ফিকরুকে ‘বাপি বাড়ি যা’ করে হাবাসের মিশন-কেরল

ফাইনালের দল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাওয়ার পর ফিকরু তেফেরা শুক্রবারই ইথিওপিয়ায় ফিরে যেতে চাইছেন। জিকোর গোয়াকে তাদের পাড়ায় গিয়ে হারানোর পর আটলেটিকো দে কলকাতা যখন উদ্বোধনী আইএসএল জয়ের স্বপ্নে বিভোর, তখন ফিকরু-কাঁটা সেখানে খচখচ করছে বেশ ভালই। অনেকটা এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনার মতো।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

রতন চক্রবর্তী শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

ফাইনালের দল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাওয়ার পর ফিকরু তেফেরা শুক্রবারই ইথিওপিয়ায় ফিরে যেতে চাইছেন।

Advertisement

জিকোর গোয়াকে তাদের পাড়ায় গিয়ে হারানোর পর আটলেটিকো দে কলকাতা যখন উদ্বোধনী আইএসএল জয়ের স্বপ্নে বিভোর, তখন ফিকরু-কাঁটা সেখানে খচখচ করছে বেশ ভালই। অনেকটা এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনার মতো। মেজাজি, একরোখা এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ হাবাস তাতে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে দলের এক নম্বর স্ট্রাইকারকে কলকাতায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে গোয়া ছেড়ে পৌঁছে গেলেন সচিন তেন্ডুলকরের শহরে। ভারতের আইকন ক্রিকেটারের ফুটবল টিম কেরল ব্লাস্টার্সকে বধ করতে। মনসুরুকে মিশন মুম্বইতে রাখা হলেও বিতর্কিত ফিকরুর জায়গা হয়নি হাবাসের স্কোয়াডে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিমের তারকা স্ট্রাইকারকে ফাইনালের আগে ‘বাপি বাড়ি যা’ করলেন কলকাতা কোচ!

গোয়ায় সেমিফাইনালের আগের দিন সকালে পৌঁছলেও দলের বোহেমিয়ান স্ট্রাইকারকে টিম হোটেলে ঢুকতেই দেননি হাবাস। কোচের রুদ্রমূর্তি দেখে কর্তারা হোসে ব্যারেটো, মনসুরুদের সঙ্গে ফিকরুকে পাঠিয়ে দেন অন্য হোটেলে। আজ সকালে উঠেই হাবাস কর্তাদের জানিয়ে দেন, ফিকরুকে আর প্রয়োজন নেই। ও চোট নিয়ে খেলতে পারবে না। ওকে কলকাতায় ফেরত পাঠিয়ে দিন। সে কথা কানে যাওয়ার পর আটলেটিকো সমর্থকদের মধ্যে লুই গার্সিয়ার চেয়েও জনপ্রিয় ফুটবলারটি ভয়ঙ্কর খেপে যান বলে খবর। চিত্‌কার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। টিমের সঙ্গে থাকা মালিক-কর্তাদের কাছে ফিকরু এর পরই দরবার করেন তাঁকে যখন আর খেলানোই হবে না তখন দেশে সদ্যোজাত পুত্রকে দেখতে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হোক। কোচ তা শুনে আরও রেগে যান।

Advertisement

গত তিন মাস নানা ভাবে টিম হোটেলে সমস্যা তৈরি করেছেন ফিকরু। মাঠ এবং মাঠের বাইরের নানা ঝামেলায় বারবার বিব্রত করেছেন পুরো টিমকে। হাবাস তাই এত খেপে রয়েছেন যে টিমকর্তাদের বলে দেন, “আমি টিম গেমে বিশ্বাসী। শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী। আমরা যদি চ্যাম্পিয়ন হই তা হলে কলকাতার সেলিব্রেশনে ফিকরুকে থাকতে হবে। কারণ দলের এখন পর্যন্ত যা সাফল্য তার পিছনে ওরও অবদান কিছু আছে।” ফলে ফিকরুকে নিয়ে কর্তারা পড়েছেন ফাঁপরে।

মুম্বইতে সন্ধ্যায় টিম নামার পর কোচ-ঘনিষ্ঠ এক কর্তা বললেন, “ওর সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে ফাইনালের পর দিন পর্যন্ত। কিন্তু ও যে সন্তানের ব্যাপারটা সামনে আনছে তাতে না-ও বলতে পারছি না। কারণ ফিকরু বলছে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা থাকা অবস্থাতেও খেলেছে। গোল করেছে। আবার কোচের কথাও অমান্য করতে পারছি না। ফিকরুর ‘টিয়ার ওয়ান’ চোট রয়েছে। ফাইনালে খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই। আপাতত ওকে কলকাতায় যেতে বলেছি। তার পর দেখি কী হয়।”

রাতে টিমের অন্যতম মালিক উত্‌সব পারেখ বলেন, “ও যদি শুক্রবার দেশে চলে যেতে চায় যাক। যা ইচ্ছে তাই করুক। ওকে তো আর খেলানো যাবে না। ওকে আমরা রিলিজ করে দিয়েছি।” ফিকরুর আচরণ দেখে ময়দানি ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা মজা করলেন, “এ তো আমাদের মোহনবাগানের ওডাফা ওকোলি!”

ফিকরু-বিদায় করার পর হাবাস ফাইনালেও স্প্যানিশ ফুটবলারদের উপরই ভরসা রাখতে শুরু করেছেন। এমনিতে ম্যাচ বা অনুশীলন ছাড়া বোরহা-অর্ণবদের ব্যাপারে খুব একটা নাক গলান না আটলেটিকো কোচ। কলকাতায় থাকেন অন্য হোটেলে। এখানে এক হোটেলে উঠলেও সারা দিন তিনি গার্সিয়া-হোফ্রে-কিংশুকদের ছুটি দিয়েছিলেন। নিজে অবশ্য ব্যস্ত ছিলেন কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি নিয়ে। সঙ্গে থাকা সহকারী কোচ এবং মার্কি ফুটবলার গার্সিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন। বলে দেন, “আরও একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে নামছি আমরা। দু’বার কেরলের সঙ্গে আমাদের খেলা হয়েছে। একবারও জিততে পারিনি। এ বার কিন্তু জিততেই হবে।”

টিমে কি বদল হবে, না একই টিম থাকবে তা নিয়ে এখনও আটলেটিকো কোচ ভাবেননি। তবে কলকাতার পক্ষে সুখবর, কোনও ফুটবলারের চোট বা কার্ড সমস্যা নেই। টিমের এক সিনিয়র ফুটবলার বললেন, “ফাইনালেও কোচ প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলবেন। তবে কাকে খেলাবেন বা কাকে খেলাবেন না সেটা উনিই ঠিক করবেন। কারও কথা শোনেন না। দেখলেন না, দলে কোনও পজিটিভ স্ট্রাইকার নেই তা সত্ত্বেও ফিকরুকে নামানোর চেষ্টাই করলেন না। বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন।”

আটলেটিকো পৌঁছনোর পরে মুম্বই পৌঁছে গেল ডেভিড জেমস-ট্রেভর মর্গ্যানের কেরল ব্লাস্টার্স। সন্দীপ নন্দী ছাড়া সবাই সুস্থ। কলকাতার সবচেয়ে ধারাবাহিক স্টপার অর্ণব মণ্ডল বলছিলেন, “কেরলের হিউম ছেলেটা গোল চেনে। মাঝমাঠে পিয়ারসন খুব ভাল খেলছে। ফাইনাল কঠিন তো হবেই।”

আবার পাল্টা সন্দীপ বলছেন, “ফিকরু ভাল স্ট্রাইকার। ও না খেললে আমাদের লাভ। কেরলে ও গোল করেছিল আমাদের বিরুদ্ধে।” কেরলের সবাই ধরে নিয়েছেন ফিকরু খেলবেন। তাদের কাছে গভীর রাত পর্যন্ত খবর নেই ফিকরুর ব্যাপারে!

যুবভারতীতে উদ্বোধনের মতোই মুম্বইয়ের সমাপ্তি অনুষ্ঠানকে জমকালো করতে নানা চমক দিতে চাইছেন সংগঠক আইএমজি-আর। সচিন বনাম সৌরভ—ফুটবল মাঠের লড়াই দেখতে সমম্ত টিম মালিককে ডাকা হয়েছে। ফলে অমিতাভ বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, হৃতিক রোশন, জন আব্রাহামের থাকার কথা অনুষ্ঠানে। শোনা যাচ্ছে, আমির খান-সহ আরও তারকা আসবেন। কলকাতা শিবির থেকে দাবি করা হয়েছে, মুম্বইতে যে সব টলিউড তারকা এখন শুটিং করতে আছেন তাঁরা সবাই উপস্থিত থাকবেন। কলকাতা থেকেও অনেকে আসতে চাইছেন বলে খবর। তবে এত টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তায় উত্‌সব পারেখরা।

দেশের সব ফুটবল অর্জুনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাকি আর কী হবে তা বলতে চাইছেন না সংগঠকরা। আইএসএলের দু’টো সেমিফাইনাল দেড় কোটি লোক দেখেছে বলে এ দিন নীতা অম্বানির সম্মানে ডিনার দিলেন মূল স্পনসররা। সেখানে ডাকা হয়েছিল সব দলের কর্তাদের। সৌরভ দাদাগিরির শুটিং আছে বলে কলকাতা ফিরে গিয়েছেন। মুম্বই আসবেন শনিবার। ফাইনালের দিন। টিম সূত্রের সে রকমই খবর।

ফাইনালে পৌঁছলেও হাবাসের আটলেটিকো কিন্তু গোয়ার বিরুদ্ধে দু’টো ম্যাচেই ‘দাদাগিরি’ দেখাতে পারেনি। দেখার, ফিকরুবিহীন আটলেটিকো শনিবার ডি ওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে কোন পথে হাঁটে? মাঠের দাদাগিরি না ড্র-এর ধারাবাহিক রাস্তায় (১৬ ম্যাচে ৯ ড্র) হেঁটে কপালের উপরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপরাটা ছেড়ে দেয় কি না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন