কলকাতায় ভাগ্য সঙ্গে ছিল না, বলছেন আর্মান্দো

সোমবারই আই লিগে রানার্স হল ইস্টবেঙ্গল। মঙ্গলবার কাকভোরে গোয়া উড়ে যাওয়ার আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো কোলাসো।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

অভিষেকেই বাজিমাত। ট্রফি হাতে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি। ছবি: পিটিআই

সোমবারই আই লিগে রানার্স হল ইস্টবেঙ্গল। মঙ্গলবার কাকভোরে গোয়া উড়ে যাওয়ার আগে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো কোলাসো।

Advertisement

প্রশ্ন: কলকাতায় ছ’মাসের কোচিং জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন?
আর্মান্দো: ভাল। তবে অহেতুক সমালোচনা এবং ভিত্তিহীন খবর বানানোর প্রবণতা ভাল লাগেনি।

প্র: আপনার লক্ষ্য ছিল আই লিগ। যারা চ্যাম্পিয়ন হল সেই বেঙ্গালুরুকে দু’বারই হারালেন। তা-ও আপনি রানার্স। কলকাতা লিগ পাওয়ার পর নিজেকে দশে কত দেবেন?
আর্মান্দো: সরি, আমি ওসব নম্বর দেওয়ায় বিশ্বাসী নই।

Advertisement

প্র: মোহনবাগানকে তিন বারের সাক্ষাতে এক বার হারিয়েছেন। এক বার ড্র। ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে এই পরিসংখ্যান কতটা উজ্জ্বল?
আর্মান্দো: বাগানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে আমার পয়েন্ট চার। একটা হেরেছি। তাও আমি সে দিন ছিলাম না। ওদেরও পয়েন্ট চার। একে খারাপ বলবেন?

প্র: আপনি বলেছেন, আই লিগ হটডগ বা বার্গার নয়। অপেক্ষা করতে হবে। কেরলের চাত্তুন্নি কিন্তু কলকাতায় এসেই মোহনবাগানকে জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন।
আর্মান্দো: অন্য প্রশ্ন করুন।

প্র: ইস্টবেঙ্গলকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করাতে না পারলে কলকাতা ছেড়ে চলে যাবেন বলেছিলেন।
আর্মান্দো: যাচ্ছি তো। মঙ্গলবার সকালেই গোয়া চলে যাচ্ছি।

প্র: শোনা যাচ্ছে, আপনিই সামনের মরসুমে কোচ। নতুন মরসুমের দল গড়তে টিম লিস্টও কর্তাদের দিয়েছেন।
আর্মান্দো: তা দিয়েছি। কিন্তু সামনের মরসুমে এই ক্লাবে ফিরছি কি না তা বাড়ির সঙ্গে কথা বলে ঠিক করব। আমার মেয়ে লন্ডনে থাকে। ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বউ বাড়িতে একা থাকে আমার প্রতিবন্ধী সিস্টার-ইন-ল কে নিয়ে। তাই বাড়ির সঙ্গে কথা তো বলতেই হবে।

প্র: ইস্টবেঙ্গল এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না কেন? ফেড কাপও আসেনি। আর্মান্দো ম্যাজিকটাই তো কাজ করল না?
আর্মান্দো: ভাগ্যটা সাহায্য করেনি। লাজং, মুম্বই এফসি, আর মোহনবাগানের সঙ্গে ড্র করাটাই ভাইটাল হয়ে গেল।

প্র: মার্কোস ফালোপা কোচ থাকলে ওই ম্যাচগুলো জিতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারতেন? আপনি যেমন লাজংয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ড্র করেছেন, উনি কিন্তু লাজংয়ের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে পাঁচ সিনিয়রকে বসিয়ে জিতেছিলেন।
আর্মান্দো: শুনুন, আমি ফুটবল কোচ। জ্যোতিষী নই।

প্র: আচ্ছা, ময়দানে ফিসফাস, আপনি নাকি ড্রেসিংরুমে তুকতাক করে জল ছেটান।
আর্মান্দো: এই রটনাটা আমিও শুনেছি। আমি হৃদরোগী। ডায়াবেটিস রয়েছে। সুগার, প্রেসার মাঝে মাঝেই নেমে যায়। তাই ব্যাগে রাখা বোতলে নুন-চিনির জল থাকে। সেটা ঝাঁকিয়ে ড্রেসিংরুমে জল ফেলেছিলাম। সেটাই কেউ বাইরে রুচিহীন ভাবে রটিয়েছে।

প্র: আপনি এখনও কি বলবেন কলকাতার ফুটবল সংস্কৃতি বদলানো দরকার?
আর্মান্দো: অবশ্যই।

প্র: কিন্তু সেই পুরনো ফুটবল সংস্কৃতিতেও এমন কোচও আছেন, যারা জাতীয় লিগ-সহ ভারতের সব টুর্নামেন্ট জিতেছেন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল বাগাডুলি ম্যাচ হলেও তাঁরা গুরুত্ব দেন? সেখানে আপনি কলকাতা লিগ জিতে ফেলেছেন বলে ডার্বি ম্যাচেই ছিলেন না।
আর্মান্দো: কে কী ভাবে ব্যাপারটা দেখবে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমি এক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হলে পরের টুর্নামেন্ট নিয়ে ভাবতে বসে যাই। খেতাবের গুরুত্ব সব সময় আগে।

প্র: আপনার বিখ্যাত ‘ম্যান ম্যানেজমেন্ট’ কলকাতায় কাজ করেনি। বিদেশিদের মধ্যে সম্পর্ক সহজ ছিল না। মোগা ক্লাবের প্রতি দায়বদ্ধতা জলাঞ্জলি দিয়ে চলেই গেল। সামনের মরসুমে এ ব্যাপারগুলোয় কর্তাদের কঠোর হতে বলবেন?
আর্মান্দো: এগুলো অতীত। তা নিয়ে ভাবতে চাই না। আর সামনের মরসুমে আমি ইস্টবেঙ্গল কোচ কি না সেটাই তো জানি না।

প্র: কলকাতায় এসেই গত ২৪ নভেম্বর রাতে ডার্বিতে জেতার পর ক্লাব বাড়িতে ইলিশ মাছ পাঠিয়েছিল। রানার্স হওয়ার পর ক্লাব আজ কী পাঠাল?
আর্মান্দো: আজ রাতে গোয়ান ফিশ কারি আর পছন্দের পানীয় দিয়ে রোউইলসন, লোবো, জোয়াকিমদের নিয়ে খাওয়াদাওয়া করব।

প্র: রানার্স হয়ে পার্টি করছেন? এটাই কি সেই নতুন ফুটবল সংস্কৃতি?
আর্মান্দো: পার্টি নয়। বলুন গেট টুগেদার। এটা নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করবেন না প্লিজ।

সর্বোচ্চ গোলদাতা সুনীল, ডাফি

স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়াকে ২-১ হারিয়ে সোমবারই আনুষ্ঠানিক ভাবে আই লিগ ট্রফি নিজেদের হাতে তুলল বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথম বার আই লিগে অংশগ্রহণ করেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে সেলিব্রেশন পর্বে হুড খোলা বাসে করে সুনীল ছেত্রীদের নিয়ে নগর পরিক্রমার পরিকল্পনা রয়েছে আই লিগের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটির কর্তাদের। বেঙ্গালুরুর হয়ে এ দিন গোল করলেন রবিন সিংহ এবং বিখোখেই। স্পোর্টিংয়ের হয়ে ব্যবধান কমান বইমা কারপে। আই লিগ চ্যাম্পিয়নের ট্রফি ছাড়াও এ বারের লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার ট্রফিও পাচ্ছেন বেঙ্গালুরু এফসি-র অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (১৪ গোল)। তবে সুনীল একা এই সম্মান পাননি। তাঁর সঙ্গে যৌথ ভাবে এই ট্রফি পাচ্ছেন সালগাওকরের ডারেল ডাফি। সোমবারে আই লিগের অন্য খেলায় জিতল ডেম্পো। পুণে এফসি-কে তাঁরা হারাল ৩-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন