কিংস ইলেভেন মালকিন এবং দুই নায়ক। ম্যাক্সওয়েল (৪৫ বলে ৮৯) এবং মিলার (১৯ বলে ৫১ ন.আ.)। ছবি: পিটিআই ও বিসিসিআই
দুই ‘এম’ময় আইপিএল-সেভেনের প্রথম পাঁচ দিন।
কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে দু’টো ম্যাচই জেতাল দুই ‘এম’ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর ডেভিড মিলার। প্রথম ম্যাচে ওদের দাপটে চেন্নাইয়ের দুশোর বেশি রান তাড়া করে সাত বল বাকি থাকতে জিতেছিল পঞ্জাব। এ দিন জিতল রাজস্থানের দুশোর সামান্য কম রান তাড়া করে আট বল বাকি থাকতে। এবং আমিরশাহির দু’টো ভিন্ন চরিত্রের মাঠে। আবু ধাবির সামান্য ঘাস ছেড়ে রাখা দ্রুত উইকেটেও যেমন, তেমনই এ দিন শারজার পাটা এবং স্লো উইকেটে সমান ভয়ঙ্কর দেখাল ম্যাক্সওয়েল (৪৫ বলে ৮৯) আর মিলারকে (১৯ বলে ৫১ নঃআঃ)। দু’ধরনের পিচেই দু’জনের শটের অনবদ্য টাইমিং। মিলার তো ধবল কুলকার্নির ১৮তম ওভারে চারটে ওভার বাউন্ডারি মেরে যে কঠিন কাজটা ম্যাক্সওয়েল দুর্দান্ত ভাবে শুরু করেছিল, সেটা আরও অনবদ্য ভাবে শেষ করল পঞ্জাবকে সাত উইকেটে জিতিয়ে। এই দু’জন না এ বার অনেক বোলারের কেরিয়ার শেষ করে দেয়।
এ সবের মধ্যে হয়তো অনেকে পূজারার (৩৮ বলে ৪০ নঃআঃ) ব্যাটিং নিয়ে চোখ কুঁচকাবেন! কিন্তু যে ছেলেটা টেস্টে দু’দিন ব্যাট করতে পারে, তাকে এত দূরে বসে টিভিতে দেখেও আমার মনে হল, প্রীতি জিন্টার টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে দায়িত্ব দিয়েছিল বড় টার্গেটের বিরুদ্ধে একটা দিকে তুমি আগাগোড়া পড়ে থাকো। অন্য প্রান্তে ঝড় তুলবে অন্যরা। কারণ পঞ্জাব মিডল অর্ডারে ম্যাক্সওয়েল-মিলার-বেইলির মতো কুড়ি ওভারের ফর্ম্যাটের ভয়ঙ্কর তিনটে নাম আছে।
মিলার তো গত আইপিএল থেকেই ‘মিলার দ্য কিলার’ নাম পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল এ বার প্রথম দু’টো ম্যাচে যা ব্যাট করল অতুলনীয়! ওর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় গুণ নিজেকে নিজে ‘ব্যাক’ করে। মানে যে বলটা যে ভাবে মারবে ভাবে, সেটা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে মারে। প্রচণ্ড ভাল শট নির্বাচন। প্রতিটা বিগ হিটে শরীরের পজিশন নিখুঁত। তাম্বের মতো এ দিন ভাল লেগ স্পিন করানো বোলারকেও সফল সুইচ হিট মেরেছে ওই দুর্ধর্ষ শরীরের পজিশনিংয়ের জোরেই। এর পর বীরেন্দ্র সহবাগ (২) ফর্মে ফিরলে এই পঞ্জাব যে কোনও অবস্থায় যে কোনও টার্গেট পূরণ করে দেবে মনে হয়। খারাপ লাগছে টিমের এমন দুর্দান্ত জয়ের দিন তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েও আমাদের ঋদ্ধিমান (২) সেটা কাজে লাগাতে না পারায়।
তবে তার চেয়েও খারাপ লাগছে রাজস্থানের সঞ্জু স্যামসনের জন্য। ওর ৩৪ বলে ৫২ রানের অত ভাল ইনিংসটা শেষমেশ মূল্য না পাওয়ায়। ওকে এখনই ভারতীয় ক্রিকেটে একজন প্রতিষ্ঠিত প্লেয়ার বলে আমি মনে করি। এ বার রঞ্জিতে কেরলের হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি করেছে। ধোনিকে সরিয়ে কোনও উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের এই মুহূর্তে ভারতের হয়ে খেলা অসম্ভব। নইলে যে কোনও সময় জাতীয় দলে ঢোকার মতো প্রতিভা সঞ্জু। এ দিন মিচেল জনসনকে পর্যন্ত ফ্রন্টফুটে যে ভাবে পুল মারল, সে রকম ফ্রন্টফুটে পুল মারতে একমাত্র রিকি পন্টিংকে আম্তর্জাতিক ম্যাচে দেখেছি। ওয়াটসন (২৯ বলে ৫০) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরীক্ষিত এবং সফল ব্যাটসম্যান। কিন্তু সঞ্জুর ইনিংসটার তাৎপর্য আলাদা।
যেমন তাৎপর্যপূর্ণ মুরলী কার্তিকের বোলিং। ও এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের রাজ্য (ওর ক্ষেত্রে রেলওয়েজ) দলের হয়েই ওয়ান ডে খেলে না। এ বার রঞ্জিতেও খুবই কম বল করতে দেখা গিয়েছে। আমাদের বাংলার সঙ্গে এ মরসুমে অনেকবার রেলওয়েজের খেলা হওয়ায় আরও ভাল জানি, কার্তিক এখন বল করতেই চায় না। বলতে গেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কেবল নিজের নামটাই লিখিয়ে রেখেছে। সেখানে ওর উপর দলের প্রধান স্পিন আক্রমণের ভরসা রাখাটা কিংস ইলেভেন ফ্র্যাঞ্চাইজিরই ভুল সিদ্ধান্ত। ভুলের খেসারত (এ দিন ৪ ওভারে ৫১ রান দিল ও) তো দিতেই হবে। পঞ্জাবের একমাত্র দুর্বল ‘লিঙ্ক’ হল ওদের স্পিন আক্রমণ।
তবে ওদের মিচেল জনসন অমন ধুন্ধুমার টেস্ট মরসুম (যত দূর মনে পড়ছে শেষ ১২ টেস্টে ৮০টার আশপাশে উইকেট পেয়েছে) শেষ করে এসে আইপিএলে প্রথম দু’টো ম্যাচেই পিটুনি খেলেও আমি অবাক নই। প্রথমত এটা সম্পূর্ণ অন্য ফর্ম্যাট। অন্য পিচ, অন্য মাপের মাঠ। সবচেয়ে বড় কথা, অ্যাসেজ আর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জনসনের প্রধান সাফল্য ছিল ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে শর্ট পিচড্ বলে। আইপিএলে সে রকম বল করার তো প্রশ্নই নেই, উল্টে ওভার পিছু একটার বেশি বাউন্সারও দেওয়ার নিয়ম নেই। কী করে জনসনকে টেস্টের জনসন দেখাবে? তবু এ দিন আগের দিনের তুলনায় ভাল করেছে। তার পর তো ওর দলে একটা ম্যাক্সওয়েল, একটা মিলার আছেই। যারা থাকা মানে তোমার দল যে কোনও টার্গেট তাড়া করবে এবং জিতবেও!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজস্থান রয়্যালস ২০ ওভারে ১৯১-৫।
কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৮.৪ ওভারে ১৯৩-৩।