ঝোলা থেকে ফের মুখ বার করল ক্রিকেট ম্যাচ গড়াপেটার বিড়াল। নেপথ্যে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার লু ভিনসেন্ট। যিনি আবার আইসিসি-র গোয়েন্দাদের এজেন্ট বলেই জানা গিয়েছে। যার সুবাদে পাঁচটি ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের ওপর নজর রাখছেন দুর্নীতি দমন শাখার কর্তারা।
আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার কাছে ভিনসেন্ট যে তথ্য দিয়েছেন তার জেরেই ফের নড়েচড়ে বসেছে ক্রিকেট দুনিয়া। ব্রিটিশ মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, আইসিসি গোয়েন্দাদের ভিনসেন্ট জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট-সহ ইংল্যান্ডের কাউন্টি ম্যাচেও ম্যাচ গড়াপেটা এবং ‘স্পট ফিক্সিং’ হয়। যেখানে নাম জড়িয়েছে এক পাকিস্তানি ক্রিকেটার-সহ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ও বর্তমানে হিমঘরে চলে যাওয়া ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগেরও। যার ফলে বৃহত্তর আরও এক ম্যাচ গড়াপেটা এবং ‘স্পট ফিক্সিং’ বৃত্তান্ত সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন আইসিসি-র গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দাদের জেরায় কী বলেছেন ভিনসেন্ট? প্রাক্তন এই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার জানিয়েছেন, ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি কাপে তিনি যখন ল্যাঙ্কাশায়ার এবং সাসেক্স-এর হয়ে খেলতেন সে সময় ম্যাচ গড়াপেটার বেশ কিছু ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছেন। ভিনসেন্টের বক্তব্য শোনার পর আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখা তিন বছর আগে সাসেক্স বনাম কেন্টের একটি ৪০ ওভারের ম্যাচ বিশেষ স্ক্রুটিনির আওতায় এনেছে। ওই ম্যাচে খেলেছিলেন ভিনসেন্ট।
এখানেই শেষ নয়, ২০১২ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড এসেস’-এর হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সময়ও ভিনসেন্ট নাকি ম্যাচ গড়াপেটা হতে দেখেছেন। বাদ দেননি হংকংয়ে সুপার সুপার সিক্সেস-এ ক্রিকেট জুয়া ও ম্যাচ গড়াপেটার কথাও। এমনকী ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ আইসিএল-এ ম্যাচ গড়াপেটার কথাও তুলে এনেছেন তাঁর জবানবন্দিতে। বলেছেন, “উপমহাদেশে ক্রিকেট জুয়ার কিংপিনরা ক্রিকেটারদের সামনে অর্থ এবং সুন্দরী মহিলা টোপ হিসেবে ব্যবহার করেই কাজ হাসিল করতে চায়। যে এই টোপ গিলবে সে-ই জালে জড়িয়ে যাবে।”
ভিনসেন্টের এই জবানবন্দি সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠছে এত দিন কেন এইসব তথ্য জানা সত্ত্বেও আইসিসি তা সামনে আনেনি? যার উত্তরে অবশ্য আইসিসি কর্তারা এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা জানিয়েছেন ভিনসেন্টের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ হতে আরও ১২-১৮ মাস সময় লাগবে তাঁদের।
আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকদের কাছে ভিনসেন্টের বয়ান জানার পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সিইও ডেভিড হোয়াইট এ দিন মিডিয়াকে বলেছেন, “এটি আইসিসি-র বিষয়। তবে বিষয়টির উপর নজর রাখছি আমরা।” সঙ্গে হোয়াইট এটাও পরিষ্কার করে দেন, “নিউজিল্যান্ডে হওয়া কোনও খেলা কিংবা ক্রিকেটার দুর্নীতি দমন শাখার তদন্তের আওতায় নেই।”
তবে অকল্যান্ড এসেস’-এর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অকল্যান্ড এসেস’-এর বেশ কয়েকটি ম্যাচ তদন্তের আওতায় রয়েছে তা জানি। তবে সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা আইসিসি-র পাশেই রয়েছি।”
নিউজিল্যান্ডের হয়ে ২৩ টি টেস্ট এবং ১০৩ টি একদিনের ম্যাচে খেলা ভিনসেন্ট গত বছরের ডিসেম্বরেই জানিয়েছিলেন আইসিসি-র দুর্নীতি দমন শাখার গোয়েন্দাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন করতে নেমেছেন তিনি। এ বার তাঁর এই তথ্য প্রদানের পর ভিনসেন্টের ভূমিকা ক্রিকেটমহলের কাছে অনেকটাই স্পষ্ট।