পিচ-চরিত্রে ধোঁকা খেয়ে মাসুল গুনছে বাংলা

চকচক করলেই সোনা হয় না। সবুজ হলেও তাকে গ্রিনটপ উইকেট বলা যায় না। রবিবার বাংলার রঞ্জি স্কোয়াডের প্রাপ্তি এই শিক্ষাটাই। যা তাদের শিখতে হল ঘরের মাঠেই। সকালে উইকেটের সবুজ রং দেখে কোনও বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়াই প্রথম এগারো বেছে ফেলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লরা। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তও নিলেন বাংলার ক্যাপ্টেন। দিনের শেষে অবশ্য মুম্বইয়ের সেঞ্চুরিয়ন শ্রেয়াস আইয়ার ১৫৩-র ইনিংস খেলে দলকে ৩০৬-৪-এ পৌঁছে দিয়ে বলছিলেন, “উইকেট তো ভালই। এই উইকেটে ব্যাট করতে ভালই লাগছিল।”

Advertisement

রাজীব ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭
Share:

বিধ্বস্ত দিন্দা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

চকচক করলেই সোনা হয় না। সবুজ হলেও তাকে গ্রিনটপ উইকেট বলা যায় না।

Advertisement

রবিবার বাংলার রঞ্জি স্কোয়াডের প্রাপ্তি এই শিক্ষাটাই। যা তাদের শিখতে হল ঘরের মাঠেই।

সকালে উইকেটের সবুজ রং দেখে কোনও বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়াই প্রথম এগারো বেছে ফেলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লরা। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তও নিলেন বাংলার ক্যাপ্টেন। দিনের শেষে অবশ্য মুম্বইয়ের সেঞ্চুরিয়ন শ্রেয়াস আইয়ার ১৫৩-র ইনিংস খেলে দলকে ৩০৬-৪-এ পৌঁছে দিয়ে বলছিলেন, “উইকেট তো ভালই। এই উইকেটে ব্যাট করতে ভালই লাগছিল।” ঠিক তার পরই কাষ্ঠহাসি নিয়ে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে কোচ অশোক মলহোত্র বললেন, “উইকেটে ঘাস থাকলে কী হবে, বড্ড শুকনো। ওদের রানটা একটু বেশিই হয়ে গেল।” ইডেনের বাইশ গজই যেন তাঁদের ‘বেওয়াফা সনম’ হয়ে ধোঁকা দিল। প্রশ্ন উঠে গেল বাংলার কোচ-ক্যাপ্টেন সকালে এই পিচ-চরিত্র বুঝতে পারলেন না? তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য নেই।

Advertisement

কমেন্ট্রি বক্সে বসে বাংলার প্রাক্তন ক্যাপ্টেন দীপ দাশগুপ্ত মন্তব্য করে বসলেন, “এ তো মনে হচ্ছে নকল ঘাস। গ্রিনটপের কোনও গুণই নেই এই উইকেটে।” সেই শুনে কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় চটে লাল। বিকেলে বললেন, “নকল ঘাস! এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে কাল থেকে ইডেনে আসাই ছেড়ে দেব।” সন্ধ্যায় দীপের ব্যাখ্যা, “শুকনো বলেই বোলাররা উইকেটে ঘাস থাকার কোনও সুবিধা পাচ্ছে না। সে জন্যই নকল ঘাস মনে হচ্ছিল।” ক্লাব হাউসে দাঁড়িয়ে এক নির্বাচক বললেন, “চূড়ান্ত এগারোয় একটা স্পিনার রাখা উচিত ছিল। উইকেট তো প্রথম দিনই ফাটতে শুরু করে দিয়েছে।” শোনা গেল, বাংলা শিবিরেও দিনের শেষে একই উপলব্ধি। কিন্তু সকালে উইকেটের চরিত্র না বোঝার মাশুল তাদের দিতে হল সারা দিন ধরে।

প্রথম রঞ্জি ম্যাচে নামা মিডিয়াম পেসার প্রীতম চক্রবর্তীর প্রথম সাত ওভারের মধ্যে ছ’টিই মেডেন। লক্ষ্মীর বলে দ্বিতীয় স্লিপে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে মুম্বই ওপেনার অখিল ধরা পড়লেন। বীরপ্রতাপের বলে হেলমেটের বাঁ পাশে আঘাত পেলেন ওপেনার আদিত্য তারে। পরের বলেই দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ মিস সুদীপের। দু’রানের মাথায়ও তারে ওই একই জায়গায় সুদীপের হাতেই জীবন পেয়েছেন। প্রথম সেশনে পরপর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলিই প্রমাণ করে শুরুতে পেসারদের অনেক সুযোগই দিয়েছিল ইডেনের শীতের সকাল এবং আর্দ্রতা। কিন্তু তাঁরা নিতে পারেননি। পারলে ছবিটা অন্য রকম হত। দ্বিতীয় সেশনের ড্রিঙ্কসের পর যখন পার্ট টাইম স্পিনার শুভজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায় বল করতে এলেন, তখন স্টিয়ারিংয়ে বসার চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের। ইডেনের পরিবেশও তখন বদলে গিয়েছে।

কর্নাটক ম্যাচে এক শ্রেয়াস (গোপাল) বাংলার মুখ থেকে গ্রাস কেড়ে নিয়েছিলেন। এ বার আর এক শ্রেয়াস (আইয়ার) তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলেন। এবি ডেভিলিয়ার্সের অন্ধ ভক্ত শ্রেয়াস এ দিন ৭৩-এ শ্রীবত্‌সের হাতে জীবন পাওয়ার পর ইনিংসের গতি বাড়িয়ে নেন অভিষেক নায়ারকে সঙ্গে নিয়ে। রান নিতে গিয়ে ক্রিজে লুটিয়ে পড়ে আঘাত পেয়েও নায়ার হাফ সেঞ্চুরি করলেন দিন্দাদের প্রশ্রয়েই। শেষ দু’সেশনে মুম্বইয়ের রান রেট থাকল চারের আশে পাশে।

পাঁচ স্পেলে ২৩ ওভার করে ৮০ রান দেওয়া অশোক দিন্দা শেষ পর্যন্ত শ্রেয়াসকে ফেরালেন। তাঁর সারা দিনের সাফল্য বলতে শুধু এটাই। সোমবার প্রথম সেশনের মধ্যেই মুম্বইকে শেষ করে দিতে চান বাংলার অধিনায়ক। পারলে ভাল। না পারলে হয়তো ফের ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই শুরু করতে হবে বাংলাকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই ৩০৬-৪ (শ্রেয়াস আইয়ার ১৫৩, অভিষেক নায়ার ৬৫, বীরপ্রতাপ ২-৭৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন