দুই সচিনের সঙ্গে বাবা হাসান। ছবি: ফেসবুক
আশির শেষাশেষি বা নব্বই দশকে অধিকাংশ ভারতীয় দম্পতি পুত্রসন্তানের নামকরণের সময় তাঁর নামটা একবার না একবার ভাবতেন এবং তাতে আশ্চর্যের কিছু ছিলও না। সচিন রমেশ তেন্ডুলকর তখন ক্রিকেটকেরিয়ারের কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের মধ্যগগনে। বাইশ গজের পৃথিবী ছাড়িয়ে তত দিনে সাধারণ গৃহস্থের ড্রইংয়রুমে ঢুকে পড়েছেন, আপামর ভারতবাসীর আদরের সন্তান। লোকে তখন চাইতও নিজের পুত্রসন্তানের নাম সচিন রাখতে। কেউ আশাবাদে ভুগতেন যে, মিলিয়ে নাম রাখলে আমার ছেলেটাও ক্রিকেটের সচিনের মতো বড় কেউ হবে। কেউ বা আবার রাখতেন শুধুই সচিনের প্রতি ভালবাসার খাতিরে, নিজের মতো করে ক্রিকেট-ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধার্পণের কথা ভেবে। যা স্বাভাবিক, অত্যন্ত স্বাভাবিক।
কিন্তু যদি বলা হয়, ভারতের প্রতিবেশী দেশেও এমন এক পরিবার যেখানে দুই সন্তানের ‘মিডল নেম’ একই, ওই সচিন? যদি বলা হয়, ধীরে ধীরে তাঁরা পিতৃদত্ত নামটা বিসর্জন দিয়ে লোকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন সচিন নামে? যদি বলা হয়, এঁরা যে পরিবারের সন্তান সেটা আদতে ক্রিকেট-পরিবার এবং এঁদের বাবা এলেবেলে কেউ নন, খেলেছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন টিমে?
শ্রীলঙ্কার কথা হচ্ছে। ’৯৬-এ অর্জুন রণতুঙ্গার বিশ্বজয়ী টিমের সদস্য হাসান তিলকরত্নের পরিবারের কথা হচ্ছে! যাঁর দুই যমজের নাম দুভিন্দু সচিন তিলকরত্নে এবং রবীন্দু সচিন তিলকরত্নে!
এক কথায়, লঙ্কার বুকে এখন ঘুরছে এক জোড়া সচিন তিলকরত্নে। যারা নিজেদের পরিচয় ওই নামে দিতে ভালবাসে আর তারাও কোনও এক সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের মতো ক্রিকেটটাই খেলে! এবং দু’জনের বিয়েতে স্বয়ং তেন্ডুলকরকে নিমন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তিলরত্নে-পরিবার।
শ্রীলঙ্কার পিলিনওয়ান্ডলা অঞ্চলে হাসান তিলকরত্নের পরিবারের কীর্তি দেখে একটা সময় নাকি মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে যেত প্রতিবেশীদের। স্কুলে গেলেও একই বিপত্তি। বাকি ছাত্রদের পরিবারবর্গের অবাক মুখ, জিজ্ঞাসু চোখ। ‘‘উত্তর দিতে দিতে মুখে ব্যাথা হয়ে যেত। বোঝাতে হত, আমি আর হাসান দু’জনেই সচিনের অসম্ভব ভক্ত ছিলাম,’’ ফোনে বলছিলেন অপ্সরী তিলকরত্নে। পরিচয়ে, লঙ্কার জোড়া ‘সচিনের’ মা। এবং দুই সন্তানের নামকরণের সময় কোথা থেকে সচিন এল, সে কাহিনিও বড় অদ্ভুত।
স্ত্রী যমজ সন্তান প্রসবের পর রীতি মেনে নাকি এক জ্যোতিষীকে ডেকেছিলেন হাসান। ‘‘উনিই নামকরণের জন্য পাঁচ-সাতটা অক্ষর থেকে একটা বাছতে বলেছিলেন। সেখানে ‘স’-টা ছিল,’’ বলে যান অপ্সরী। একটু থেমে আবার বলতে থাকেন, ‘‘আমি আর হাসান তখনই ঠিক করে ফেলি যে, ‘স’ দিয়ে রাখব। আর নামটা সচিন। তখন সচিন রীতিমতো নাম করতে শুরু করে দিয়েছে। আমাদের দু’জনেরই অসম্ভব প্রিয় ক্রিকেটার ছিল। তাই দুই ছেলের নামের মধ্যেই সচিন রেখে দিই।’’
শোনা গেল, কালে-কালে সচিন তিলকরত্নে নামটাই পরিচিতি পেয়ে গিয়েছিল। একমাত্র বাড়ির লোক ছাড়া কেউ আর দু’ভাইকে দুভেন্দু-রবীন্দু বলে ডাকত না। দু’জনের জন্মের পর স্বয়ং তেন্ডুলকর একবার দেখাও করে এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে। ‘‘সালটা আর মনে নেই। শ্রীলঙ্কায় তখন একটা সিরিজ চলছিল। ভারত এসেছিল খেলতে। সচিন তখনই শোনে যে, ওর নামে হাসান নিজের দুই ছেলের নাম রেখেছে। দেখা করেছিল ও,’’ বলছিলেন অপ্সরী। আর তাঁর দুই সন্তান? তাঁরা কেমন উপভোগ করেন সচিন নামধারী হওয়ার ঝক্কিটা? ই- মেলে রবীন্দুর উত্তর, ‘‘আমরা তো উপভোগই করি ব্যাপারটা। সব সময় একটা আলাদা প্রেফারেন্স পেয়েছি এটার জন্য।’’ বর্তমানে দু’ভাই-ই শ্রীলঙ্কার জুনিয়র টিমের হয়ে খেলছেন। একজন ব্যাটসম্যান, একজন চায়নাম্যান। এবং তিলকরত্নে পরিবার ঠিক করে ফেলেছে যে কয়েক বছরের মধ্যে ছেলেদের বিয়ে দেওয়া হবে। ডাকা হবে তাঁকে, যাঁকে না ডাকলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বিয়ে।
অপ্সরী তিলকরত্নে তো সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘‘তেন্ডুলকর ছাড়া আমার দুই সচিনের বিয়ে সম্ভব নাকি?’’