যুবভারতীতে প্রতিপক্ষকে মেপে ফিকরু-ব্যারেটো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
যুবভারতীতেও আটলেটিকো দে কলকাতার ‘গুপ্তচর’!
শনিবার বিকেলে যিনি দিল্লি ডায়নামোসের প্র্যাকটিস দেখলেন, নোটও নিয়ে গেলেন পকেটে পুরে। তবে দিল্লি টিমের শক্তি-দুর্বলতার সন্ধানে গুয়াহাটি সফরের মতো এ বার আর একা আসেননি। হোসে রামিরেজ ব্যারেটো নিয়ে এসেছিলেন দলের প্রধান স্ট্রাইকার ফিকরুকেও।
বিপক্ষের প্রধান স্ট্রাইকারের নাম আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো বলেই কি জোড়া গুপ্তচর লাগল ঘরের মাঠে?
প্রশ্ন শুনে প্রথমে মুচকি হাসলেন। তার পরে ফিকরুর সঙ্গে একটু চোখের ইশারা। সবুজ-তোতা বললেন, “ও রকম কিছু নয়! দেল পিয়েরো বড় ফুটবলার। তবে ওর জন্য আমরা স্ট্র্যাটেজি বদলাচ্ছি না।”
তাঁর উত্তরে যে একেবারেই সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না, সেটা বোধহয় আঁচ করে ফেলেছিলেন ব্যারেটো। নইলে জবাব দিয়েই ওই ভাবে মাঠের দিকে ছুটতেন না! এমনকী ফিকরুর সঙ্গে যে দু’টো কথা বলা যাবে, সেই সুযোগও পাওয়া গেল না। তবে আটলেটিকো শিবিরে দেল পিয়েরো-আতঙ্ক কতটা, তা বোঝার জন্য ব্যারেটো-ফিকরুর গোয়েন্দাগিরি দেখার প্রয়োজন নেই। কোচ হাবাসের প্র্যাকটিসই যথেষ্ট।
এ দিন তাঁর চল্লিশ মিনিটের ক্লাসে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হল ডিফেন্সিভ কম্বিনেশনে। প্রথম দু’টো ম্যাচের মতো অর্ণব-জোসেমির দু’পাশে দুই সাইডব্যাক বিশ্বজিত্ সাহা ও ডেঞ্জিল ফ্রাঙ্কো খেললেও, চিন্তা ডিফেন্সিভ ব্লকারকে নিয়ে। দেল পিয়েরোকে আটকানোর জন্য যে পজিশন অসম্ভব জরুরি। কিন্তু সমস্যা হল, এই ম্যাচে ফর্মে থাকা বোরহা ফার্নান্দেজ খেলতে পারবেন না (লাল-কার্ড দেখায়)। এখন তাঁর পরিবর্তে ওই জায়গায় কাকে খেলানো হবে, তা নিয়ে চরম দ্বিধায় আটলেটিকো কোচ। অনুশীলনে দেখা গেল, এক বার পদানিকে দিয়ে বোঝাপড়া তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। কখনও আবার আর্নালকে কাজে লাগাচ্ছেন। বাকি টিম অপরিবর্তিত।
কিন্তু বোরহার জায়গা কি আদৌ ভরাট করা সম্ভব? উত্তরটা যদি ‘না’ হয়, তা হলে দেল পিয়েরোকে আটকানোর ওষুধ কী? আটলেটিকোর বাঙালি স্টপার অর্ণব মণ্ডল বলছেন, “দেল পিয়েরোর খেলা আমরা দেখেছি। ও খুব দ্রুত জায়গা বদল করতে পারে। এই সব ফুটবলারকে ম্যান মার্কিংয়ে রাখা অসম্ভব। জোনাল মার্কিংয়ে খেলতে হবে। ফাইনাল ট্যাকল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বক্সের আশেপাশে কোনও মতেই ফাউল করা চলবে না।”
হাবাসের টিমের আর এক ভারতীয় ডিফেন্ডার ডেঞ্জিল ফ্রাঙ্কোর টোটকা আবার বাড়তি মনঃসংযোগ। এ দিন বিকেলে যুবভারতীর লনে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন, “খুব সাবধানী ফুটবল খেলতে হবে। পিয়েরো বড় ফুটবলার। ও জানে মাঠে কী ভাবে শরীরটা ব্যবহার করতে হয়। আর সেটা কাজে লাগিয়েই পিয়েরো আমাদের পেনাল্টি বক্সের সামনে ফাউল আদায় করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” একটু থেমে আরও যোগ করলেন, “বোরহার জায়গা নেওয়া খুব কঠিন। তবে এক জন ফুটবলারের জন্য তো আর গোটা টিম থেমে যেতে পারে না। ঘরের মাঠে আমরা পয়েন্ট নষ্ট করতে চাই না।”
আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচের আগের দিন টিমকে চাপমুক্ত রাখতে ‘হেয়ারস্টাইল সেশন’ রেখেছিলেন আটলেটিকো কর্তারা। ফুটবলারদের চুলের নানারকম স্টাইল করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। দিল্লি ম্যাচের আগে তাঁরা সে রকম কোনও নতুনত্ব আবিষ্কার করতে না পারলেও, টিম ম্যানেজার রজত ঘোষদস্তিদারের উদ্যোগে রাতের পুণে-মুম্বই ম্যাচ সব ফুটবলার হোটেলের কনফারেন্স রুমে বসে একসঙ্গেই দেখলেন। হোটেল রুমের একঘেয়েমি কাটল জায়েন্ট স্ক্রিনে। তবে সেখানেও বেশ কিছুক্ষণ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সেই দেল পিয়েরো।
পুণের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের গোল-বন্যা যেন আরও সতর্ক করে দিচ্ছিল গার্সিয়াদের!
মহানুভবতা
লুই গার্সিয়া, ফিকরুদের হাত ধরে যে খুদেরা খেলার আগে মাঠে নামছে তাদের চেনেন? ওঁরা সবাই এইচআইভি পজিটিভে আক্রান্ত। কেউ অনাথ, কারও আবার বাবা আছে মা নেই। জন্ম থেকেই মারণ রোগে আক্রান্ত ওই ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে ফুটবলারদের সঙ্গে মাঠে নামানোর জন্য আবেদন করেছিলেন বারুইপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আনন্দঘর। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে সেই সুযোগ দিয়েছেন আটলেটিকে দে কলকাতার কর্তারা। আনন্দঘরের পক্ষে কল্লোল ঘোষ এ দিন বললেন, “এত বড় টুর্নামেন্টে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে ওরা দেখলাম আপ্লুত। এটাই আমরা চাইছিলাম।”