দিয়েগো বলেছে, কাপটা এ বার মেসিরই হবে

আর ঠিক একদিন। রিওতে মারকাটারি কাপ ফাইনালের অপেক্ষা। উত্তেজনায় ফুটছে যুযুধান দুই দেশ। জার্মানি ও আর্জেন্তিনায় উত্তেজনার পারদ সরেজমিন জানালেন এক ফুটবল সাংবাদিক ও মারাদোনার প্রাক্তন ম্যানেজার। আনন্দবাজারকে। বিলার্দো যে ভাবে বলতেন, “দিয়েগো মারাদোনা আর দশ জন। এটাই আমার দল।” ফের ঠিক সে রকমই শুনলাম যে! শুক্রবার সকালেই বুয়েনস আইরেসের আভেনিদা আলভিয়ার, নাইন দি হুলিও অ্যাভেনিউ-সহ শহরের বেশ কয়েকটা মোড়েই আমাদের দেশের ফুটবলপাগল সমর্থকরা শুরু করে দিয়েছিল ট্যাঙ্গো। ফাইনাল সেলিব্রেশনের রিহার্সাল। সেই জটলাতেই কেউ ছুড়ে দিয়েছিল প্রশ্নটা, “রবিবার মেসির পাশে দি’মারিয়া খেলবে?” কোরাসে উত্তর ভেসে এল, “মেসি একাই একশো। সঙ্গে আরও দশ জন। উড়িয়ে দেব জার্মানিকে।” ফাইনালের আগে এ রকমই ঝাঁঝ গোটা আর্জেন্তিনার গলায়।

Advertisement

গিয়েরমো তোফানি

বুয়েনস আইরেস শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৪:৩৭
Share:

মেসির গোপন প্র্যাকটিস ভেসপাসিয়ানোতে। যার ছবি টিমের তরফে দেওয়া হল মিডিয়াকে। আর মেসিকে ভোঁতা করার পথের সন্ধানেই হয়তো অরণ্যে একাকী জোয়াকিম লো। ছবি:এপি ও রয়টার্স

বিলার্দো যে ভাবে বলতেন, “দিয়েগো মারাদোনা আর দশ জন। এটাই আমার দল।” ফের ঠিক সে রকমই শুনলাম যে!

Advertisement

শুক্রবার সকালেই বুয়েনস আইরেসের আভেনিদা আলভিয়ার, নাইন দি হুলিও অ্যাভেনিউ-সহ শহরের বেশ কয়েকটা মোড়েই আমাদের দেশের ফুটবলপাগল সমর্থকরা শুরু করে দিয়েছিল ট্যাঙ্গো। ফাইনাল সেলিব্রেশনের রিহার্সাল। সেই জটলাতেই কেউ ছুড়ে দিয়েছিল প্রশ্নটা, “রবিবার মেসির পাশে দি’মারিয়া খেলবে?” কোরাসে উত্তর ভেসে এল, “মেসি একাই একশো। সঙ্গে আরও দশ জন। উড়িয়ে দেব জার্মানিকে।” ফাইনালের আগে এ রকমই ঝাঁঝ গোটা আর্জেন্তিনার গলায়।

ব্রাজিল-সহ ইউরোপের বিভিন্ন মিডিয়া লিখছে ফাইনালে জার্মানরাই এগিয়ে। আমরা আর্জেন্তাইনরা ওটা মানবই না। যুক্তি যাই বলুক, আর্জেন্তিনার হৃদয় বলছে, চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল থেকে কাপটা নিয়ে ঘরে ফিরবে বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসি। সেই মারাকানা। ব্রাজিলের ফুটবল ঐতিহ্যের অন্যতম মনুমেন্ট। সেখানে ওদের হাতে কাপ নেই। কাপটা নিয়ে ঘরে নাচছি আমরা। এ স্বাদের কোনও ভাগ হবে না। এর মজাই আলাদা। রবিবার জিতলে শুধু বুয়েনস আইরেস কেন? রোজারিও, মেন্দোসা, কর্দোবা-সহ গোটা দেশের জনসুনামি ছাপিয়ে যাবে রাস্তাঘাট।

Advertisement

মারাদোনার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। চিনি মেসিকেও। জানি মেসি স্রেফ এই বিশ্বকাপটার জন্যই কী রকম টগবগ করে ভিতরে ভিতরে ফুটছে। মাস খানেক আগে দুবাইতে দিয়েগো (মারাদোনা)-র সঙ্গে কথা হয়েছিল। দীর্ঘ আড্ডায় বিশ্বকাপ নিয়ে কথা উঠতেই ও বলেছিল, “চোখ বুজে লিখে নাও, এ বারের বিশ্বকাপটা হবে মেসির। কাপটা আমরাই পাচ্ছি।” সে কথা যে অক্ষরে অক্ষরে প্রায় ফলে যাওয়ার পথে।

রিওর বিচে ফাইনালের আঁচ। ছবি: উৎপল সরকার

অনেকে জার্মানির হয়ে বড় সড় কথা বলছে, জোয়াকিম লো-র দলকে আমরা গত দু’বছরে কিন্তু হারিয়েছি প্রীতি ম্যাচে। আর দি’মারিয়াকে নিয়ে যে এত গুঞ্জন তার উত্তরও বোধহয় মাঠে নামার সময়ই দিয়ে দেবেন সাবেয়া। আর্জেন্তিনা মিডিয়ার খবর, ফাইনালে দি মারিয়ার খেলার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই জার্মান রক্ষণের সঙ্গে আগেরো, মেসিদের টক্করটা বেশ ভালই জমবে। শুক্রবার সকালেই জানতে পারলাম ব্রাজিল আর ইউরোপের মিডিয়া প্রচার করে বেড়াচ্ছে, মেসি নাকি ক্লান্ত। এ রকম মিথ্যা প্রচারে আমরা আর্জেন্তাইনরা ভয় পাচ্ছি না। লিও ফাইনালে ম্যাজিক দেখাবেই। জার্মানরা যত শক্তিশালীই হোক বিশ্বের সেরা ফুটবলারটা খেলে আমাদের টিমেই। ছিয়াশিতে যেমন ছিল দিয়েগো।

ভুল জার্মানি করবেই। আমাদের তক্কে তক্কে থেকে সেই সুযোগটা নিতে হবে। আর মেসির কাছে একটা সুযোগ আসা মানেই প্রতিপক্ষ কফিনে চলে যাওয়া।

রবিবার সকালে তাই সাত তাড়াতাড়ি প্রার্থনা সেরেই লাঞ্চ করে গোটা আর্জেন্তিনা বসে পড়বে টিভির সামনে। তৃতীয় বিশ্বকাপটা ঘরে আনার জন্য।

পোপ ফ্রান্সিস আমাদের দেশের মানুষ। মাস তিনেক আগে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ওঁর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন বিশ্বকাপের সময় নিরপেক্ষ থাকতে। কিন্তু আমার দেশের মানুষ নিশ্চিত পোপের আশীর্বাদ রবিবার মেসিদের এগারো জন যোদ্ধার মাথাতেই। মাঠের বাইরে আর ভিতরে ঈশ্বর তাই রবিবার আর্জেন্তাইনদের সঙ্গেই থাকবে।

‘হ্যান্ড অব গড’ এ বারও আমাদের সঙ্গে। সেমিফাইনালে ডাচদের বিরুদ্ধে যা বের করে আনল রোমেরো। সে দিন যা আনন্দ হয়েছে তাকে মিলিয়ন দিয়ে গুণ করলে যেটা দাঁড়াবে, সেটাই চ্যাম্পিয়ন হলে দেখা যাবে বুয়েনস আইরেসের রাস্তায়। বুয়েনস আইরেসে অনেক কিছু আবার হাত ধরাধরি করে চলে। যেমনফুটবল, ফ্যাশন, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, দারিদ্র্য, অভাব, হুলিগানস আরও কত কী! বিশ্বকাপ জিতলে শেষের তিনটে যে রাতারাতি বদলে যাবে তা কিন্তু নয়। কিন্তু একটা সপ্তাহের জন্য হলেও মুখে হাসি ফুটবে অভাব ক্লিষ্ট মুখগুলোতে। হুলিগানরাও গুণ্ডামি করার বদলে মেতে উঠবে ‘আলবিসেলেস্তে’ বন্দনায়।

কলকাতার বেশ কয়েক জন সাংবাদিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। ওদের থেকেই জেনেছি, ছিয়াশিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে বিলার্দো দল নিয়ে খেলে এসেছিল কলকাতায়। সাবেয়াও তিন বছর আগে কোচিংটা শুরু করেছিলেন ওই কলকাতাতেই। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি দিয়েই। তা হলে কি চ্যাম্পিয়ন’স লাকটা আমার দলের সঙ্গেই থাকছে? মেনোত্তি, বিলার্দোর সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে কি ঢুকে পড়বেন সাবেয়া?

কলকাতা উত্তরটা পাবে ম্যাচের পর। তখন লিখব, ফ্রম কলকাতা টু রিও-র সাকসেস স্টোরিটা।

মেসিদের হোটেলে মারাদোনা

ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথম আর্জেন্তিনা টিমের সঙ্গে দেখা যেতে পারে দিয়েগো মারাদোনাকে। রিও-এ মেসিদের টিম হোটেলেই উঠেছেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়ী। ভেনেজুয়েলান টিভির হয়ে বিশ্বকাপে সাংবাদিকের দায়িত্বে আছেন আর্জেন্তিনীয় কিংবদন্তি। তবে মারাদোনার উপস্থিতিতে ভ্রু কুঁচকেছে আর্জেন্তিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ক’য়েকজন কর্তার। এএফএ-র প্রেসিডেন্ট জুলিও গ্রন্দোনার সঙ্গে মারাদোনার দীর্ঘদিনের বিবাদ থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়ে গিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন