শেষ পাতে তৃপ্তি করিমের। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মোহনবাগান ২ (পঙ্কজ, ক্রিস্টোফার) : লাজং এফসি (বৈথাং)
মরসুমে কোনও ট্রফি দিতে পারেননি তবু নিজেকে দশে সাড়ে ছয় দিচ্ছেন মোহনবাগান কোচ করিম বেঞ্চারিফা!
কলকাতা লিগে করিমের দল রানার্স। ফেড কাপে সেমিফাইনাল। আইএফএ শিল্ডে গ্রুপ লিগে বিদায়। এবং রবিবার আই লিগে মোহনবাগান জিতেও শেষ করল তেরো দলের টুর্নামেন্টে ন’নম্বরে। তবু করিম বললেন, “শুধু ট্রফি পাওয়া-না পাওয়ার উপর আমি মার্কস দেব না। টিম তৈরি করা থেকে সব খুঁটিনাটি বিষয় ধরে যদি বিচার করা যায়, তবে নিজেকে দশে সাড়ে ছয় দেব।”
এ দিনই ছিল করিমের বাগান থেকে বিদায়-ম্যাচ। খেলা শেষে বাগান কোচকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন যুদ্ধ জয় করে ক্লান্ত সৈনিক ফিরছেন। সাদা শার্ট ঘামে ভিজে সপসপে। বিধ্বস্ত চোখ-মুখে তবু লেগে তৃপ্তির হাসি। কেন? ব্যাখ্যা করলেন মরক্কান কোচ নিজেই। “ট্রফি না দিতে পারার যন্ত্রণা যেমন রয়েছে, তেমনই যে টিম তৈরি করে দিয়ে গিয়েছি, মোহনবাগান যদি ধরে রাখতে পারে তবে আগামী দিনে সাফল্য আসবেই। এটাই বড় প্রাপ্তি।”
তবে আই লিগের গুরুত্বহীন ম্যাচটাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন করিমই। কখনও ফুটবলারদের তাতিয়ে, কখনও রেফারির সঙ্গে তর্ক জুড়ে, আবার কখনও গোল মিসের পর তীব্র হতাশায় হাত-পা ছুড়ে। করিমের অভিব্যক্তি দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি, আই লিগে নিয়মরক্ষার ম্যাচ খেলতে নেমেছে মোহনবাগান। খেতাব জয়ের ম্যাচ বলেই বেশি মনে হচ্ছিল।
রিলিজ পেয়ে যাওয়ায় ওডাফা স্বভাবতই দলে ছিলেন না। ইচে কার্ড সমস্যায়। তবু প্রীতম, শৌভিক, পঙ্কজরা নিজেদের উজাড় করে দিলেন, তাঁদের ‘করিম স্যার’-এর জন্য। শুরু থেকে লাজংকে আক্রমণাত্মক ফুটবলে কোণঠাসা করে দিয়েছিলেন কাতসুমিরা। বিকেল পাঁচটায় ম্যাচ হলেও কলকাতার অসহ্য দাবদাহে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন পাহাড় থেকে আসা কর্নেল গ্লেন, টুবোইরা। কর্নেল গ্লেন, যাঁকে মোহনবাগান পরের মরসুমে নিতে চাইছে এ দিন চূড়ান্ত ফ্লপ।
ম্যাচের শুরুতেই উজ্জ্বলের পাসে হাফভলিতে দর্শনীয় গোল করে সবুজ-মেরুনকে এগিয়ে দেন পঙ্কজ। এর পর অসংখ্য গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাগান। কাজে লাগাতে ব্যর্থ সাবিথ, ক্রিস্টোফাররা। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে করিম বলেও গেলেন, “মোহনবাগানে ট্রফি না আসার দশটা কারণের মধ্যে যেমন একটা আমি, একটা কারণ, গোটা মরসুম প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়া।” বিরতির পর মোহনবাগানের গাঁট বলে পরিচিত বৈথাং নেমেই সমতা ফেরান। তবে গোল মিসের হ্যাটট্রিক করা ক্রিস্টোফার শেষ পর্যন্ত প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে গিয়ে লম্বা শটে ২-১ করে মান বাঁচান করিমের।
ম্যাচের আগে বাগান সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুর সঙ্গে দেখা করেন করিম। কিন্তু পরের মরসুমে তাঁকে যে রাখা হচ্ছে না বুঝে যান। অনেকটা সৌজন্যের খাতিরেই যুবভারতী থেকে বেরোনোর আগে বললেন, “সুভাষ ভৌমিক চূড়ান্ত হয়েছেন কি না জানি না। তবে উনি যদি কোচ হয়ে আসেন খুব ভাল হবে। ভাল কোচ। আমার শুভেচ্ছা রইল।”
মোহনবাগান- শিল্টন, প্রীতম, কিংশুক, আইবর, শৌভিক, ডেনসন, উজ্জ্বল (মণীশ), কাতসুমি (বিক্রমজিৎ), পঙ্কজ, ক্রিস্টোফার (শঙ্কর), সাবিথ।