বিমানবন্দরে পিছনের গেট দিয়ে বার করতে হল ক্যাপ্টেন কুলকে

ঘরের ছেলের ধাক্কায় ‘ঘরের মাঠেই’ বহিরাগত নাইটরা

জাতীয় কংগ্রেসের সুবোধকান্ত সহায়? ভারতীয় জনতা পার্টির রামটহল চৌধুরি? অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সুদেশ মাহাতো? নাকি অমিতাভ চৌধুরি? ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট তো আবার দেশের সাধারণ নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন নিজ-রাজ্য থেকে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

রাঁচি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৫:১১
Share:

মিশন আইপিএল। গন্তব্য ভারত। মরুশহরে যুদ্ধ শেষ করে স্বদেশমুখী বিমানে তাসে ডুব ধোনির। সঙ্গে ম্যাকালামরা। ছবি টুইটার

জাতীয় কংগ্রেসের সুবোধকান্ত সহায়?

Advertisement

ভারতীয় জনতা পার্টির রামটহল চৌধুরি?

অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সুদেশ মাহাতো?

Advertisement

নাকি অমিতাভ চৌধুরি? ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট তো আবার দেশের সাধারণ নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন নিজ-রাজ্য থেকে।

ঝাড়খণ্ড প্রদেশে নির্বাচন-পর্ব সমাপ্তির সাত দিন উত্তীর্ণ। কিন্তু বুধবারের রাঁচিতে উপস্থিত হয়েও সেটা নিয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া যাবে না। যাবে না, উপরোক্ত প্রশ্নগুচ্ছের প্রাবল্যে। যার উত্তর খোঁজা নিরন্তর চলছে। চলবেও। এয়ারপোর্ট থেকে টিম হোটেল পর্যন্ত বিস্তর ঘোরাঘুরি করেও চোখে পড়বে না মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কোনও কাটআউট। আপাতদৃষ্টিতে শহরের আবহ দেখে কে বলবে, আর আটচল্লিশ ঘণ্টা পর নাইট-নিধন যজ্ঞে এমএসডি বলে কেউ এক জন নামছেন? নামছেন আবার নিজের পাড়ায়! বুধবার রাঁচির পারিপার্শ্বিক বলবে, যতটুকু যা উত্তেজনা রাজ্য সরকারকে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন করা-না করা নিয়ে। ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচনে অমিতাভ চৌধুরির কাছে হেরে যাওয়া সুদেশ মাহাতোর লোকসভা নির্বাচনে ‘শোধ’ তোলার প্রসঙ্গ নিয়ে। ক্রিকেট সেখানে কোথায়? সিএসকে কোথায়?

তা হলে কি ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল লিগের ধাক্কায় ‘পূর্ণগ্রাস গ্রহণ’ লেগে গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে?

উত্তরটা খুব সহজ— না!

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে সাধারণ জনতার ভোটপ্রার্থীর সংখ্যা যদি চার হয়, তা হলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে ক্রিকেট-জনতার ভোটপ্রার্থীর সংখ্যাটা দুই।

এক জন ঘরের ছেলে। যাঁর টিম, আইপিএল সেভেনে রাঁচির ঘরের টিম। অন্য জনের টিম গত বছর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ-পার্শ্ববর্তী রাজ্যে ‘আমাদের টিম’-ই ছিল। কিন্তু বর্তমানে তিনি ও তাঁর কেকেআর ‘বহিরাগত’!

এমএসডি এবং গৌতম গম্ভীর।

গালে পাঁচ দিনের খোঁচা খোঁচা শ্বেতশুভ্র দাড়ি, সিএসকের জার্সি আর জিনসে এয়ারপোর্টে ভারত অধিনায়ককে ঘিরে ঘটে যাওয়া পরের পর দৃশ্য দেখার উপায় ছিল না ক্যাপ্টেন গম্ভীরের। টিম কেকেআর তখন ফ্লাইটে। তারা ঢুকছে আজ, বৃহস্পতিবার। সন্ধে ছ’টার রাঁচিতে শ’দেড়েক ক্রিকেট-উৎসাহী ততক্ষণে পাগলের মতো খুঁজে চলেছে ধোনিকে। গেটের বাইরে অটোগ্রাফ খাতা হাতে ঠায় প্রহরারত স্কুলছাত্রের টিম। রায়না-অশ্বিনদের নিয়ে চিৎকারের ডেসিবেল শুনে কি না কে জানে, সামনের গেট দিয়ে বেরনোর প্রচেষ্টাতেই গেলেন না ধোনি। বডিগার্ড সমেত তাঁকে বার করতে হল পিছনের গেট দিয়ে। এবং সমগ্র মিডিয়াকুল থেকে অত্যুৎসাহী পাঁচ থেকে পঞ্চাশ দিক বদলে ভারত অধিনায়ককে ‘ঘেরাও’ করার আগেই অডিতে চড়ে তিনি উধাও। সোজা ঘরমুখী।

উন্মাদনা স্বাভাবিক। একে নিজের শহর, তার উপর সেখানে তাঁর টিমের প্রথম আইপিএল ম্যাচ। ধোনির কৈশোরের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বললে প্রথমেই উঠে আসছে ক্যাপ্টেন কুলের পূর্বজীবনের বিচিত্র সব গল্প। ধোনির বাইক-প্রীতির কথা বলতে গিয়ে কৈশোরে তাঁর ক্রিকেটার-বন্ধু অরিন্দম ঘোষের মতো কেউ শুনিয়ে দিচ্ছেন, প্রথম বাইকের ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় কী ভাবে সেটাকে ব্যাগে ভরে সোজা কলকাতায় উপস্থিত হয়েছিলেন ধোনি। প্রচলিত প্রবাদ, সেই বাইক নাকি আজও আছে। কেউ বা বলে দিচ্ছেন, অতীতে ধোনির কৃচ্ছসাধনের গল্প। যখন বাসভাড়া বাঁচাতে কিনান স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফিরতেন হেঁটে! জেএসসিএ-ও তো মোহাবিষ্ট। পিচ থেকে সুনীল নারিন কোনও সাহায্য পাবেন কি না প্রশ্ন করলে, কিউরেটর এসবি সিংহ নির্বিকার ভাবে শুনিয়ে দিচ্ছেন, “টি-টোয়েন্টি লোকে দেখতে আসে কেন? বিনোদনের জন্য। উইকেটে রান থাকবে। বাউন্স থাকবে। বল ব্যাটে আসবে।” অর্থাৎ, ধোনি-রায়না-স্মিথ-দু’প্লেসিদের নিয়ে তৈরি সিএসকে ব্যাটিং লাইন আপের সুবিধে। আরও শোনা গেল, জেএসসিএ-র মিউজিয়াম ধোনিকে দিয়ে উদ্বোধনের ভাবনা চলছে। সম্ভব হলে ম্যাচের দিন। সেখানে গম্ভীরের কেকেআর? এই ম্যাচ বরাবরই নাইটদের শক্ত গাঁট। তার উপর দুপুরে স্টেডিয়াম কাউন্টারে টিকিট-প্রত্যাশীদের মধ্যে কাউকেই পাওয়া গেল না নাইটদের সমর্থনে।

যা পরিস্থিতি, কেকেআরের ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়ায়’ রেকর্ড প্লাস আবেগ মিলিয়ে এমএসডি-কেই জাতীয় রাজনীতির নরেন্দ্র মোদী দেখাচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন