সেমিফাইনালের প্রস্তুতিতে মেসি। ছবি: উৎপল সরকার
মেসির মারাদোনা হয়ে উঠতে একশো আশি মিনিট বাকি আর!
অন্তিম সপ্তাহে পড়া বিশ্বকাপে এটাই এখন আর্জেন্তিনীয় সমর্থকদের স্লোগান।
চলতি সপ্তাহে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল আর ফাইনাল। এবং নীল-সাদা ভক্তকুলের স্থির ধারণা, শেষ দু’টো হার্ডলও পার করে দেবেন এলএম টেন। আর তা হলেই তো দিয়েগো মারাদোনার অধিনায়কত্বে ছিয়াশিতে আর্জেন্তিনার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই এ বার লিও মেসির নেতৃত্বে কাপ তুলবে আর্জেন্তিনা! কিন্তু স্বয়ং মেসি আদৌ অত দূর ভাবতে রাজি নন। তিনি বরং স্বস্তি পাচ্ছেন, গত দু’টো বিশ্বকাপে তাদের গাঁট আর্জেন্তিনা এ বার ব্রাজিলে টপকাতে পারায়। যে দু’টো বিশ্বকাপেই তিনি দলে ছিলেন। “সেমিফাইনালে উঠে একটা বড় বাধা পেরিয়েছি বলা যায়। দু’হাজার ছয় আর আট, দু’বারই আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে পড়েছিলাম,” বলেছেন মেসি।
একইসঙ্গে মেসি এটাও বলেছেন, “বড় বাধাটা যখন টপকানো গিয়েছে, তখন আমরা আরও এগোবার আশা এ বার করতেই পারি।” স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আর্জেন্তিনা সমর্থকদের স্বপ্নের খানিকটা অংশীদার তিনি নিজেও! “আমাদের প্রথম লক্ষ্যটা আমরা পূরণ করেছি। এ বার আমরা আরও বেশি কিছু চাইছি।”
নব্বইয়ে ফাইনালিস্ট হওয়ার পর বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার গত চব্বিশ বছরে বলার মতো কিছু নেই। চুরানব্বইয়ে মারাদোনার কলঙ্কিত সাসপেনশন। আটানব্বইয়ে ডেনিস বার্গক্যাম্পের দুরন্ত গোলে বিদায়। ২০০২-এ গ্রুপ টপকাতে না পারা। এবং শেষ দুই বিশ্বকাপে শেষ আটে জার্মানির কাছে হার। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে তাই মেসির মুখে “এই ম্যাচটা আমাদের কাছে খুব আবেগের,” শুনে আর্জেন্তিনীয় সমর্থকেরা যেন আরও আলোড়িত।
তার পরেই অবশ্য মেসির কথা শুনলে আর্জেন্তিনীয় সমর্থকদের বাস্তবের মাটিতে পা রাখা উচিত। “আমরা যদি এখনই ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ফাইনাল হবে ধরে নিই, তা হলে বিরাট ভুল হবে। ফাইনালে উঠতে আমাদের এখনও একটা ম্যাচ জিততে হবে। ব্রাজিলকে জার্মনির চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে। সে জন্য মাটিতে পা রেখে চলাই উচিত আমাদের।”
আর্জেন্তিনা শেষ দুই ম্যাচে অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া আর ইগুয়াইনের গোল জিতলেও তাদের অতি মেসি-নির্ভরতা এতটুকু কমার চিহ্ন নেই। দি’মারিয়া চোটের জন্য বাকি বিশ্বকাপের বাইরে। তবে আগেরো প্রায় সুস্থ। কোচ সাবেয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেমিফাইনালে রবেন-ফান পার্সিদের বিরুদ্ধে কিছুক্ষণ আগেরোকে নামাতেও পারেন। তবু মাসচেরানো সাফ বলছেন, “প্রত্যেক বার আমরা বলের দখল পেলেই পরের পাসটাই মেসিকে দেওয়ার চেষ্টা করি। এটা প্রত্যেকেই করছি। কারণ খুব সহজ। মেসি হল এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার।”
সেই মহানায়কও কি নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে বাড়তি চাপে থাকবেন? আর্জেন্তিনা টিমের সঙ্গে সারাক্ষণ ঘোরা ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, দি’মারিয়া না থাকায় মেসির উপর বাড়তি চাপ পড়বে। মেসি ফরোয়ার্ডদের একটু পিছন থেকে খেলছেন। এই ট্যাকটিক্সে দি’মারিয়ার গতিটা একেবারে আদর্শ ছিল দলের জন্য। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সেটা হারাবে মেসির দল। তবে স্বয়ং মেসি বলে দিয়েছেন, “কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা একটা দল হিসেবে খেলেছি। এই টিমগেমটাই আমাদের খেলতে হবে আরও বেশি এগোনোর জন্য।”