কলকাতার শব্দব্রহ্মকে ভয় পাচ্ছেন মাতেরাজ্জি

কলকাতা থেকে আসা আটলেটিকো কর্তাদের চোখে-মুখে হতাশা। বিসর্জনের যাত্রার মিছিলে সামিল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও হেরে যেতে রাজি নন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। মাঠে তখন হরমনজিৎ খাবরার সঙ্গে মেন্ডোজা-মেন্ডির স্ত্রী-রাও ভাংড়া নাচছেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

কলকাতা থেকে আসা আটলেটিকো কর্তাদের চোখে-মুখে হতাশা। বিসর্জনের যাত্রার মিছিলে সামিল হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

তা সত্ত্বেও হেরে যেতে রাজি নন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। মাঠে তখন হরমনজিৎ খাবরার সঙ্গে মেন্ডোজা-মেন্ডির স্ত্রী-রাও ভাংড়া নাচছেন। সে দিকে তাকিয়েই মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন কলকাতা কোচ। তার পর প্রেস সেন্টারে ঢুকে বলে দিলেন, ‘‘আমাদের চেয়ে ওরা অনেক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলেছিল বলে জিতেছে। তবে আরও তো নব্বই মিনিট খেলার সুযোগ আছে আমাদের। ফিরে আসার চেষ্টা তো করতেই হবে। রিকভারির জন্য দু’দিন পাব।’’

৩-০ থেকে ৩-৩ করা কী সম্ভব? প্রশ্ন শুনে হাবাস সামান্য হলেও বিরক্ত। টকটকে ফর্সা মুখটা আরও লাল হয়। ‘‘রেফারি দু’টো এমন খারাপ ফ্রিকিক দিল! কী বলব,’’ বলেই হাঁটা দিলেন তিনি।

Advertisement

এর আগে অবশ্য সর্বভারতীয় মিডিয়ার কড়া প্রশ্নের সামনে পড়তে হয়েছে হাবাসকে? কেন এভাবে ভেঙে পড়ল আপনার টিম? কেন লেকিচকে নামালেন? কেন ১-০ হয়ে যাওয়ার পর রক্ষণ মজবুত করলেন না? তাতে যেন আরও তেতে গেলেন স্প্যানিশ কোচ। নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘‘আমি জিততে চেয়েছিলাম। যে কোচ জিততে চায় সে স্ট্রাইকার নামাবে।’’ কিন্তু সেটা তো শেষপর্যন্ত ব্যাক ফায়ার হয়ে গেল? ‘‘আমরা পারিনি। ওরা পেরেছে। ভাল খেলে জিতেছে। সবাই সব ম্যাচ জেতে না।’’

ম্যাচের পর কলকাতার হেডমাস্টার অনেকক্ষণ বসেছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। সবাই ড্রেসিংরুমের দিকে যাওয়ার পর শেষে উঠলেন হাবাস। মাথা নাড়তে নাড়তে। অনেকখানি আসার পর দৌড়ে এলেন মাতেরাজ্জি। পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে একটু এগোতেই হাত মেলাতে এলেন আর এক তৃপ্ত চেন্নাইয়ান ফিকরু তেফেরা। তাঁর টাক মাথায় তেতো মুখেও হাত বোলালেন। তারপর ড্রেসিংরুমে এসে চিৎকার করলেন। ‘‘অ্যাওয়ে ম্যাচে সবসময় জেতা যায় না। কিন্ত গোলটা একটু বেশি হয়ে গেল। তোমরা পারনি। ঘুরে দাঁড়াতে হবে।’’

হাবাস যখন খড়কুটোর মতো অবিশ্বাস্য আশা নিয়ে বাঁচতে চাইছেন, তখন মার্কো মাতেরাজ্জি আবার চিন্তিত কলকাতার দর্শক নিয়ে। তৃপ্তির কুটিল হাসি মুখে নিয়েও বলে দিলেন, ‘‘কলকাতায় সত্তর হাজার দর্শক থাকবে। ওদের সামনে খেলাটা সবসময় চাপের। তাই ৩-০ হলেও ফাইনালে উঠে গেছি বলব না। তবে ওই ম্যাচটাও জিততে চাই।’’ কলকাতার দর্শকদের শব্দব্রহ্মকে ভয় পাচ্ছেন অভিষেক বচ্চন থেকে চেন্নাইয়ানের প্রায় সবাই। তাদের অবশ্য আশ্বস্ত করছেন কলকাতায় খেলা মেহরাজ বা খাবরারা।

৩-০ জেতার পরও এখনও আপনি চাপে? মাতেরাজ্জি বলে দেন, ‘‘একেবারেই না। কোনও চাপ নেই। ফুটবলে তো অনেক মজার ঘটনা ঘটে। তবে গতবার কেরলের কাছে ওদের মাঠে ৩-০ হেরে যাওয়ার পর নিজেদের মাঠে আমরা ৩-৩ করেও অতিরিক্ত সময়ে হেরেছিলাম। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে কেরল জিতে গিয়েছিল। সেটা মাথায় রাখছি।’’

এমনিতে মেজাজি মাতেরাজ্জি এ দিন শান্ত থাকলেও হাবাসের রেফারিং-কটাক্ষ নিয়ে বলতে গিয়ে মেজাজ হারালেন। ইতালীয় বিশ্বকাপার বলে দিলেন, ‘‘খেলার পর অনেকে অনেক কিছু বলে। সেটা ধর্তব্যের মধ্যে আনতে নেই। আমি অন্তত নিই না।’’

সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই কলকাতায় পৌছচ্ছে মাতেরাজ্জি ব্রিগেড। ইলানো-মেহরাজদের নিয়ে শক্তি বাড়িয়ে।

এক তরফা ম্যাচের পর হাবাস এবং মাতেরাজ্জি সামান্য যে-টুকু ফুলকি ওড়ালেন শুধু রেফারিং নিয়ে, তাতে মনে হল সেমিফাইনাল যুদ্ধ সত্যিই এখনও বেঁচে আছে। আরও নব্বই মিনিট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement