গম্ভীরের ব্যাট চলছে, নাইটদের নিঃশ্বাসও

দীর্ঘ দিন ধরে যে সাতাত্তর নম্বর জার্সিটা নয়াদিল্লির রাজিন্দর নগরের বাসিন্দা পরতেন, ওটা আর নেই। পাল্টে ফেলে বুধবার থেকে গায়ে উঠল যেটা, তার নম্বর তেইশ। গৌতম গম্ভীর সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস রেখে জার্সি নম্বর পাল্টে ফেললেন? যমুনাতীর-উত্তর গম্ভীরের আইপিএল-ভাগ্যও কি তাঁর জার্সি নম্বরের মতো এ বার বদলে যাবে? কে জানে!

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

বিধ্বংসী মেজাজে নাইট অধিনায়ক। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

দীর্ঘ দিন ধরে যে সাতাত্তর নম্বর জার্সিটা নয়াদিল্লির রাজিন্দর নগরের বাসিন্দা পরতেন, ওটা আর নেই। পাল্টে ফেলে বুধবার থেকে গায়ে উঠল যেটা, তার নম্বর তেইশ। গৌতম গম্ভীর সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস রেখে জার্সি নম্বর পাল্টে ফেললেন? যমুনাতীর-উত্তর গম্ভীরের আইপিএল-ভাগ্যও কি তাঁর জার্সি নম্বরের মতো এ বার বদলে যাবে?

Advertisement

কে জানে!

টুর্নামেন্টে এখনও পড়ে আছে ছ’টা ম্যাচ। এখনও পড়ে আছে বাকি সবক’টাতেই ‘জিততে হবে’-র আতঙ্কের হিসেব। আজকের পরে সামনে ওঁত পেতে থাকবে মহাশক্তিধর সব টিম। ম্যাড-ম্যাক্সের কিংস ইলেভেন। এমএসডি-র সিএসকে। ডে’ভিলিয়ার্সের আরসিবি। রোহিত-মালিঙ্গার মুম্বই। রবিবাসরীয় কলিঙ্গরাজ্যে কিংস ইলেভেনের বিরুদ্ধে ২/৬ জাতীয় আবার কোনও ‘বালখিল্যতা’-র অর্থ কিন্তু দাঁড়াতে পারে আইপিএল থেকে কার্যত অন্তর্জলি যাত্রা। তাই ডেয়ারডেভিলসকে আট উইকেটে ওড়ানো নিয়ে কেকেআর সমর্থকদের আত্মহারা হয়ে পড়ার কোনও কারণ বা যুক্তি নেই।

Advertisement

বরং বলা ভাল, ক্যাপ্টেন গম্ভীর বুধবারের রাতটা অন্তত শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন। আইপিএলে নাইট অধিনায়কের ‘ডাক টেলস’-এর মতো পরপর দু’টো ম্যাচে দু’টো হাফসেঞ্চুরি এল। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে বুধবারের পর সর্বাধিক অর্ধশতরানের সম্রাটও গম্ভীর। মোতেরার মতো কোটলাতেও টিমের ফার্স্ট উইকেট পার্টনারশিপ সেঞ্চুরি দিল টিমকে। মোতেরার মতো বুধবারের কোটলাতেও জয়ের মুখোমুখি পৌঁছে গম্ভীর-উথাপ্পা ড্রেসিংরুমে ফিরলেন, কিন্তু আজ আর টিম কেকেআর ১২১-১ থেকে ‘আত্মহত্যা’ করে ফিরল না। ফিরল আট উইকেটে যুদ্ধটা জিতে। এবং পুরনো টিমের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীরতন শুক্লদের বঙ্গ ব্রিগেড নয়, গম্ভীর কোটলা ছাড়লেন নিজের শহরের বিরুদ্ধে মরুরাজ্যে হারের ‘প্রতিশোধ’ নিয়ে!

“আমাদের ব্যাটিংয়ে কারও একটা শেষ পর্যন্ত থাকা দরকার।
সৌভাগ্যক্রমে সেটা আজ আমি অনেকটা করেছি।
অনেকে বলছিল, আমরা ফিনিশ করতে পারছিলাম না। আজ সেটা হয়েছে।
আশা করি, পরের ম্যাচ থেকে সেটা আরও হবে।” — গৌতম গম্ভীর

সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ কেকেআর ক্যাপ্টেনকে দেখা গেল বহু দিন পরে হাসছেন! বলেও দিলেন, “খুব স্বস্তি পেলাম। আগের ম্যাচটা যে ভাবে হেরেছিলাম, তার পর এটা খুব দরকার ছিল।” ঘটনা। রাজস্থান রয়্যালসের কাছে যে ভাবে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে চূর্ণ হয়েছিল কেকেআর, তাতে যে কোনও টিমের আত্মপ্রত্যয় বলে কিছু পড়ে থাকার কথা নয়। কিন্তু ওই অবস্থা থেকে টিমটা যে ‘কোমা’ থেকে বেরিয়ে এল, তার আদি ও অকৃত্রিম অনুঘটকের নাম গম্ভীর। ৫৬ বলে ৬৯ টি-টোয়েন্টি বিচারে অত্যাশ্চর্য ব্যাপার নয়, দু’টো হাফচান্স, একটা লোপ্পা বুধবারও দিয়েছেন। নাইট অধিনায়কের ব্যাটিং-ফর্মকে গ্রেটার কৈলাসের রাস্তাঘাটের মতো ঝাঁ চকচকে দেখাচ্ছে না। কিন্তু এটাও সত্যি যে, পুরোনো দিল্লির চাউরি বাজারের মতোও সেটা নয়। পার্নেলকে মিড উইকেট দিয়ে মারা তাঁর ছয়, বা শামিকে পুল করে ফেলে দেওয়া সবই যেন ব্যাটিংয়ে অতীত আভিজাত্যের ইঙ্গিতবাহী। যে গম্ভীর একটা সময় বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন। যে গম্ভীর একটা আইপিএল একাই জিতিয়ে দিতে পারতেন। রবিন উথাপ্পাকে অবশ্যই এ দিনের জয়ের কৃতিত্বে অংশীদার করতে হবে। রঞ্জিজয়ী কর্নাটকী (৩৪ বলে ৪৭) প্রমাণ করে দিচ্ছেন, পাঁচ কোটি দিয়ে নিলামে তাঁকে কেনাটা ভুল হয়নি কিং খানের। গম্ভীরের মতো তাঁরও রয়্যালস আর ডেয়ারডেভিলস ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি হল। কিন্তু কৃতিত্বের সিংহভাগ দিতে হবে অধিনায়ককে। যাঁর তুখোড় ক্যাপ্টেন্সি প্লাস ব্যাটিং কেকেআরের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক সাময়িক ভাবে অন্তত খুলে ফেলল। খুব সহজে, গম্ভীর ছিলেন বলেই নাইটদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস এখনও পড়ছে।

মুশকিল হল, এমন জঘন্য প্রতিপক্ষ আসন্ন ম্যাচগুলোয় গম্ভীর পাবেন না। যাদের অধিনায়কের আঙুলের চোট নাকি সারেনি। শোনা গেল, কেপি-র ভাঙা আঙুল নাকি ঠিকঠাক সেট-ই হয়নি। এবং কেপি-র টিমের ব্যাটিং বা বোলিং দু’টোর একটাও নেই। টুর্নামেন্টের আট টিমের মধ্যে সন্দেহাতীত ভাবে সবচেয়ে যারা নিকৃষ্ট। পরিসংখ্যান বলছে, আইপিএল সেভেনে সবচেয়ে কম উইকেট তুলতে পেরেছে দিল্লি। অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে, ব্যাটিংয়ের অবস্থা তার চেয়ে ভাল কিছু নয়। গ্যারি কার্স্টেন নামক প্রখর ক্রিকেটব্যক্তিত্ব থাকার পরেও দিল্লির ব্যাটিং অর্ডারে নাইটদের মতোই প্রবল গণ্ডগোল। দুমিনি, কেদার যাদবদের মতো ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানদের অক্লেশে লোয়ার-অর্ডারে ঠেলে দেওয়া হয়। সেই টিম গম্ভীরের প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে পাঁচ বোলার আনার কূটনীতির কী ধরবে?

কেকেআর ক্যাপ্টেন ম্যাচ শুরুই করলেন সূর্যকুমার যাদবের স্পিন দিয়ে! যা দিল্লি কেন, কস্মিনকালে কেউই আন্দাজ করতে পারবে না। পরের চার ওভারে একে একে কালিস, সাকিব, উমেশ এবং নারিন। পাওয়ার প্লে-র ছ’ওভারে দিল্লির রান উঠল ২৬, বেরোল পিটারসেন-সহ দু’টো উইকেট। দিল্লির কপাল ভাল ১৬০ তুলল শেষ পর্যন্ত। একটা সময় এমন খেলছিল দিল্লি যে দেখে মনে হবে চোখের সামনে টেস্ট ক্রিকেট চলছে! কিন্তু ৬২ এবং ৬৫ মিটারের সাইড বাউন্ডারি যে মাঠে, সেখানে ১৬০-এ কোনও শক্তিধর টিমেরই অবধ্য থাকা সম্ভব নয়। দিল্লি সেখানে কোন ছার। তবে এমন একপেশে ম্যাচেও তো দু’একটা কাঁটা খচখচ করে বিঁধছে। যেমন, ইউসুফ পাঠানের কদর্য ফিল্ডিং। সিঙ্গলসকে গলিয়ে তিন দিলেন। যেমন, ডেথ ওভার বোলিং। দিল্লির ওই থরহরিকম্প ব্যাটিংই শেষ চার ওভারে কিন্তু ৫৪ তুলেছে। সুনীল নারিন পর্যন্ত শেষ দিকে কখনও বারো, কখনও ষোলো দিয়ে গেলেন। খুব দ্রুত কিন্তু এর ‘প্রতিষেধক’ বার করতে হবে।

ওহ্, আরও একটা ব্যাপার বাকি থেকে গেল। লক্ষ্মীরতন শুক্লকে আজও কেদার যাদবের আগে পাঠানো হয়েছিল। কত করলেন? ১৪ বলে ১০। একটা বাউন্ডারি। সুনীল নারিনের সামনে হৃদয়বিদারক ভাবে পরাভূত। বোলিংয়ে করলেন দু’টো ওভার, দিলেন উনিশ। শামি স্ট্রাইক বোলার হয়েও বেশ কিছু দিন উইকেটের মধ্যে নেই। তিনি হয়তো থাকবেন। লক্ষ্মী-মনোজরা ‘বিপ্লব’ করবেন কী, টিমে তাঁদের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু আইপিএল একটা ব্যাপার কিন্তু ক্রমাগত বুঝিয়ে দিচ্ছে।

বন্যেরা বনে সুন্দর, এলআরএস-রা বঙ্গ ক্রিকেটে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দিল্লি ডেয়ারডেভিলস: ১৬০-৫, দুমিনি ন.আ. ৪০, দীনেশ কার্তিক ৩৬, সাকিব আল হাসান ১-১৩।

কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৬১-২, গম্ভীর ৬৯, উথাপ্পা ৪৭, পার্নেল ২-২১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন