দেল পিয়েরোর সামনে বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ঝরে

আটলেটিকো দে কলকাতার মার্কি ফুটবলার তিনি। স্প্যানিশ বিশ্বকাপার। সেই লুই জেভিয়ার গার্সিয়া আইএসএলে কলকাতার ফুটবল দলের অন্দরমহলের সব খবরাখবর লিখছেন শুধু আনন্দবাজারে।আটলেটিকো দে কলকাতার মার্কি ফুটবলার তিনি। স্প্যানিশ বিশ্বকাপার। সেই লুই জেভিয়ার গার্সিয়া আইএসএলে কলকাতার ফুটবল দলের অন্দরমহলের সব খবরাখবর লিখছেন শুধু আনন্দবাজারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৬
Share:

গার্সিয়ার ছবি: উত্‌পল সরকার

পরপর দুটো ম্যাচ জেতার পর মনের ভেতরের ভয়-ভয় ভাবটা যেন হঠাত্‌-ই উধাও হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

যে টিমকে চিনি, জানি তাদের বিরুদ্ধে একটা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নামা যায়। কিন্তু যাদের আমি কেন, আমাদের দলের কেউ-ই চেনে না, তাদের বিরুদ্ধে কী ভেবে নামব! স্ট্র্যাটেজি তৈরি করাই তো সমস্যা।

এ রকম অবস্থায় মুম্বই এবং নর্থ ইস্ট—দু’টো টিমকে পরপর হারানোটা আমার টিম, মানে আটলেটিকো দে কলকাতার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। কেন জানি না, মনে হচ্ছে, এখন সামনে যে টিমই পড়ুক তাদের বিরুদ্ধে জেতার ক্ষমতা রাখি আমরা।

Advertisement

তা সে আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো সামনে পড়লেও!

রবিবার তো ও আর ওর দিল্লির সঙ্গেই খেলব। আমার প্রিয় যুবভারতীতে। কলকাতার সমর্থকদের সামনে। যাঁরা আগের রবিবারই আমাদের জন্য চিত্‌কার করেছেন। গলা ফাটিয়েছেন।

যদিও দেল পিয়েরো মানে আমার স্বপ্নের ফুটবলার। ওর খেলা আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমার মতে দেল পিয়েরো বিশ্ব ফুটবলে সর্বকালের সেরাদের একজন। জুভেন্তাসে এত বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে গোল করে এসেছে। ইতালির জার্সিতেও অনেক বিগ ম্যাচে গোল করেছে। বিশ্বকাপ শুদ্ধু প্রতিটা বড় ট্রফি জিতেছে। ফ্যান্টাস্টিক ফুটবলার!

আবার কেন জানি না এ রকম মেগা ফুটবলারদের বিরুদ্ধে মাঠে নামলে আমার মধ্যে যেন বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়। জেদ চেপে যায়, ওকে হারাবই। ওর টিমকে গোল দেব। জিতব।

দেল পিয়েরোর জুভেন্তাসের বিরুদ্ধেও সেটা হয়েছিল নয় বছর আগে। ২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। আমি তখন লিভারপুলে খেলছি। জুভেন্তাসের ফরোয়ার্ড লাইনে তখন সেই ইব্রাহিমোভিচ-দেল পিয়েরো জুটি। তা সত্ত্বেও আমি সে দিন কোনও চাপ নিইনি। বরং উপভোগ করতে চেয়েছিলাম ম্যাচটা। এবং এত বছর পরেও আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই ওই ম্যাচে গোল করার জন্য। দু’পর্ব মিলিয়ে পর ম্যাচটা জেতার জন্য।

তবে সে দিনও কিন্তু দেখেছিলাম দেল পিয়েরো যত বার বল পাচ্ছিল, তত বারই গোল করার জন্য মরিয়া হচ্ছিল। আমাদের লিভারপুল ডিফেন্ডারদের সঙ্গে প্রতিটা বলের জন্য তুমুল লড়াই করছিল। স্ট্রাইকারদের এই মরিয়া লড়াইটা না থাকলে সে কিন্তু কিছুতেই সেরা গোত্রের হয়ে উঠতে পারে না।

রবিবারও ওর বিরুদ্ধে আইএসএলের ম্যাচটা উপভোগ করার চেষ্টা করব। আশা করব এ বারও আমার জেদ আমাকে জেতাবে। ভাল খেলতে সাহায্য করবে।

দেল পিয়েরো নিয়ে আমাদের আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ হাবাসের সঙ্গে ডিনার টেবিলে কয়েক দিন আগেই আলোচনা হচ্ছিল। কোচের সঙ্গে আমি একমত যে, যতই দেল পিয়েরো অবসর নিয়ে ফেলুক, বা উনচল্লিশের কোঠায় বয়স হোক, ওর উপরে আলাদা নজর রাখতেই হবে। তা ছাড়া, দিল্লি যেহেতু আগের ম্যাচটা জিততে পারেনি তাই ওদের বাকি ফুটবলাররাও আমাদের হারানোর জন্য মরিয়া হবে। তবে দেল পিয়েরোর দিল্লিকে আটকানোর জন্য আমাদের ডিফেন্স তৈরি।

ডিফেন্সের কথাই যখন এল তখন লিখতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের ডিফেন্ডাররাও কিন্তু দারুণ খেলছে। দুটো ম্যাচে এখনও একটাও গোল খায়নি। আমাদের কিপার অর্থাত্‌ পাঁচ নম্বর ডিফেন্ডার শুভাশিস রায়চৌধুরী প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকেই খুব ভাল খেলে আসছে। ওর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। আমাদের দলে কিন্তু আরও দু’জন খুব ভাল গোলকিপার আছে। সুতরাং রয়ের কিপিং আরও প্রমাণ করছে যে, ও কী কী রকম দুর্দান্ত ফর্মে আছে।

স্পেন থেকে আমার এক বন্ধু ফোনে ওখানকার কাগজে রয়ের খেলার প্রশংসা পড়ে আমার কাছে জানতে চাইছিল ওর সম্পর্কে।

রয়ের সামনে আমাদের ব্যাক-ফোরও খুব ভাল ফর্মে রয়েছে। নর্থইস্ট ম্যাচে অর্ণব-বিশ্বজিত্‌-হোসেমিরা খুব ভাল খেলল। প্রতিটা ট্যাকল ভাল ছিল। প্রতিটা পজিশনিং একদম পিন পয়েন্ট। আমরা গোল করে লিডটা যে ধরে রাখতে পারছি, এটাই তো আমাদের ফরোয়ার্ড লাইনের উপর থেকে অর্ধেক চাপ কমিয়ে দিচ্ছে। এবং তার জন্য সব কৃত্বিত্ব আমাদের ডিফেন্সের।

আমাদের টিমের স্বপ্নের শুরুর পিছনে তিনটে মূল কারণ রয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

এক) ফুটবলারদের মধ্যে চমত্‌কার বোঝাপড়া। মাদ্রিদে এক মাস প্রি সিজন ক্যাম্প করাটা আমাদের আরও তৈরি করে দিয়েছে। তৈরি করেছে দল হিসেবে খেলার মানসিকতা। প্রথমে একটু সমস্যা হলেও পরে সবাই মানিয়ে নিয়েছে।

দুই) দলের সব ফুটবলারই ভাল পারফর্ম করছে। এমনকী যারা রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামছে, তারাও গোল করছে। যেমন প্রথম ম্যাচে আর্নাল। বৃহস্পতিবার পদানিও করল।

তিন) গোলের যে সুযোগগুলো আসছে তার বেশির ভাগই কাজে লাগছে। প্রচুর শট মারলাম গোলে, কিন্তু গোল হল না তাতে লাভ কী? সুযোগ তৈরি করলে তার থেকে গোলও করতে হয়।

ফিকরুর মতো স্ট্রাইকার সামনে থাকায় আমাদের গোল পেতে আরও বেশি সুবিধে হচ্ছে। এই টিমে হোফ্রে আর আমার কাজটা হল প্লে-মেকার হিসেবে খেলাটা তৈরি করা। কোচের সে রকমই নির্দেশ। এবং সেটাই আমরা করছি। গোলের পাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ফিকরু সেই পাস বুঝতে পারছে। এমন জায়গায় দাঁড়াচ্ছে যে, ওকে পাস দেওয়া সহজ হচ্ছে। ও জানে কখন কোথায় থাকতে হবে। সেটাই ওকে গোল এনে দিচ্ছে। ফিকরু কখনও একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। ওর ফিনিশিং-ও খুব ভাল।

মাঝমাঠে বোরহা ফার্নান্দেজের সঙ্গে নাটোর জুটিটাও কার্যকরী হচ্ছে। পরের ম্যাচে বোরহা খেলবে না কার্ডের জন্য। ও না খেলায় আমাদের কিছুটা তো সমস্যা হবেই, সন্দেহ নেই।

আইএসএলের অন্য দলগুলোর মধ্যে কে ভাল, কে খারাপ তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যদিও প্রত্যেক ম্যাচের আগে কোচ আমাদের বিপক্ষের ভিডিও দেখিয়ে তাদের শক্তি আর দুর্বলতা বোঝাচ্ছেন। তবে সেগুলো কী ফাঁস করছি না। আর একটা কথা। যুবভারতীর কৃত্রিম টার্ফে খেলায় সমস্যা থাকলেও আমাদের দলের ফিজিওরা প্লেয়ারদের ফিট রাখতে দারুণ কাজ করে চলেছে।

এই শহর এখন আমার কাছে আর অজানা নয়। সময় পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ছি। যে শহরের হয়ে খেলছি তার ভুগোলটাও তো জানা দরকার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, মাদার হাউস, বিড়লা মন্দির—এ সব দেখা হয়ে গিয়েছে আমার। জানার চেষ্টা করছি, এখানকার সংস্কৃতি। মানুষকে। আর সেটা করতে করতেই আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছি, ভাল খেলার জন্য। কলকাতার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য। তার জন্য টানা জিতে চলতেই হবে।

পরের লক্ষ্য তাই—‘মিশন দেল পিয়েরো’। একটু ভুল লিখলাম, ‘মিশন দিল্লি ডায়নামোস’। ফুটবলটা কিন্তু টিমগেম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন