‘গুরু’ গম্ভীর। ইডেনে গম্ভীরের ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার
ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীর বরাবর আবেগপ্রবণ। ম্যাচের অবস্থা বুঝতে স্কোরবোর্ডের দরকার নেই, কেকেআর ক্যাপ্টেনের মুখের দিকে এক ঝলক তাকালেই তা অনায়াসে পড়ে ফেলা যায়। প্লে-অফে উঠে অবশ্য ক্যাপ্টেন গম্ভীর অনেকটাই নির্লিপ্ত। উচ্ছ্বাসের প্রাথমিক ঢেউয়ে এক সিএবি কর্তাকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া বৃহস্পতিবারের গম্ভীর সংযত, ঠান্ডা। আইপিএল সেভেন দেশে ফেরার পর তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে নাইট অধিনায়কের অননুকরণীয় বাচনভঙ্গির ‘মিসাইলে’ আগুন আছে, কিন্তু একই সঙ্গে আছে সংকল্প।
“প্রথম সাত ম্যাচে পাঁচটা হারার পর টানা ছ’টা ম্যাচ জিতে ভীষণ স্বস্তি পাচ্ছি। মনে-মনে কোথাও জানতাম, আমরা পারব। ড্রেসিংরুমে বসে চার দিকে এত প্রতিভাবান ক্রিকেটার দেখে মনে হত, ভাগ্য পাল্টানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। প্লে-অফে ওঠাটা তাই তৃপ্তির ঠিকই, কিন্তু আমার কাছে আশ্চর্যের নয়,” শুরু করেন গম্ভীর। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ছুড়ে দেন, “আমাদের প্লে-অফে ওঠা কিন্তু ফ্লুক নয়। এটার জন্য প্রচুর খেটেছি সবাই। আমরা সবাই জানতাম, শেষ চারে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের আছে।”
মরুপর্বে বিপর্যয়ের ধাক্কায় লিগ টেবলের তলানিতে চলে গিয়েছিল কেকেআর। সেখান থেকে এ ভাবে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত করা। টিমের মধ্যে কী পাল্টেছে? গম্ভীরের উত্তর, “আমরা যে পাঁচটা ম্যাচ হেরেছি, তার বেশির ভাগই কিন্তু খুব ক্লোজ ছিল। আসলে এই ফর্ম্যাটটাই এ রকম। উদ্ভট সব জিনিস হয় এখানে। কিন্তু এত কিছুর পরেও রাঁচিতে চেন্নাই ছাড়া কোনও টিম আমাদের বিশাল ব্যবধানে হারাতে পারেনি। প্রতিটা ম্যাচ আমরা ১৯ বা কুড়ি ওভার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি। তাই বলব, টিমে বড় কোনও বদল আসেনি। তবে আমরা সবাই আরও ঠান্ডা মাথায়, আরও বুদ্ধি করে খেলার চেষ্টা করেছি।” কিন্তু তাঁর জার্সি নম্বর যে পাল্টেছে? “আমাকে যে যা জার্সি পরতে বলে, পরি। আমি এ সব কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। এই টুর্নামেন্টেই তো তিন বার জার্সির নম্বর পাল্টেছি। বরাবর পাঁচ নম্বর পরতাম। উমেশ বলল ৩৭ পরতে, পরলাম। তার পর রবিন বলল ২৩, তো এখন সেটা পরছি। তবে টিম বা আমার ভাগ্য পরিবর্তন কোনও নম্বরের কৃতিত্ব নয়,” বলে দেন গম্ভীর।
এ বারের আইপিএলে বরাবর রান তাড়া করে জিতেছে কেকেআর। আজ আগে ব্যাট করতে হবে শুনে কী মনে হয়েছিল গম্ভীরের? “যে কোনও স্কোর ডিফেন্ড করার মতো বোলিং আমাদের আছে। আসলে রান তাড়া করাটা আমাদের কাছে খুব কমফর্টেবল একটা ব্যাপার। অনেকে আবার আমাদের ‘চোকার্স’ বলা শুরু করেছিলেন। যে আমরা নাকি ম্যাচ ফিনিশ করতে পারি না। সেই ট্যাগটা ছুড়ে ফেলব বলেই টস জিতলে চেজ করছিলাম। টিমের সবার মন থেকে ব্যাপারটা মুছে ফেলতে। মনে হয় পরপর পাঁচটা ম্যাচে রান তাড়া করে জেতার পর সবার মন থেকে ব্যাপারটা উড়ে গিয়েছে।” সঙ্গে গম্ভীরের সংযোজন, “প্রথম দিকে আমরা ম্যাচটা জেতার দিকে নিয়ে গিয়েও ফিনিশ করতে পারছিলাম না। কিন্তু শেষ ছ’টা ম্যাচে নকআউট পাঞ্চ দিতে পেরেছি।”
গম্ভীরকে দেখে মনে হয়, নাইট-নেতৃত্ব তিনি উপভোগ করছেন। যে প্রসঙ্গে গম্ভীর বললেন, “দু’বছর আগে যেটা বলতাম, এখনও সেটাই বিশ্বাস করি। ক্যাপ্টেন ততটাই ভাল, যত ভাল তার টিম। টিম স্পোর্টে ব্যক্তির কোনও জায়গা নেই। টিম এখন ভাল খেলছে, কিন্তু এর কৃতিত্ব আমার প্রাপ্য নয়। টিমের সবাইকে, এমনকী সাপোর্ট স্টাফকেও এর কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। মাঠের বাইরেও টিমের কয়েক জন দুর্দান্ত নেতা রয়েছে।”