বিশ্বকাপে মাঝমাঠে নামবেন লাম

জার্মান বেসক্যাম্পে কমান্ডো ট্রেনিং, হর্নের টোটকা ও শাপমুক্তির ক্লাস

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

হর্নের ক্লাসে।

ব্রাজিল মানে হরেক সমুদ্র আর পাহাড়। বিশ্বকাপের জন্য বত্রিশটা দেশের জাতীয় ফুটবল দল এখন বিশ্ব ফুটবলের মক্কায় হাজির। অনেক টিমই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বেসক্যাম্প পেতেছে কোনও সমুদ্রতটে, কিংবা পাহাড়ের কোলে। তবে প্রায় কমান্ডো ট্রেনিং নিয়ে কাপ-যুদ্ধে নামছে কোনও দল যদি বলতে হয়, তা হলে তার নাম জার্মানি।

Advertisement

আর জার্মান ‘প্রাচীর’কে দুর্ভেদ্য করতে জোয়াকিম লো যাঁর সাহায্য নিচ্ছেন, কলকাতাবাসীর কাছে তাঁর নামটা অত্যন্ত পরিচিত। তিনি মাইক হর্ন।

আইপিএল সেভেনে কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম নেপথ্য নায়ক হর্ন এখন ইয়োগি লো-র সংসারে। যিনি বিশ্বযুদ্ধে টিম জার্মানির প্রস্তুতি-পর্ব নিয়ে টুইট করেছেন, ‘টিমটার যা প্রতিভা আর দায়বদ্ধতা, তাতে টিমটা ম্যাজিক তৈরি করবে। ওরা ব্রাজিল এসেছে স্রেফ একটা লক্ষ্য নিয়ে।’

Advertisement

এমনিতে বিশ্বকাপের জার্মানি মানে বরাবরের ঐতিহ্যশালী এক টিম। যারা বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল তো বটেই, সবচেয়ে বেশি বার ফাইনাল আর সেমিফাইনালও তারাই খেলেছে। এটা যদি কাইজার বেকেনবাউয়ারের দেশের শ্লাঘা হয়, তা হলে ইদানীং জোয়াকিম লো-র দলের বুকে কাঁটার মতোও বিঁধছে একটা তথ্য জার্মানি হল বিগ ম্যাচ ফেলিওর! গত কয়েকটা বড় টুর্নামেন্টে যারা দুর্দান্ত শুরু করেও শেষ পর্যন্ত সুবিধে করে উঠতে পারেনি। সেটা দু’বছর আগের ইউরো হোক। কী, চার বছর আগের বিশ্বকাপ। কখনও জার্মান বম্বারদের আচম্বিতে স্তম্ভিত করে দিয়েছে স্পেন, কখনও বা ইতালি। আট বছর আগে নিজেদের দেশের বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালের বেশি এগোতে পারেনি জার্মানি। এহেন পরিস্থিতিতে ব্রাজিলে পৌঁছে আটলান্টিকের ধারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শিবির বসিয়েছে ক্লোজে-সোয়াইনস্টাইগার-পোডলস্কির দল।

সেখানে নানা প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তাঁর ফুটবলারদের ফেলছেন জার্মান কোচ লো। জার্মানির গ্রুপটাও যথেষ্ট কঠিন। ইংল্যান্ড-ইতালি-উরুগুয়ের গ্রুপের মতো এটাকেও বিশেষজ্ঞরা আর একটা ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ বলছেন। জার্মানি, পতুর্গাল, ঘানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফ্রিকান শক্তি ও মার্কিন ফুটবলাররা কখন কী করে দেবে কেউ জানে না! আর জার্মানির প্রথম লড়াই-ই আগামী সোমবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দেশের সঙ্গে। সিআর সেভেন-এর পর্তুগালের মুখোমুখি হওয়ার চার দিন আগেও জার্মান ফুটবলাররা ‘জেট স্কি’ করলেন। আর বিখ্যাত অ্যাডভেঞ্চারার মাইক হর্নের কাছে জোয়াকিম লো-র গোটা দল উদ্দীপক সব কাহিনি শুনল।


বিশ্বকাপের আগে মানসিক শক্তি বাড়াতে আটলান্টিকের বুকে জার্মান টিম।

যে ক্লাস বসল আটলান্টিকের উপর প্রমোদতরীতে। ‘পাঙ্গায়া’ নামের ৩৫ মিটার লম্বা ইয়টটি পৃথিবীর দীর্ঘতম ‘অ্যাডভেঞ্চার সেলিং বোট’। হর্নের মুখে তাঁর নর্থ পোল অ্যাডভেঞ্চার-এর কাহিনি শোনার পর জার্মান অধিনায়ক লাম বলেছেন, “মানুষের শরীর কী অসাধ্যসাধন করতে পারে ভাবা যায় না!” বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড ব্রাজিলের রোনাল্ডোর থেকে ছিনিয়ে নিতে যাঁর আর দু’টো গোলের দরকার, সেই ক্লোজে বলছেন, “হর্নের ক্লাস থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারলাম বিশ্বকাপে ভাল করার জন্য আমাদের নিজেদের যেমন এক দিকে পুরো তৈরি থাকতে হবে, তেমনই প্রতিপক্ষকে সমীহ দেখাতে হবে। তবেই লড়াই জেতা সম্ভব। তবে সবচেয়ে বড় কথা, থাকতে হবে স্ফুর্তিতে। একেবারে চাপ নেওয়া চলবে না। এবং আমরা সেটা নিচ্ছিও না।” শুধু তাই নয়, আটলান্টিকের উঁচু সমুদ্রসৈকতে মেসুট ওজিলের পাশাপাশি সদ্য একশো ভাগ ফিট হয়ে ওঠা এক নম্বর গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ার-কেও হাঁটানো হল।

মোদ্দা কথা, পেলের দেশে কাপ-যুদ্ধে জার্মানি দল প্রতিকুল ম্যাচে যখন পড়বে তখন যাতে খেই হারিয়ে না বসে, তারই ব্যবস্থা। সহনশীলতা আর শক্তি বাড়িয়ে রাখা যাতে টিমটা কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়লে কেঁপে না যায়। ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে বিশ্ব ফুটবলে জার্মানদের একটা পরিচিতি আছে। সেটাকে আরও মজবুত করে তোলার চেষ্টা। এবং হর্নের মোটিভেশন ক্লাস থেকে বেরোনো, কার্যত কম্যান্ডো ট্রেনিং নেওয়া জার্মান টিম এখন এমনই একটা ফুরফুরে দল, যেখানে সোয়াইনস্টাইগারের মতো বিখ্যাত মিডফিল্ডার দলের মাঝমাঠ অধিনায়ক ফিলিপ লামকে ছেড়ে দিয়ে অন্য পজিশনে খেলতে রাজি হয়ে গিয়েছেন! চোটে মার্কো রয়েসের মতো প্রথম একাদশের তারকা ফুটবলারের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়াতেও চিন্তিত নয় জার্মান শিবির। শেষ ওয়ার্ম আপ ম্যাচে আর্মেনিয়াকে ৬-১ উড়িয়ে দেওয়ার পর সোয়াইনস্টাইগারকে বুকে জড়িয়ে ধরে লাম বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি ফ্রেন্ডলিতে যে পজিশনে খেললাম, বিশ্বকাপেও সেই পজিশনে খেলব। তৈরি থাকো।”

অর্থ— খুব সোজাটিম সিআর সেভেন, তোমরাও তৈরি থাকো!

ছবি: এএফপি

তোমার স্বপ্ন যত বড় হবে, নিজেকে তত ছোট মনে হবে! টিমটার যা প্রতিভা আর দায়বদ্ধতা, তাতে টিমটা ম্যাজিক তৈরি করবে। ওরা ব্রাজিল এসেছে স্রেফ একটা লক্ষ্য নিয়ে।
—মাইক হর্ন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন