রাবিড়দের চলে যাওয়ার পর এত ভাল ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ আসেনি। যারা জানে কী ভাবে সফল হতে হয়।

শুধু দেশে নয়। বিদেশেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন