গাওস্করদের বিস্ফোরণের মাঝে নতুন চিন্তা ভুবনেশ্বরের গোড়ালি

সুনীল গাওস্করের মনে হচ্ছে, আবার সেই আদিম পরম্পরা তাড়া করছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। একটা টেস্ট দুর্দান্ত ভাবে জিতে উঠে পরেরটাতেই বিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের পরম্পরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

সুনীল গাওস্করের মনে হচ্ছে, আবার সেই আদিম পরম্পরা তাড়া করছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। একটা টেস্ট দুর্দান্ত ভাবে জিতে উঠে পরেরটাতেই বিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণের পরম্পরা।

Advertisement

এরাপল্লী প্রসন্ন ফেটে পড়ছেন। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কাজকর্মের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য বাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না কিংবদন্তি স্পিনার। বুঝে উঠতে পারছেন না, রবীন্দ্র জাডেজার মতো এক জন স্টক বোলারকে দিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কার্যকারিতা ঢাকার কথা ভাবা হচ্ছে।

ইশান্ত শর্মা ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টেও নেই। গোদের উপর বিষফোঁড়া— ভুবনেশ্বর কুমারের গোড়ালি ফুলে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনিও চতুর্থ টেস্টে নামতে পারবেন কি না, সন্দেহ।

Advertisement

এক দিকে মাঠের বিপর্যয়। অন্য দিকে, মাঠের বাইরের গোলাগুলি বর্ষণ। দুইয়ে মিলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতীয় দলের অবস্থা শোচনীয়।

সাউদাম্পটনে ভারতীয়দের পঞ্চম দিনের পারফরম্যান্সকে ‘জিরো রেজিসট্যান্স’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন সুনীল গাওস্কর। পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নূন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ভারত তুলে আনতে পারেনি। “ইংল্যান্ডকে আমরাই তো সাহায্য করলাম সিরিজে ফিরে আসতে,” টেস্ট শেষে বলে দিয়েছেন গাওস্কর। সঙ্গে যোগ করেছেন, “ইংল্যান্ডকে ওদের হেডকোয়ার্টারে হারিয়ে ওদের আমরা পুরোপুরি হতাশ করে ছেড়েছিলাম। কিন্তু আমি জানি না পরের পাঁচ দিনে ভারতীয় দল কী করেছে। প্রথম দিন টিমটাকে দেখে ঢিলেঢালা মনে হয়েছে। কুকের ক্যাচ পড়েছে। ও তার পর বড় রান করে বেরিয়ে গিয়েছে। আর শুধু স্লিপ ফিল্ডিং নয়, অনেকগুলো ব্যাপার আছে যে দিকে নজর দেওয়া উচিত। বিজয়ের ওই রান আউট হওয়ার কোনও যুক্তি নেই। মইন আলির চেয়ে ভাল স্পিনার ভারত আগে খেলেছে। দেখে অবাক লাগল যে, একমাত্র রাহানে ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতেই পারল না!”

প্রসন্নর আবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু অশ্বিনকে বসিয়ে রেখে জাডেজাকে খেলিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। “জাডেজা সব ক’টা টেস্ট খেলুক। কিন্তু শুধুই স্টক বোলার হিসেবে। জাডেজার যা ক্ষমতা, তাই দিয়ে ওকে যদি স্ট্রাইক বোলার বানানোর চেষ্টা হয় তা হলে আর কী হবে? এমন বিপর্যয়টা তো হওয়ারই ছিল,” বলে দিয়েছেন প্রসন্ন। এখানেই না থেমে তাঁর আরও সংযোজন, “অশ্বিনকে সব ক’টা টেস্টে খেলানো উচিত ছিল। ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওকে খেলালে ওভালে লাভ হতে পারে। অশ্বিনকে প্রধান ভূমিকা দিতে হবে। ওর সঙ্গে থাকবে জাডেজা।” এবং জাডেজার বোলিংয়ের অবস্থা যে কী, সেটা বুঝতে পরিসংখ্যানই যথেষ্ট বলে জানিয়ে দিচ্ছেন প্রসন্ন। “একশোটা বল লেগে যাচ্ছে ওর একটা উইকেট তুলতে। এতেই কি সব বোঝা যাচ্ছে না? ব্যাটসম্যান তো উইকেটে অনায়াসে জমে যাচ্ছে ওর সামনে।”

ভারতীয় প্রাক্তনদের বিস্ফোরণের মধ্যে আবার টিম থেকে দুঃসংবাদও আসছে পরপর। ইশান্ত শর্মার চোট। চতুর্থ টেস্টে খেলতে পারবেন না, ভারত অধিনায়ক নিজেই বলে গিয়েছিলেন। ভুবনেশ্বর কুমারের গোড়ালি ফুলে থাকায় দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে ভারতীয় শিবিরে। সাউদাম্পটনে হারের পর ভারতীয় টিমকে ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ভুবি বা ইশান্ত কেউ নামেননি। ধোনিও স্বীকার করে নেন যে, ভুবনেশ্বরকে ক্লান্ত দেখিয়েছে। আর যত ভারতীয় শিবিরে দুর্যোগ ঘনাচ্ছে, তত যেন ইংরেজদের পারফরম্যান্স নিয়ে উল্লসিত দেখাচ্ছে ইংলিশ ক্রিকেটমহলকে। দুই প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেট-ব্যক্তিত্ব যেমন।

জিওফ্রে বয়কট এবং ইয়ান বোথাম—দু’জনেই লিখেছেন লর্ডসের হারটা যতটা লজ্জার ছিল, সাউদাম্পটনের জয়টা ঠিক ততটাই দুর্ধর্ষ। বয়কট লিখেছেন, ‘ইংল্যান্ডকে এখন শুধু দেখাতে হবে যে, এটা বিছিন্ন ঘটনা নয়। পরের দু’টো টেস্টেও একই রকম পারফরম্যান্স বার করে আনতে হবে। সিরিজটা জিততে হবে।’ বোথাম আবার লিখেছেন, ‘লর্ডসের জঘন্যতম পারফরম্যান্সের পর সাম্প্রতিক কালে স্মরণীয় একটা পারফরম্যান্স দেখলাম সাউদাম্পটনে। প্রত্যেকটা সেশনে, প্রত্যেক দিনে ইংল্যান্ডকে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হয়েছে। সবচেয়ে ভাল ব্যাপার, টিমের সবাই পারফর্ম করছে। এমন নয় যে, শুধু জুনিয়ররা সেরাটা বার করার চেষ্টা করছে। কুক, বেল, ব্রড, অ্যান্ডারসন যা খেলছে, তাতে মনে হচ্ছে এ বারের গ্রীষ্মটা আমাদের ভালই যাবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন