ডাক পেলে গিলি-মন্ত্র জপে নামবেন রায়না

সচরাচর ভারতীয় বোর্ড দেশের হয়ে তিনটে ফর্ম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটারকে তার বাত্‌সরিক কন্ট্র্যাক্টের ‘গ্রেড এ’-তে জায়গা দেয়। যেমন সদ্য প্রকাশিত কন্ট্র্যাক্ট তালিকায় ভুবনেশ্বর কুমারের প্রমোশন হয়েছে ‘গ্রেড বি’ থেকে ‘এ’-তে। গত ক্যালেন্ডার বর্ষে টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে-র পাশাপাশি টেস্ট ম্যাচও খেলায়। সুরেশ রায়না ব্যতিক্রম!

Advertisement

চেতন নারুলা

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

ফ্লেচারদের অঙ্কে কি রোহিতের জায়গায় এ বার রায়না।

সচরাচর ভারতীয় বোর্ড দেশের হয়ে তিনটে ফর্ম্যাটেই প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটারকে তার বাত্‌সরিক কন্ট্র্যাক্টের ‘গ্রেড এ’-তে জায়গা দেয়। যেমন সদ্য প্রকাশিত কন্ট্র্যাক্ট তালিকায় ভুবনেশ্বর কুমারের প্রমোশন হয়েছে ‘গ্রেড বি’ থেকে ‘এ’-তে। গত ক্যালেন্ডার বর্ষে টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে-র পাশাপাশি টেস্ট ম্যাচও খেলায়।

Advertisement

সুরেশ রায়না ব্যতিক্রম!

ভারতের নীল জার্সিতে ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি নিয়মিত খেললেও সাদা পোশাকে গত দু’বছরেরও বেশি জাতীয় দলে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না। শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ২০১২-এ। তা সত্ত্বেও বিসিসিআইয়ের টাটকা কন্ট্র্যাক্টে রায়নার ঠাঁই ‘গ্রেড এ’-তে। আর তার সঙ্গেই যেন মানানসই এমসিজি-তে বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে রায়নার অবস্থান।

Advertisement

সেটা কী? না, অস্ট্রেলিয়া সফরে তৃতীয় টেস্টে ভারতীয় দলে শুধু ভুবনেশ্বর কুমারের খেলার সম্ভাবনা আছে তাই নয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রথম এগারোয় আরও একটা বদল ঘটতে পারে মিডল অর্ডারে রোহিত শর্মার জায়গায় হয়তো সুরেশ রায়না।

কারণ, যতই অধিনায়কের সমর্থন তাঁর দিকে থাকুক না কেন, অ্যাডিলেড আর গাব্বায় প্রথম দু’টো টেস্টের চারটে ইনিংসেই সুপার ফ্লপ রোহিত। সদ্য ঘরের পিচে একদিনের ক্রিকেটে ২৬৪ রানের ঐতিহাসিক বিশ্বরেকর্ডের ইনিংস খেলে ডনের দেশে আসা রোহিত!

এ দিকে, রায়না বলছেন, “এটাই আমার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। বিশ্বকাপ খেলার ঠিক আগেই এ দেশ সফরে এসেছি বলে আমার কাছে এটা একটা আলাদা চ্যালেঞ্জ। এ বছরের গোড়ায় এশিয়া কাপের দল থেকে বাদ পড়ার পর আমি নিজের ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর খেটেছি। তার পর ইংল্যান্ড সফরের দলে সুযোগ পেয়ে ওয়ান ডে-তে ‘ম্যান অব দ্য সিরিজ’ হই। কিন্তু শেষ টেস্ট খেলেছি সেই দু’হাজার বারোয়। দু’বছরের বেশি আগে! তবে অস্ট্রেলিয়ায় তিন সপ্তাহের বেশি রয়েছি। পিচ, পরিবেশের সঙ্গে সড়গড় হয়ে ওঠার কথা আমার। এবং আমি নেটে ভাল ব্যাটও করছি। টেস্ট সিরিজে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।”

এবং রায়না যদি সত্যিই মেলবোর্ন টেস্টে সুযোগ পান, তা হলে নির্ঘাত বল করার ডাকও পাবেন। কারণ, তাঁর জাতীয় অধিনায়ক আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের ক্যাপ্টেন হিসাবেও রায়নার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নিয়মিত তাঁর বাঁ-হাতি স্পিন বোলিংয়ের ফায়দা তুলে থাকেন। টেস্টেও হয়তো অন্য পথে হাঁটবেন না ধোনি। রায়না খেলা মানে দলে কার্যত এক জন অলরাউন্ডার ঢোকা। যা নিয়ে রায়না বলছেন, “গত বেশ কিছু বছর যদি সহবাগ কী ভাবে টেস্ট ক্রিকেটটা খেলেছে দেখেন, কিংবা লোয়ার অর্ডারে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট কী ভাবে ব্যাট করেছে লক্ষ্য করেন, দেখা যাবে ওরা পাঁচ দিনের ম্যাচেও আক্রমণাত্মক থেকেছে। বিশেষ করে লোয়ার অর্ডারে দ্রুত ৭০-৮০ রান যোগ করতে পারলে ব্যাটিংয়ের লেজকে তখন অন্য রকম দেখায়। একই সঙ্গে সহবাগ বা গিলিক্রিস্ট ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ওদের কেউ বোলিং, কেউ কিপিংয়েও দারুণ কাজে আসত।”

তবে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বোধহয় ততক্ষণই ভাল দেখায়, যতক্ষণ না পরের ডেলিভারিটা বিষাক্ত বাউন্সার হিসাবে ব্যাটসম্যানের মাথা লক্ষ করে তেড়ে না আসছে! যেখানে বিপক্ষ দলে কোনও এক মিচেল জনসন, জোস হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্ক আছেন। আর অন্য দিকে যেখানে শর্ট বলের সামনে রায়নার ইতস্তত হাবভাব সর্বজনবিদিত। বিশেষ করে ক’সপ্তাহ আগেই ফিল হিউজ ট্র্যাজেডির পরে!

স্বয়ং রায়না যে প্রসঙ্গে বলছেন, “হিউজের যা ঘটেছে সেটা ভীষণ দুঃখের। একই সঙ্গে কিন্তু খুব বিরল ঘটনাও! আমরা ক্রিকেটটা খেলি আনন্দ পেতে। দর্শকদের আনন্দ দিতে। খেলায় কেউ কাউকে স্বজ্ঞানে আঘাত করে না। কিন্তু তাও এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যায়! আর তার পরে আমাদের খেলোয়াড়দের পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে যায়। বন্ধুবান্ধব ঘনঘন ফোন করে। সবাই বলে, সাবধানে খেলতে। কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাটিং করতে। তবে ক্রিকেট খেলা চলতেই থাকবে। খেলাটা কখনও থেমে থাকতে পারে না।”

রায়না আরও যোগ করছেন, “আরও একটা ব্যাপার, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা নির্ভর করে ম্যাচের পরিস্থিতির উপর। যদি লোয়ার অর্ডার উইকেট কামড়ে পড়ে থেকে কিছু রানটান দলকে দেয়, তা হলে লোয়ার-মিডল অর্ডারের পক্ষে হাত খুলে খেলা বেশি সম্ভব হয়। সত্যি বলতে কী, বেশ কয়েক জন ব্যাটসম্যান আছে যারা লোয়ার অর্ডারে নামেটামে, কিন্তু এখনও দেশের হয়ে একটাও ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেনি!” শেষের কথাটা রায়নার কাদের উদ্দেশ্যে বললেন?

স্লেজিং তরজা

ভারতীয় টিমটা খারাপ নয়। ওদের ক্ষমতা আছে সিরিজে ফিরে আসার। তবে তার জন্য ভারতকে স্লেজিং ভুলে খেলাটায় মন দিতে হবে। অহেতুক স্লেজিং করতে গিয়ে ওদের মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে।

—জো ডস

ভারতীয়রা আমাকে স্লেজিং করতে গিয়ে নিজেরাই ঝামেলায় পড়েছে। ওদের কথা শোনার পর আমি আর ম্যাচটা নিয়ে ভাবিনি। স্কোরবোর্ডের দিকেও তাকাইনি। শুধু ভাবছিলাম কী ভাবে পাল্টা মারব।

—মিচেল জনসন

আধুনিক ক্রিকেটারদের দেখে অনেক সময় মনে হয় যেন যুদ্ধ করতে নামছে। এই মানসিকতার বদল প্রয়োজন।

—রিচার্ড হ্যাডলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন