ঋদ্ধির সেরে উঠতে দিন তিনেক

পঁয়তাল্লিশ মিনিটেই ডুব অপমানের মহাসাগরে

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্তম্ভিত বললেও বোধহয় কম বলা হবে। একটা টিমের অবস্থা পরপর দু’টো ইনিংসে যে কী ভাবে এমন হতে পারে, বোধগম্য হচ্ছে না তাঁর। আর এর প্রেক্ষিতে কী প্রতিক্রিয়া দেবেন, সেটাও না। ভিভিএস লক্ষ্মণ অপ্রস্তুত। প্রথম দিন বাংলা ক্রিকেটে পা রেখে শুনলেন, টিম বাংলার তিন স্তম্ভ সমেত লাহলি পিচে কদর্য ভাবে ধ্বংস হয়েছে পূর্বাঞ্চল। লক্ষ্মণ ম্যাচটা টিভিতে লাইভ দেখেননি, নেটে খোঁজ রেখেছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, পিচটাই ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৪
Share:

৮৪-র পর ৬২ রানে চুরমার মনোজের পূর্বাঞ্চল।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্তম্ভিত বললেও বোধহয় কম বলা হবে। একটা টিমের অবস্থা পরপর দু’টো ইনিংসে যে কী ভাবে এমন হতে পারে, বোধগম্য হচ্ছে না তাঁর। আর এর প্রেক্ষিতে কী প্রতিক্রিয়া দেবেন, সেটাও না।

Advertisement

ভিভিএস লক্ষ্মণ অপ্রস্তুত। প্রথম দিন বাংলা ক্রিকেটে পা রেখে শুনলেন, টিম বাংলার তিন স্তম্ভ সমেত লাহলি পিচে কদর্য ভাবে ধ্বংস হয়েছে পূর্বাঞ্চল। লক্ষ্মণ ম্যাচটা টিভিতে লাইভ দেখেননি, নেটে খোঁজ রেখেছেন। তাঁর মনে হচ্ছে, পিচটাই ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে। “আসলে পিচটা বরাবরের সিম সহায়ক। ম্যাচটাও তো লো স্কোরিং হল।”

অশোক মলহোত্র তীব্র হতাশাবিদ্ধ। বাংলা কোচ বলে দিচ্ছেন, পূর্বাঞ্চলের এমন অবস্থায় খুব অবাক তিনি নন। সবুজ পিচে পড়লে গোটা ভারতীয় টিম যখন উড়ে যায়, তখন পূর্বাঞ্চলের আর দোষ কী!

Advertisement

৮৪-র পর এ বার ৬২!

একশোয় পাওয়া কোনও পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর নয়। কোনও ব্যাটসম্যানের দু’ইনিংসের স্কোর নয়। এটা মনোজ তিওয়ারির পূর্বাঞ্চলের দু’ইনিংসের স্কোর। উত্তরাঞ্চলের হয়ে যখন মধ্যাঞ্চলের বিরুদ্ধে একাই ১৬৭ করে যাচ্ছেন গৌতম গম্ভীর, তখন দু’বার ব্যাট করেও পূর্বাঞ্চলের এগারো জন ক্রিকেটার টিমকে একশোও দিতে পারলেন না।

দলীপ সেমিফাইনালে দক্ষিণাঞ্চলের বিরুদ্ধে হার যে আসছে জানা ছিল। কিন্তু সেটা যে এত কদর্য ভাবে আসবে, আসবে ইনিংস আর ১১৮ রানে কেউ আন্দাজ পায়নি। দলীপের তৃতীয় দিনে পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ কি না মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটে! কেউ মনে করতে পারছেন না, সাম্প্রতিক অতীতে এত বড় বিপর্যয় কখনও পূর্বাঞ্চলের ঘটেছে কি না। বলা হচ্ছে, বাজে ভাবে অনেক বারই হেরেছে পূর্বাঞ্চল। কিন্তু দু’ইনিংসের একটাতেও একশো তোলা যাচ্ছে না এমন ঘটনা গত দশ-পনেরো বছরে ঘটেনি।

গত কালই চার উইকেট চলে গিয়েছিল, এ দিন বাকি পাঁচ পড়তে সময় লাগল ওই পঁয়তাল্লিশ মিনিট। বাকি পাঁচ কারণ, ঋদ্ধিমান সাহা আর এ দিন ব্যাট করতে নামতে পারেননি। কিপিং করতে গিয়ে তাঁর আঙুলে লাগায় টিম চাইছিল যে, অযথা ঝুঁকি আর না নিতে। যখন ম্যাচে আর কিছু পড়ে নেই। ঋদ্ধিও ঝুঁকি নেননি।

ঋদ্ধিকে না নামতে দেখে ভারতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজে তাঁর ভবিষ্যত নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করলেও শোনা গেল, চিন্তার কিছু নেই। জাতীয় নির্বাচকরা অপেক্ষা করবেন ফিজিওর রিপোর্টের জন্য। ঋদ্ধিমান এক সপ্তাহ সময়ও পাচ্ছেন সেরে ওঠার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা খবর, দু’তিন দিন লাগবে তাঁর বুড়ো আঙুল সারতে।

কিন্তু পূর্বাঞ্চলের অপমানের ক্ষত? সেটা কে সারাবে?

সৌরভ বলছিলেন, “সুইং ম্যানেজমেন্টটা একেবারেই করা গেল না।” কোনও কোনও প্রাক্তনের আবার মনে হল, যা উইকেট ছিল, তাতে দুশো তোলা একেবারে অসম্ভব ছিল না। একজন কেউ সত্তর-আশি করে দিলেই হয়ে যেত। পূর্বাঞ্চলের এ দিন শেষ ভরসা বলতে ছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। অপমান কমাতে পারলে, তিনিই পারতেন। গত রঞ্জিতে এমন সব সবুজ পিচে পরের পর বড় রান করেছেন লক্ষ্মী। কিন্তু পূর্বাঞ্চলের প্রয়োজনের দিনে তিনিও পারলেন না। নেমেই চালাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৮-র বেশি এগোয়নি তাঁর ইনিংস। ওটাই আবার টিমের সর্বোচ্চ!

রাতে লাহলি থেকে কলকাতা ফেরার পথে বাংলা অধিনায়ক বলছিলেন, “প্রথম ম্যাচে ভাল খেলেছিলাম। এই ম্যাচেও চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। বিজয় হাজারেতে এ বার মন দিতে চাই।” গোটা দ্বিতীয় ইনিংসে দশ পেরিয়েছেন মাত্র দু’জন। লক্ষ্মী আর সৌরভ তিওয়ারি। মনোজ তিওয়ারি দু’টো ইনিংসে ৪ আর ৮! আর দু’ইনিংস মিলিয়ে সাত উইকেট তুলে পূর্বাঞ্চলকে একা শেষ করে গেলেন স্টুয়ার্ট বিনি।

তা হলে এর পর?

এর পর লক্ষ্মী-মনোজরা চ্যালেঞ্জার ট্রফি খেলবেন। বাংলা টিমে নতুন করে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি হল এ দিন। দলীপ ট্রফি তো এ বারের মতো শেষ। পূজারার পশ্চিমাঞ্চলকে হারিয়ে তৈরি স্বপ্ন শেষ মাত্র আড়াই দিনে, বাস্তবের রুক্ষ থাপ্পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন