পদত্যাগ ফিরিয়ে নেওয়ার অজুহাতও নেই অঞ্জনদের

বাগান কর্তাদের পদত্যাগের নাটক পঞ্চমাঙ্কে উঠল মঙ্গলবার। টিমের তিন প্রধান কর্তার পদত্যাগের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই আবার নতুন নাটক মঞ্চস্থ হল মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৫
Share:

৪৮ ঘণ্টার নাটক শেষ। ফিরে এলেন অঞ্জন। সঙ্গে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মোহনবাগান তাঁবু। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বাগান কর্তাদের পদত্যাগের নাটক পঞ্চমাঙ্কে উঠল মঙ্গলবার।

Advertisement

টিমের তিন প্রধান কর্তার পদত্যাগের আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই আবার নতুন নাটক মঞ্চস্থ হল মোহনবাগান ক্লাব তাঁবুতে।

মোহনবাগানের কার্যকরী কমিটিকে ঢাল করে পুনরায় নিজেদের দায়িত্বেই বহাল থাকলেন স্বপনসাধন বসু, অঞ্জন মিত্র, দেবাশিস দত্তরা। নাটকের প্লট অনুযায়ী, মোহনবাগানের তিন কর্তা-সহ মোট দশ জন কার্যকরী কমিটির সদস্যের পদত্যাগপত্র গৃহীতই হল না। বিরোধী গোষ্ঠী অবশ্য বরাবর দাবি করে এসেছিলেন, ‘‘অঞ্জন, দেবাশিসদের পদত্যাগ করাটা নাটক ছাড়া কিছু নয়। ওদের পদত্যাগপত্র ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলা হবে। ওরা যে যার দায়িত্বেই বহাল থাকবে।”

Advertisement

অঞ্জনবাবুদের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার পিছনে অবশ্য হাস্যকর যুক্তি দেখিয়েছেন ক্লাবের সহ সভাপতি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “অঞ্জনবাবুরা নিয়ম মেনে পদত্যাগ করেননি, তাই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।” প্রশ্ন হল, নিয়মটা কী? আর প্রায় আড়াই দশক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরও পদত্যাগের নিয়ম জানেন না অঞ্জনবাবুরা? আর যদি নিয়ম মেনে পদত্যাগ না করা হয়ে থাকে, তবে কেন স্বপনসাধন বসু এবং দেবাশিস দত্তের পদত্যাগ করার খবর ই-মেল মারফত মোহনবাগান থেকে পাঠানো হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের কাছে? এ সবের সঠিক কোনও উত্তর অবশ্য কারও থেকেই পাওয়া যায়নি।

ফেড কাপে বাগানের ভরাডুবির পর দলের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে রবিবারই পদত্যাগ করেছিলেন বাগানের সভাপতি, সচিব এবং অর্থসচিব। তাঁদের পথ অনুসরণ করে ফুটবল সচিব, ক্রিকেট সচিব সহ আরও সাত জন কার্যকরী কমিটির সদস্য পদত্যাগ করেন। এই ডামাডোলের পরিস্থিতিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মঙ্গলবার জরুরি কার্যকরী কমিটির সভা ডাকা হয়। এই সভায় যোগ দিতে অনুরোধ জানানো হয় অঞ্জনবাবু-সহ যাঁরা পদত্যাগ করেছেন তাঁদের সবাইকেই। সভাপতি এবং অর্থসচিব সহ কার্যকরী কমিটির পাঁচ জন এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সচিব অবশ্য অসুস্থ শরীর নিয়েই এসেছিলেন। পদত্যাগ করা নিয়ে গত দু’দিন যে নাটক চলছিল, তার যবনিকা পতন হওয়া ছাড়া নতুন করে কিছু ঘটার কথা ছিল না। তবু এই নাটক দেখতেই এ দিন ক্লাবে সদস্য সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।

অঞ্জন মিত্র: আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। কার্যকরী কমিটিও অনুরোধ করেছে থাকার জন্য।

দেবাশিস দত্ত: আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। দিল্লিতে ছিলাম।

স্বপনসাধন বসু: ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

নতুনত্ব বলতে, এ দিন সভায় তিন জনের একটি কোর কমিটি তৈরি হয়। তিন জনের মধ্যে দু’জন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাস। আর এক সদস্য হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এই কমিটির কাজ কী হবে? অঞ্জনবাবু বললেন, “এই কমিটি ক্লাবের দৈনন্দিন কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হবে। এবং ফুটবলের উন্নতির স্বার্থে ক্লাবকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবে।” এই কোর কমিটির তিন সদস্যই আবার ক্লাবের সহ-সভাপতি। স্বভাবতই মন্ত্রী-মেয়রদের ক্লাবের রোজকার কাজের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য আলাদা করে কমিটি গঠনের কী প্রয়োজন পড়ল, সেটা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গেই রয়েছে ক্লাবের আর্থিক দুরবস্থাও। প্রায় আড়াই মাস ফুটবলাররা বেতন পাননি। ফেড কাপ থেকে ফিরে আসার পরই বেতনের জন্য তাঁরা তাগাদা শুরু করবেন। কিন্তু টাকা কোথায়? কার্যকরী কমিটির বেশ কিছু সদস্য তো ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, “কোর কমিটি গঠন করে আর কী হবে! টাকা আনতে না পারলে কোনও লাভই নেই।”

টাকা নেই, সাফল্য নেই— যেন ‘নেই রাজ্যে’-র বাসিন্দা এখন শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগান। সেখানে ফেড কাপের শেষ ম্যাচে কিংশুক দেবনাথের গোলে কোনও মতে ১-০ লাজং এফসি-কে হারানোরও আর কোনও মূল্য নেই। ম্যাচের ফল নিয়ে কোনও উন্মাদনাই নেই বাগান তাঁবুতে উপস্থিত সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে। তবু বাগানের কার্যকরী কমিটির সদস্যরা নতুন করে আই লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নই বটে। গোয়ায় সোনি নর্ডি, পিয়ের বোয়ারা এখনও জানেন না, কবে শহরে ফিরবেন। কারণ তাঁদের কলকাতায় ফেরার বিমানের টিকিট এখনও পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতেও নাকি কোনও কর্তাই টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। সব মিলিয়ে গোয়া থেকে কলকাতা- বাগান যেমন ছন্নছাড়া ছিল, তেমনই রয়ে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন