রেকিফে আজ গুরু-শিষ্যের যুদ্ধ

তথ্যচিত্রে ‘অপমানের’ জবাব দেওয়ার ম্যাচ ক্লিন্সির

ক্লিন্সি আর ইয়োগির বন্ধুত্বটা দশ বছর পুরনো। জার্মানদের পুনর্জন্মের প্রসঙ্গ উঠলে যে দু’জনকে অবধারিত মনে পড়ে। বছরদশেক আগে পাগলের মতো একজন সহকারী খুঁজে চলেছিলেন তৎকালীন জার্মান কোচ য়ুরগেন ক্লিন্সম্যান। অবস্থা করুণ। হোলগার ওসিয়েক ‘না’ করে দিয়েছেন। র্যাল্ফ র্যাংনিক শুনিয়ে দিয়েছেন ‘চাকরির দরকার নেই’। গিডো বাকওয়াল্ড-কেও রাজি করানো যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:৩৩
Share:

ক্লিন্সি আর ইয়োগির বন্ধুত্বটা দশ বছর পুরনো। জার্মানদের পুনর্জন্মের প্রসঙ্গ উঠলে যে দু’জনকে অবধারিত মনে পড়ে।

Advertisement

বছরদশেক আগে পাগলের মতো একজন সহকারী খুঁজে চলেছিলেন তৎকালীন জার্মান কোচ য়ুরগেন ক্লিন্সম্যান। অবস্থা করুণ। হোলগার ওসিয়েক ‘না’ করে দিয়েছেন। র্যাল্ফ র্যাংনিক শুনিয়ে দিয়েছেন ‘চাকরির দরকার নেই’। গিডো বাকওয়াল্ড-কেও রাজি করানো যাচ্ছে না। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার তখন ক্লিন্সম্যানকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, চিন্তার কিছু নেই। কাউকে না কাউকে ঠিক দেওয়া হবে। সহকারী হিসেবে যাঁর সিভি ক্লিন্সম্যান পেয়েছিলেন, তাঁর রেকর্ড খুব ভাল ছিল না। স্টুটগার্ট, ফেনারবাখ, অস্ট্রিয়া ভিয়েনা— কোথাওই দু’মরসুমের বেশি টেকেননি জোয়াকিম লো। কিন্তু ক্লিন্সম্যানের হিরে চেনা অনেক আগে হয়ে গিয়েছিল, একটা কোচিং কোর্সে। তাঁর মনে ধরেছিল লো-কে।

জার্মান ফুটবলের যা মাস্টারস্ট্রোক। রুডি ফোলারের বুড়ো টিম খেলানো, মাইকেল বালাকের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা, এমনিই বিরক্তি বাড়াচ্ছিল জার্মানিতে। তার উপর ২০০৪ ইউরো থেকে প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে যায় জার্মানি। কিন্তু সেই জার্মানিই আবার দু’বছরের মধ্যে ফিরে আসে নতুন দর্শন নিয়ে। ক্লিন্সি-ইয়োগির দর্শন। যা বলত, বিপক্ষ বক্সে উঠবে সোজাসুজি, সাইডওয়েজ নয়। ক্লিন্সম্যানের প্রসঙ্গ উঠলে আজও নস্ট্যালজিক শোনায় অলিভার বিয়েরহফের গলা। যিনি বলেন, “স্পিড, দ্রুত পাসিং, মুভমেন্ট, সব একা পাল্টে দিয়েছিল ক্লিন্সম্যান।” ক্লিন্সি-ইয়োগির পার্টনারশিপ ফুটবল-বিশ্বে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। ২০০৬ ওয়ার্ল্ড কাপ সেমিফাইনাল, ইউরো ২০০৮ ফাইনাল, ২০১০ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল— ট্রফি না এলেও বাকি দুনিয়াকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল জার্মানি। ভয় পাইয়ে দিয়েছিল গুরু-শিষ্যের মারণ ফুটবল।

Advertisement

যে গুরু আজ যুক্তরাষ্ট্রের। শিষ্য আজ তাঁরই পুরনো জার্মানিতে।

ব্রাজিল বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ফোনে কথাবার্তা হয়নি ক্লিন্সম্যান-লোর। দু’জনেই বলে দিয়েছেন, নিজের-নিজের পরিবার নিয়ে ওঁরা ব্যস্ত। এক রিপোর্টার আবার অতি উৎসাহে দু’জনকেই মনে করিয়ে দিতে গিয়েছিলেন যে, বৃহস্পতিবার যদি গুরু-শিষ্য ‘ভদ্রলোকের চুক্তি’ করে নেন, তা হলে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র দুটো টিমই নকআউটে উঠে যাবে। এখানে ভদ্রলোকের চুক্তি অর্থে ড্র। লো শুনে মেজাজ ঠিক রেখেছেন তবু। ক্লিন্সম্যান ফেটে পড়েছেন। বলেছেন, “এটা বন্ধুত্বের সময় নয়। জার্মানদের এমনিই টানা হচ্ছে ওরা ফেভারিট বলে। দেখা হচ্ছে যাতে ম্যাচের মধ্যে ওদের বেশি ট্র্যাভেল না করতে হয়। আর একটা কথা। যুক্তরাষ্ট্র ড্রয়ের জন্য খেলে না। আমরা জিতে, গ্রুপের এক নম্বর টিম হয়ে পরের রাউন্ডে যাব।”

দুই কোচের মধ্যে প্রকাশ্য খটাখটি না বাঁধলেও পরোক্ষে সেটা বাঁধিয়ে দিয়েছিল দুই ম্যানেজারকে নিয়ে তৈরি একটা তথ্যচিত্র। যেখানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে দেখানো হয় ক্লিন্সম্যানের সহকারীকে। বলা হয়, লো হলেন ট্যাকটিক্যাল জিনিয়াস। ক্লিন্সম্যান পরে বলেছিলেন, “আগে জানলে ফিল্মটা কখনও ও ভাবে হতে দিতাম না।” সেই রাগ ক্লিন্সম্যান পুষে রাখেননি ঠিকই। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, রেকিফের ম্যাচে জার্মানদের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হবে।

দুই কোচের মগজাস্ত্র।সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

ক্লিন্সম্যান আজ দেখাতে চাইবেন, তিনি সিংহাসন ছেড়ে গিয়েছিলেন বলেই সেখানে আজ বসে লো। যাঁকে তিনি নিজেই কোচের চেয়ারে বসিয়ে যান।

ক্লিন্সম্যান আজ দেখাতে চাইবেন, তাঁর আজ সবই জেতার আছে। কাউকে যদি কিছু হারাতে হয়, নামটা তার জোয়াকিম লো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন