জিতেও বিস্ফোরণ আর্মান্দোর

টানেল দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দেখা গেল, তাঁর মুখ থমথমে। মনে হচ্ছিল, হয়তো কোনও ট্রফি খুইয়ে ফিরছেন মাঠ থেকে! মরসুমের প্রথম এবং মসৃণ জয়, তাও কেন এমন মুখ আর্মান্দো কোলাসোর? বোঝা গেল মিনিটখানেকের মধ্যেই। ড্রেসিংরুমে না গিয়ে সোজা সাংবাদিক সম্মেলনে ঢোকার পরই বিস্ফোরণটা ঘটল। “স্কুলের বাচ্চারা এর থেকে ভাল ফুটবল খেলবে। বিশ্রী পারফরম্যান্স। কলকাতা লিগে যত দল খেলছে, তার মধ্যে আজ সবচেয়ে কুৎসিত খেলেছে আমার ছেলেরা!”

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৭
Share:

সদ্যোজাতকে গোল উৎসর্গ বলজিতের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ইস্টবেঙ্গল ৪ (র‌্যান্টি, বলজিৎ ২, দীপক)
বিএনআর ১ (কাজিম)

Advertisement

টানেল দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দেখা গেল, তাঁর মুখ থমথমে। মনে হচ্ছিল, হয়তো কোনও ট্রফি খুইয়ে ফিরছেন মাঠ থেকে!

Advertisement

মরসুমের প্রথম এবং মসৃণ জয়, তাও কেন এমন মুখ আর্মান্দো কোলাসোর?

বোঝা গেল মিনিটখানেকের মধ্যেই। ড্রেসিংরুমে না গিয়ে সোজা সাংবাদিক সম্মেলনে ঢোকার পরই বিস্ফোরণটা ঘটল। “স্কুলের বাচ্চারা এর থেকে ভাল ফুটবল খেলবে। বিশ্রী পারফরম্যান্স। কলকাতা লিগে যত দল খেলছে, তার মধ্যে আজ সবচেয়ে কুৎসিত খেলেছে আমার ছেলেরা!”

ডার্বির আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে ময়দান জুড়ে। লিগের এই ম্যাচগুলো তারই প্রস্তুতি। এটা ভাল ভাবেই জানেন লাল-হলুদ কোচ। আর সে জন্যই সম্ভবত তাঁর এত ‘রাগ’। যা আছড়ে পড়ল সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ড্রেসিংরুম সর্বত্র। দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকার পর ড্রেসিংরুম থেকে যে খবর চুঁইয়ে বেরিয়ে এল তা আরও চমকপ্রদ। আর্মান্দো নাকি এত রেগে গিয়েছেন যে ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, এ রকম খেললে মেহতাবদের আর কোচিং করাবেন না!

হতে পারে এটা টিমকে তাতানোর স্ট্র্যাটেজি। হতে পারে পরের ম্যাচে টিমকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নতুন কৌশল গোয়ান কোচের। কিন্তু আর্মান্দোর কথাবার্তায় একটা জিনিস পরিষ্কার, র‌্যান্টি-বলজিৎরা গোল পেলেও দলের খেলায় এখনও খুশি নন তিনি।

পুরো ম্যাচকে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে ফেললে, পাঁচ বার আই লিগ জয়ী কোচের মনোভাবকে দোষ দেওয়া যায় না। বরং কিছুটা যুক্তিযুক্তই মনে হয়। কেন? সব মিলিয়ে পাঁচটা কারণ সামনে আনা যেতে পারে। এক) গোটা ম্যাচে অজস্র মিস পাস করলেন খাবরা-লোবোরা। দুই) দুই স্টপার রাজু গায়কোয়াড় এবং অর্ণব মণ্ডলের বিশ্রী পারফরম্যান্স। বিশেষত রাজুর গা-ছাড়া মনোভাবে মারাত্মক চটেছেন আর্মান্দো। তিন) গোটা দলে চূড়ান্ত বোঝাপড়ার অভাব। চার) সেট পিসে চূড়ান্ত ব্যর্থতা। পাঁচ) অ্যাটাকিং থার্ডে আক্রমণ তুলেও একের পর এক গোল নষ্ট।

নবনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেল দলটা সারাক্ষণ বেলাইন ছিল। না ছিল তাদের কোনও আক্রমণ, না সংঘবদ্ধতা। তার সুফল র‌্যান্টিরা তুলেছেন ঠিকই, কিন্তু পুরোটা পারেননি। ইস্টবেঙ্গলের তিনটি শট ক্রসপিস এবং পোস্টে লেগে ফিরেছে। না হলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। দুর্বল রেলের বিরুদ্ধে এ রকম ব্যর্থতা নিয়েও জেতা যায়, কিন্তু ৩১ অগস্ট এই বিশ্রী ভুলগুলো ডার্বিতে ডোবাতে পারে কোলাসোর টিমকে।

দ্বিতীয় গোল করার পর বলজিৎকে দেখা গেল কোলে বাচ্চা দোলানোর ভঙ্গিতে ফটোগ্রাফারদের পোজ দিচ্ছেন। পঞ্জাব-তনয়ের উচ্ছ্বাসের আগে অবশ্য আরও তিনটে গোল করে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের একবারে প্রথম মিনিটেই দীপকের ক্রস থেকে র‌্যান্টি মার্টিন্সের নিখুঁত হেডে ১-০। তখনই মনে হচ্ছিল, এই রেল রাজধানী এক্সপ্রেস নয়, মালগাড়ি। বিরতির আগেই তাই ফলটা ৪-০ হয়ে গেল। দীপক মণ্ডল আর বলজিতের সৌজন্যে। এর মধ্যে র‌্যান্টির পেনাল্টি পোস্টে লেগে ফেরার পর ফলোআপে বলজিতের একটি গোল আছে। ব্যস, এর পরই বিরক্তির শুরু। মেহতাব, জোয়াকিম, খাবরাদের মিস পাসের ছড়াছড়ি। অগোছাল ফুটবল। লাল-হলুদ রক্ষণের ভুলে রেল ওই সময় আবার গোল করে ফেলল। ব্যতিক্রম শুধু দীপক মণ্ডল। পুরনো চাল যে ভাতে বাড়ে সেটা দেখিয়ে দিচ্ছেন দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার। আর্মান্দোর অমাবস্যার মুখাবয়ব থেকে একমাত্র প্রশংসা বেরোল তাঁর জন্যই।

ম্যাচটা দেখতে সস্ত্রীক ভিভিআইপি বক্সে বসেছিলেন বিশ্বকাপার লিও বার্তোস। বিরতিতে টিমের ৪-০ এগিয়ে থাকা দেখে তাঁকে বলতে শোনা গেল, “আমাদের টিম তো ভালই খেলছে।” স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোনোর সময় অবশ্য লাল-হলুদ আইকনের মুখে কুলুপ। কীই বা বলবেন। যা বলার সবই তো বলে দিয়েছেন স্বয়ং কোচই।

ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, সৌমিক, রাজু, অর্ণব, দীপক, খাবরা, মেহতাব (জিতেন), লোবো, জোয়াকিম (দীপক তির্কে), বলজিৎ (রফিক), র‌্যান্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন