‘ছোটে’র লক্ষ্মীলাভের দিনেও পিচ-বিতর্কের তাড়া বাংলাকে

আবির্ভাবের প্লটে অন্তিম লগ্নে যে এমন পোলাও-কালিয়া ঢুকবে, দু’দলের নাটকীয় যুদ্ধে ক্রিকেট-রসনা তৃপ্ত হবে, আবার ‘ডেজার্ট’ হিসেবে বিতর্কও বরাদ্দ থাকবে, কে জানত! আবির্ভাব বলতে রঞ্জি ওয়ান ডে যুদ্ধে বাংলার আবির্ভাব, কল্যাণীর সিএবি অ্যাকাডেমির মাঠে, সময় বিকেল চারটে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

নায়ক। বীরপ্রতাপের কোলে লক্ষ্মী।

আবির্ভাবের প্লটে অন্তিম লগ্নে যে এমন পোলাও-কালিয়া ঢুকবে, দু’দলের নাটকীয় যুদ্ধে ক্রিকেট-রসনা তৃপ্ত হবে, আবার ‘ডেজার্ট’ হিসেবে বিতর্কও বরাদ্দ থাকবে, কে জানত!

Advertisement

আবির্ভাব বলতে রঞ্জি ওয়ান ডে যুদ্ধে বাংলার আবির্ভাব, কল্যাণীর সিএবি অ্যাকাডেমির মাঠে, সময় বিকেল চারটে। বাংলার অন্যতম নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল অস্ফুটে বলছেন, “বেহরাকে শুধু দরকার। ব্যস্।”

ওড়িশার ৩৬ বলে ৩৫ চাই, বাংলার চাই পাঁচ-পাঁচটা। অশোক দিন্দা এগোচ্ছেন।

Advertisement

পারবেন, না পারবেন না?

নটরাজ বেহরার ক্যাচটা আর কোথাও নয়, সোজা ছিটকে জমা হল কভারে দাঁড়ানো লক্ষ্মীরতন শুক্লর হাতে। দিন্দা আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ গর্জন ছাড়ছেন একটার পর একটা।

৩৫ নয়, ওড়িশার এখন ২৯ দরকার। চারটে আছে এখনও। আরে, লক্ষ্মী কোথায় চললেন? এটাই তো শেষ ওভার তাঁর। আর একটু পর গেলে কী এমন ক্ষতি হত?

হাফসেঞ্চুরিকারী অরবিন্দ সিংহ বাইরে যাওয়া ডেলিভারিটা ধরতেই পারেননি, ব্যাটে চুমু খেয়ে ওটা উইকেটকিপার শ্রীবত্‌স গোস্বামীর হাতে গেল। পরের বল, আর টেল এন্ডারের এ বার মিডল স্টাম্প নেই!

লক্ষ্মীর দু’বলে দু’টো গেল, পড়ে এ বার শেষ দু’টো, বীরপ্রতাপ সিংহ ছুটছেন।

কলিঙ্গরাজ্য ধ্বংস!

গড়পড়তা দিনের অঙ্ক বলে, বিজয় হাজারের প্রথম ম্যাচে যদি কোনও টিম ২৫ রানে এমন রুদ্ধশ্বাস জয় তোলে, উত্‌সবের দৃশ্যগুলোই স্বাভাবিক ফ্রেম হবে। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে সেটা হল না। ম্যাচ শেষে বরং কল্যাণী মাঠের পিচ নিয়ে ভাল রকম অসূয়া তৈরি হয়ে গেল বাংলা শিবিরে। প্রকাশ্যে নয়, ঠারেঠোরে।

অশোক মলহোত্র: “টসটা এখানে ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিচ্ছে। প্রথম পনেরো-কুড়ি ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।”

লক্ষ্মীরতন শুক্ল: “আমি ক্যাপ্টেন, তাই পিচ নিয়ে বলব না। ক্রিকেট যাঁরা বোঝেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন বাংলার ব্যাটিং বিপর্যয় কেন হল।”

সিএবির কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছিলেন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় চান সবুজ পিচে টিম খেলুক। তাই এটা করা হয়েছে। কল্যাণী পিচের দায়িত্বে থাকা সিএবির প্রাক্তন যুগ্ম-সচিব সুজন মুখোপাধ্যায়ও রাতে বললেন, ওড়িশা কোচ তাঁকে বলে গিয়েছেন পিচ খুব ভাল। ওড়িশা এখানে এসে প্র্যাকটিসও করতে চায়। তা হলে তিনি কোনটা ধরবেন? ঘটনা হল, এ সবে চিঁড়ে ভিজছে না। শিবির থেকে বলা হচ্ছে, নভেম্বরের সকালে কল্যাণী পিচ নাকি ‘আনপ্লেয়েবল’। পরের ম্যাচের আগে পিচ-চরিত্র পাল্টানো দরকার। বাংলা আজ হারতেও পারত।

ঠিকই। বাংলা বৃহস্পতিবার বাঁচিয়ে গেলেন বলতে গেলে দু’জন। কিপার নন, ব্যাটসম্যান শ্রীবত্‌স। আর ক্যাপ্টেন নন, বোলার এলআরএস। বীরপ্রতাপ সিংহের পাঁচ উইকেটের চেয়েও বাংলা অধিনায়কের দু’টোর গুরুত্ব বেশি পরিস্থিতি বিচারে। ওড়িশাকে ৮৮-৫ করে দিয়েও ম্যাচ একটা সময় বেরিয়ে যাচ্ছিল বাংলার হাত থেকে। বোলার লক্ষ্মী সেটা আটকেছেন। কিন্তু তিনি সেই মঞ্চটাই পেতেন না শ্রীবত্‌সের সেঞ্চুরি না থাকলে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বসন্ত মোহান্তিদের সুইংয়ের সামনে রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছিল বঙ্গ ব্যাটিং। অরিন্দম দাস বোল্ড, মনোজ তিওয়ারি খোঁচায়। লক্ষ্মী— তিনিও তাই। ডাবল পেসড উইকেটে শুধু তিনি গেলেই সব শেষ এমন অবস্থায় শ্রীবত্‌স যে ইনিংসটা খেললেন তা দেখে মাঠে উপস্থিত প্রাক্তন ক্রিকেটাররা মানতে বাধ্য হলেন, এত পরিণতি শ্রীবত্‌সের থেকে তাঁরা আশা করেননি।

বিরাট কোহলির সঙ্গে কেরিয়ার শুরু শ্রীবত্‌সের। কোহলি তার পর বিরাট হয়েছেন, শ্রীবত্‌স আটকে থেকেছেন ‘প্রতিভা আছে, পরিণতি নেই’-এর গলিতে। এ দিনের সেঞ্চুরি দেখাল, তাঁর পরিণতিবোধটাও তৈরি হয়েছে। পিচে ঘাস ছিল, সুইং করেছে। কিন্তু এক থেকে পঞ্চাশ ওভার পর্যন্ত তিনি থেকেছেন, ১৪৫ বলে অপরাজিত ১১০ দিয়ে গিয়েছেন টিমকে। যে ইনিংসে চাকচিক্য কম, যা শ্রীবত্‌সের ব্যাটিং-ঘরানার পরিপন্থী। নিজেকে এখন অনেক পাল্টে ফেলেছেন শ্রীবত্‌স। রিকি পন্টিং থেকে নেলসন ম্যান্ডেলা, সবার আত্মজীবনী পড়েন। মাইন্ডসেট নিয়ে খাটেন নিয়মিত।

বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে দেখা গেল শ্রীবত্‌সকে নিয়ে মায়াবী একটা দৃশ্য তৈরি হতে। যখন তাঁকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন অধিনায়ক, একগাল হেসে বলে ফেললেন, “মেরা ছোটে। দেখ্‌না, তু অউর সেঞ্চুরি মারেগা।”

এখনও ‘ছোটে’? ঠিক হল?

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ২২০-৬ (শ্রীবত্‌স ১১০ ন.আ, শুভজিত্‌ ৩৩, বসন্ত ৩-৪৬),
ওড়িশা ১৯৫ (নটরাজ ৭৭, অরবিন্দ ৫০, বীরপ্রতাপ ৫-২৩, লক্ষ্মী ২-৩৩)।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন