গম্ভীরের শেষ ‘রিহার্সাল’।
রবিবাসরীয় চিন্নাস্বামীতে বীরেন্দ্র সহবাগের সবচেয়ে যোগ্য প্রত্যুত্তর কে হতে পারেন?
উত্তরটা আপনার পাড়ার খুদে বুবাই-টুবাইও দিয়ে দেবে। ওয়াংখেড়ের মতো চিন্নাস্বামীতেও যদি ‘বীরু’ নামক বোমাতঙ্ক ছড়ায়, কেকেআরের পাল্টা আক্রমণের মুখ কে হবেন, ফাইনালের প্রাক্-লগ্নে পৌঁছে সেটা সর্বজনবিদিত রবিন উথাপ্পা। আইপিএল সেভেনে সাড়ে ছ’শোর উপর রান করে বসে আছেন যিনি, যাঁর ব্যাটের মারমার-কাটকাটের পাল্লায় পড়ে বিশ্বব্যাপী বোলারদের রাতের ঘুম বরবাদ যখন আর ‘ব্রেকিং নিউজ’ নয়, তখন আর কার উপর ভরসা করবে কেকেআর?
মুশকিল হল, রবিন উথাপ্পা তো আবার বীরু-পাজির অগণিত ভক্তের এক হয়ে বসে আছেন!
রবিবারের ফাইনাল রবিন উথাপ্পার কাছে বীরু বনাম রবিন নয়। বীরু বনাম গোতিও নয়। টিম বনাম টিম। যে যুদ্ধে দরকার সবার আগে বীরুকে সরানো।
“কী খেলল রে বাবা! গতকাল আমি তো টুইটও করেছিলাম। দেখেননি?” শনিবার দুপুরে টিম হোটেলের বুফে কাউন্টার থেকে বেরোনোর সময় আনন্দবাজারকে বলছিলেন উথাপ্পা। “বিশ্বাস করুন, যে ভাবে বীরু পাজি খেলল, দেখে খুব আনন্দ হচ্ছিল। ওকে অনেক সময়ই আন্ডাররেটেড থেকে যেতে হয়েছে। কিন্তু কাল রাতে বুঝিয়ে দিল, এখনও কী করতে পারে। আমি ওর বরাবরের ফ্যান। তাই আনন্দটাও একটু বেশি রকমের হচ্ছে,” হাসতে হাসতে বলছিলেন নাইটদের রবিনহুড। আপনার কি মনে হয়, ভারতীয় ক্রিকেটে সহবাগের কামব্যাক ঘটিয়ে দিল ওয়াংখেড়ে? এ বার একটু যেন সতর্ক উথাপ্পা, “সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না। অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে। তবে হ্যাঁ, এটা চাইব যে বীরু পাজির ফর্মটা এখন থেকে এ ভাবেই চলুক।”
নাইটদের টিম হাডল।
কিন্তু ফাইনাল তার কী হবে? সেখানেও চলুক? বীরুর বিক্রম চললে তো...“আরে না না। ফাইনালে না। ফাইনালে ওকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুলতে হবে। নইলে কী হবে, আমাকে বলে দিতে হবে না,” তাড়াতাড়ি থামিয়ে অরেঞ্জ ক্যাপের মালিকের সংযোজন, “ফাইনালটা আসলে আমার কাছে একটা পোয়েটিক জাস্টিস। যেখানে টুর্নামেন্টের সেরা দু’টো টিম খেলতে পারছে। যারা ক্রমাগত শুধু ভাল খেলে যায়নি, যে যে ফ্যাক্টরগুলো টিমকে ভাল খেলতে সাহায্য করেছে সেগুলোও ধরে রেখেছে। ফাইনালটা আমার কাছে বীরু বনাম রবিন নয়। বীরু বনাম গোতিও নয়। টিম ভার্সাস টিম।”
উথাপ্পা বললেন বটে। কিন্তু জাতীয় মিডিয়ার কাছে সেটা একটু আলাদা। বীরু বনাম গোতি অবশ্যই আসন্ন মহাযুদ্ধের মুচমুচে ক্যাচলাইন। এবং তার সঙ্গে অবশ্যই থাকছে সহবাগোচিত প্রত্যাবর্তনের কারণ সন্ধান।
নয়াদিল্লিতে এ দিন ফোন করে শোনা গেল, কামব্যাকের প্রেক্ষাপটটা মোটেও সুখকর ছিল না সহবাগের। বরং জাতীয় দলে সফরের পর সফর উপেক্ষিত থাকতে থাকতে মানসিক ভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। মিডিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন না বিশেষ। অদ্ভুত একটা গল্পও শোনা গেল। নয়াদিল্লিতে যে স্কুল তৈরি করেছেন সহবাগ, সেখানে ঘনিষ্ঠদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে গিয়েছিলেন আইপিএল নিলামের এক দিন আগে। সেখানে উপস্থিত কেউ কেউ সহবাগকে জিজ্ঞেস করেন, নিলাম নিয়ে টেনশন হচ্ছে না? জবাবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার যা বলেন, শুনলে ক্রিকেটপ্রেমীদের খারাপ লাগবে। সহবাগ পাল্টা জিজ্ঞেস করেছিলেন টেনশনটা কীসের জন্য? কত দর উঠবে তার জন্য, না কি টিম পাব কি না তা নিয়ে? সহবাগ আরও নাকি বলেন যে, টাকা কত পাবেন সে সব নিয়ে তাঁর চিন্তা নেই। যা আছে, তাতে তাঁর তিন পুরুষ চলে যাবে! টাকা নয়, তাঁর দরকার টিম। তিনি আরও খেলতে চান। ক্রিকেটের প্রতি প্যাশনটা যে আজও ভিতরে ভিতরে কাজ করে!
ওই অবস্থা থেকে ৫৮ বলে ১২২! মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সামনে। ধোনির টিমের বিরুদ্ধে, এমএস-কে সোজা আইপিএলের বাইরেই ফেলে দিয়ে!
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন
শোনা গেল, টিমকে আইপিএল ফাইনালে তোলার পর ছোটবেলার কোচ অমরনাথ শর্মার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ভারতবিখ্যাত ছাত্রের। “এত হাসিখুশি মেজাজে কথা বলতে ওকে অনেক দিন দেখিনি,” নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন বীরুর কোচ। যিনি ছাত্রের দুঃসময়ে মাঝে মাঝেই তাতিয়ে দিতেন বলে যে, বোর্ড তোমাকে বাদ দিয়ে যে অপমানটা করেছে, সেটার কাছে বশ্যতা স্বীকার কোরো না। বরং পাল্টা দিয়ে বোর্ডকে বুঝিও তারা কত বড় ভুল করেছে। মারণ-ফর্ম যে ফিরছে, বোঝা গিয়েছিল মাসকয়েক আগে এমসিসি-র হয়ে আবু ধাবিতে একটা ম্যাচে। যেখানে সহবাগ রান তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরি করে টিমকে জিতিয়ে দেন। আইপিএল সেভেনেও প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে অন্তত ১৫ বলে ৩০ দিয়ে যাচ্ছিলেন। গ্রুপ পর্বে কেকেআরের বিরুদ্ধে একটা ৭০ ছিল। কিন্তু ফর্মের পূর্ণ প্রকাশ শুক্রবার রাতে। ওয়াংখেড়েতে। যে ইনিংস দেখে গৌতম গম্ভীর বলে গেলেন, কেন তিনি মনে করেন সহবাগ ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার। যে ইনিংস দেখে পঞ্জাব মালকিন প্রীতি জিন্টা আনন্দবাজারকে মেল মারফত পাঠানো এক বিবৃতিতে বলে দিলেন সিএসকে-র বিরুদ্ধে বীরুর ইনিংস তাঁর কাছে ‘‘সও সোনার কি, এক লোহার কি!” সহবাগ নিয়ে এমন আনন্দ-যজ্ঞের মাঝে একটাই যা আক্ষেপের কথা শোনা গেল। সেটা নাকি আবার সহবাগেরই! অমরনাথ শর্মা যেটা বললেন, “কাল ফোনে অত হাসতে হাসতেও বলল, দু’তিনটে ম্যাচ আগে যদি এটা হত। আসলে দু’-দু’টো টিম সিলেকশন ছিল তো।”
সত্যিই, দু’তিনটে ম্যাচ আগেও নয়। মাত্র তিনটে দিন আগে যদি ওয়াংখেড়ের বিস্ফোরণটা হত!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস