পাহাড় জয় করে বিদায় নিতে চান করিম

সকালে অনুশীলনের আগে বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে বয়কটের হুমকি, শেষ পর্যন্ত বদলে গেল হাসিঠাট্টায়, নাচানাচি-তে! মরসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বাগানের ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া ছিল যে কোনও ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের মতো। সেখানে অভিমান-ক্ষোভ ছিল। ছিল আফসোস। আবার উচ্ছ্বাসও। টিমের অধিনায়ক ওকোলি ওডাফার সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বিদায় করে দিয়েছেন কর্তারা। তিনি স্বভাবতই আসেননি।

Advertisement

তানিয়া রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

বাগানে শেষ অনুশীলন করিয়ে ফিরছেন করিম বেঞ্চারিফা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সকালে অনুশীলনের আগে বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে বয়কটের হুমকি, শেষ পর্যন্ত বদলে গেল হাসিঠাট্টায়, নাচানাচি-তে!

Advertisement

মরসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বাগানের ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া ছিল যে কোনও ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানের মতো। সেখানে অভিমান-ক্ষোভ ছিল। ছিল আফসোস। আবার উচ্ছ্বাসও।

টিমের অধিনায়ক ওকোলি ওডাফার সঙ্গে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে বিদায় করে দিয়েছেন কর্তারা। তিনি স্বভাবতই আসেননি।

Advertisement

কোচ করিম বেঞ্চারিফার বিদায় পরোয়ানাও জারি হয়ে গিয়েছে। তিনি শনিবার বলেও দিয়েছেন, “ক্লাব-কর্তারা যখন আমার সঙ্গে এখনও কথা বলেননি তখন ধরে নিতে হবে আমাকে রাখা হবে না।” শোনা যাচ্ছে কর্তারাও ঠিক করে ফেলেছেন মরসুম শেষ হয়ে গেলেই ঘোষণা করে দেওয়া হবে সুভাষ ভৌমিকের নাম।

শিল্টন পাল, রাম মালিক-সহ কিছু ফুটবলারের সঙ্গে ফের চুক্তি করেছেন কর্তারা। কিন্তু ডেনসন দেবদাস, সন্দীপ নন্দীদের মতো অনেকের সঙ্গে আবার কথাও বলা হয়নি।

এ রকম একটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে রবিবার আই লিগের শেষ ম্যাচে লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামবে মোহনবাগান। অবনমনের চাপ নেই, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নেই। দু’দলের কাছেই ম্যাচটা নিয়মরক্ষার। বড় ক্যানভাসে লিগ টেবিলে নিজেদের একটু উপরের দিকে এক ধাপ এগোনোর লড়াই।.

এ দিন সকালে মাঠে গিয়ে দেখা যায় কোচ করিম, সহকারী মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অধিকাংশ সাপোর্ট স্টাফ-ই অনুশীলনের জন্য মাঠে নেমে গেলেও ফুটবলাররা বসে আছেন ড্রেসিংরুমেই। তাঁদের দাবি, বকেয়া টাকা চাই। পরে ফুটবল-সচিব উত্তম সাহার ‘দু’তিনদিনের মধ্যে মিটিয়ে দেব’ আশ্বাসে বরফ গলে। এবং প্র্যাকটিসে নামেন কাতসুমিরা। তীব্র গরমে অনুশীলন চলে ঘণ্টা দেড়েক।

অনুশীলনে নামার পর অবশ্য ভিটামিন ‘এম’-এর জেরে ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল পুরো টিমকেই।. কোচের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা চলছিল। প্র্যাকটিসের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে মিউজিক চালিয়ে নাচানাচিও হল। মরসুমের শেষ দিনের অনুশীলন যেন এ ভাবেই সেলিব্রেট করলেন শিল্টন-ক্রিস্টোফাররা। ওডাফাকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি অবশ্য শেষ দিনও এড়িয়ে গেলেন করিম। বললেন, “ওডাফা অসুস্থ। তাই লাজং ম্যাচ খেলতে পারবে না।” আর রিলিজ নেওয়া ওডাফাকে ফোনে ধরা হলে ক্ষোভ লুকিয়ে বললেন, “আমার শরীর খারাপ। অনুশীলনে যেতে পারছি না। কী করে ম্যাচ খেলব!” কার্ড সমস্যার জন্য ইচেও টিমে নেই। তবে এ সব নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না মোহনবাগান। দুই বিদেশি নিয়েই মাঠে নামছেন মরক্কান কোচ।

করিমের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, আজ পাহাড় জয় করে বিদায় নিতে মরিয়া তিনি। কিন্তু বিদায়ী কোচের স্বপ্ন কি সত্যি হবে? এই মরসুমে কলকাতার মাঠে এখনও অপরাজিত লাজং এফসি। ইস্টবেঙ্গল, ইউনাইটেড স্পোর্টস, মহমেডান কেউই হারাতে পারেনি কর্নেল গ্লেনের টিমকে। বাগান কি পারবে? করিম বললেন, “যদিও লাজং ম্যাচের সে অর্থে কোনও গুরুত্ব নেই। তবে পেশাদার হিসেবে সব ম্যাচ জেতাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।” কথা শুনলেই বোঝা যাচ্ছিল, চিন্তায় রয়েছেন।

মুখে কৃত্রিম হাসি ছড়িয়ে করিম এ দিন বেরিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য স্বীকার করে নিলেন, মোহনবাগানে ট্রফি না আসার জন্য যদি দশটি কারণ থাকে, তার মধ্যে একটি তিনি নিজে। তবে এই মরসুমে ট্রফি না পেলেও তাঁর প্রাপ্তি যে মোহনবাগানের পাঁচ ফুটবলার--- রাম, প্রীতম, শৌভিক, পঙ্কজ, উজ্জ্বল সেটা জানাতে ভোলেননি। “এই মরসুমে ট্রফি পাইনি। তবে আমার প্রাপ্তি পাঁচ জন ফুটবলার। ওরাই কিন্তু ভবিষ্যতের তারকা।”

বাগানের বড় সুবিধা শহরের বর্তমান আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা। পাহাড় থেকে আসা লাজং কতটুকু লড়াই দেবে তা নিয়ে চিন্তিত তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট। তার উপর দলবদলের বাজারে গ্লেনদের নিয়ে টানাটানি চলছে। গত দেড় বছরের ট্রফি না-জেতা করিম যদি এই সুযোগে ম্যাচটা জিতে যান, তা হলে শেষ বেলায় সেটা হবে মরক্কানের বড় প্রাপ্তি।

শনিবারে আই লিগ ফুটবল
• মোহনবাগান: লাজং (যুবভারতী ৫-০০)
• মহমেডান: মুম্বই এফ সি (পুণে)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন