ব্যাটসম্যানদের মতো গোলাপি বলে সমস্যায় পড়ছেন স্লিপ ফিল্ডাররাও। ক্যাচ ফেললেন স্টিভ স্মিথ। ছবি: রয়টার্স
নাগপুর থেকে অ্যাডিলেডের ভৌগোলিক দূরত্ব মোটামুটি ন’হাজার কিলোমিটার। কিন্তু জামথা আর অ্যাডিলেড ওভাল মিলে গিয়েছে একটা জায়গায়। গত কয়েক দিনে দুটো মাঠের বাইশ গজই হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন। জামথা যদি ঘূর্ণি আতঙ্ক নিয়ে দেখা দেয়, তা হলে অ্যাডিলেড ওভালে ব্যাটসম্যানদের ঘুম কাড়ছে গোলাপি বল।
জামথায় প্রথম দু’দিনে পড়েছিল ৩২ উইকেট। অ্যাডিলেডে প্রথম দু’দিনে পড়ল ২৫ উইকেট। জামথায় ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট তিন দিনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড টেস্টও সে দিকে হাঁটছে। প্রথম দিন নিউজিল্যান্ড ২০২ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া শনিবার তোলে ২২৪। এর পর দ্বিতীয় দিনের শেষে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৬-৫। নিউজিল্যান্ড এগিয়ে ৯৪ রানে। হাতে পাঁচ উইকেট।
জামথার উইকেট কাঠগড়ায় উঠছে তার চরিত্রের জন্য। কিন্তু অ্যাডিলেডে ব্যাটসম্যানদের পতনের পিছনে পিচ কতটা দায়ী আর গোলাপি বলই বা কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এবং রায়ের পাল্লা ঝুঁকে আপাতত গোলাপি বলের দিকেই। এমনিতে বলা হচ্ছে গোলাপি বল লাল বলের চেয়ে কম টেকসই। বিশেষ করে শুকনো জায়গায় পড়লে বলের চামড়া উঠে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যে কারণে অ্যাডিলেডের পিচে ঘাস রাখতে হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট মহলের একটা অংশের মতে, পিচের জন্য নয়। গোলাপি বলের মুভমেন্ট সামলাতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাটসম্যানরা। ভারতের দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার গোলাপি বলের টেস্ট দেখার পর টুইট করেছেন। আকাশ চোপড়া বলেছেন, ‘‘লাল কোকাবুরা বলের চেয়ে গোলাপি বলটা বেশি সুইং করছে। বিশেষ করে ফ্লাডলাইটে। তবে যাতেই বোলাররা কিছুটা সুবিধা পাবে, সেটাই স্বাগত।’’ মহম্মদ কাইফের বক্তব্য, ‘‘সন্ধের পরে কিন্তু গোলাপি বলটা উল্টোপাল্টা মুভ করছে। ব্যাটিং একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে এখানে।’’
শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলছেন, ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে স্লিপ ফিল্ডারদেরও সমস্যা হচ্ছে ক্যাচ ধরতে। প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং সাংবাদিক সাইমন হিউজ বলছেন, ‘‘ব্যাটসম্যানদের থেকেও স্লিপ ফিল্ডারদের বলের মুভমেন্ট বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। যখন সাদা বল চালু হয়েছিল ক্রিকেটে, তখনও একই ব্যাপার হয়েছিল।’’ দুর্দান্ত স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত স্টিভন স্মিথ নিজেই দুটো ক্যাচ ফেলেছেন এ দিন।
সন্ধ্যার অ্যাডিলেডে বল মুভমেন্ট এতটাই হচ্ছে যে, জনৈক ইংরেজ সাংবাদিক মন্তব্যও করেছেন, ‘‘এই গোলাপি বলে টেস্টে হতে থাকলে জিমি অ্যান্ডারসন তো চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত খেলে যেতে চাইবে।’’
ছবি: এএফপি
হর্ষ ভোগলের মতো ব্যক্তিত্বের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, নাগপুরের মতো এখানেও তো ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটছে। তা হলে কেন পিচ নিয়ে কথা হচ্ছে না? তাতে হর্ষ ভোগলে বলেছেন, ‘‘কারণ অ্যাডিলেডের পিচে কোনও সমস্যা নেই। গোলাপি বলের জন্য একটু বাড়তি ঘাস রাখা হয়েছে এই যা।’’
নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে অল্প রানে আটকে রাখার পর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরাও কিন্তু সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন গোলাপি বলের সামনে। এক সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়িয়েছিল ১১৬-৮। সেখান থেকে দলকে টেনে নিয়ে যান নেভিল (৬৬), লায়ন (৩৪) এবং মিচেল স্টার্ক (২৪ ন.আ.)। আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে লায়ন টিকে যাওয়ায় প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গোড়ালিতে চিড় নিয়ে কোনও মতে ব্যাট করলেও নিউজিল্যান্ড ইনিংসে বল করতে পারছেন না স্টার্ক। যদিও তাতে এখনও কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। হ্যাজেলউড তিনটে এবং মিচেল মার্শ দুটো উইকেট তুলে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। অস্ট্রেলিয়া আবার এ দিন দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে ম্যাসিওরকে মাঠে নামায় ফিল্ডিং করতে।
ডিআরএস বিতর্ক
অ্যাডিলেড টেস্টে শুধু গোলাপি বল নয়, বিতর্ক উঠছে ডিআরএস নিয়েও। ঘটনার সুত্রপাত, নাথান লায়নের বিরুদ্ধে একটা আবেদন নিয়ে। লায়ন সুইপ করতে গেলে বল তাঁর কাঁধে লেগে ফিল্ডারের হাতে যায়। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা দাবি করেন, বল প্রথমে ব্যাটে লেগেছিল। আম্পায়ার এস রবি নট আউট বললে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালাম রিভিউ চান। হট স্পটে দেখা যায় বল ব্যাটে লেগেছে। লায়নও প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা দিতে শুরু করেন। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার নাইজেল লং নট আউট ঘোষণা করেন। এর পরই আম্পায়ারের সমালোচনায় একের পর এক টুইট ভেসে আসতে শুরু করে। তালিকায় শেন ওয়ার্ন থেকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন— কে না ছিলেন।