ত্রেজেগুয়ে কী করবেন পুণের অজানা

ফের গোল করে হৃতিকের মতো নাচতে চান ডুডু

হৃতিক রোশন এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে নিজের দলের জন্য গলা ফাটাবেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু দাভিদ ত্রেজেগুয়ে আইএসএলের ফিরতি ম্যাচে শনিবার লুই গার্সিয়াদের মুখোমুখি হবেন কি?

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

পুণে শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

বাসেল ম্যাচে রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স

হৃতিক রোশন এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে নিজের দলের জন্য গলা ফাটাবেন এটা নিশ্চিত।

Advertisement

কিন্তু দাভিদ ত্রেজেগুয়ে আইএসএলের ফিরতি ম্যাচে শনিবার লুই গার্সিয়াদের মুখোমুখি হবেন কি?

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তা নিয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি স্ট্রাইকার নিজেই। চব্বিশ ঘণ্টা এখানকার এক জেলা দলের বিরুদ্ধে অনুশীলন ম্যাচে কিছুক্ষণ খেলেন তিনি। তার পর আজ অনুশীলনেও আসেননি। এফসি পুণে সিটি কোচ ফ্র্যাঙ্কো কোলোম্বাকে তিনি নাকি বলে দিয়েছেন, রিহ্যাব করার জন্য হোটেলে থাকছেন। কোচ প্রাক্তন মহাতারকা ফুটবলারকে চটানোর ঝুঁকি নেননি। ত্রেজেগুয়ের মতো হাইপ্রোফাইল মার্কি ফুটবলারকে কে আর চটায়!

Advertisement

আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ আন্তোনিও হাবাস যেমন চটাচ্ছেন না তাঁর দলের মার্কি ফুটবলার গার্সিয়াকে! গার্সিয়ার ইচ্ছা এবং আচরণ ঘিরে টিমের মধ্যে সমস্যা তৈরি হওয়া সত্ত্বেও।

কিন্তু ত্রেজেগুয়ে কি সুস্থ? তিনি কি কলকাতার বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন? শহর থেকে অনেক দূরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক স্কুল মাঠে অনুশীলনের পর টিম বাসে উঠছিলেন পুণে কোচ। প্রশ্নটা করামাত্র তাঁর দেহরক্ষীরা বিদেশি কোচকে সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে গেল। সতীর্থ ফুটবলাররাও মেজাজি প্রাক্তন জুভেন্তাস তারকা সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

যুবভারতীর যে ম্যাচে পুণে হারিয়েছিল কলকাতাকে সেটায় খেলেননি ত্রেজেগুয়ে। আইএসএলে অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলবেন না, ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের সঙ্গে এ রকম চুক্তি থাকায় পুণেতেই থেকে গিয়েছিলেন। এ বার কী করবেন? অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, সেটা ত্রেজেগুয়ে নিজে ছাড়া কেউ জানেন না। তাঁর মর্জি-ই শেষ কথা।

ত্রেজেগুয়ে খেলুন বা না খেলুন ডুডু ওমেগবেমি কিন্তু তৈরি।

পুণে টিমটার ফর্মেশন যা তাতে ত্রেজেগুয়ে খেললে ডুডুর খেলার সম্ভাবনা নেই। ওয়ান স্ট্রাইকার ফর্মেশনের স্ট্র্যাটেজিতে যা হয় আর কী!

এ দিন প্রায় দু’ঘণ্টা অনুশীলনের পরেও দেখা গেল, ডুডু তখনও একাই গোলে বল মেরে চলেছেন। নাগাড়ে। যেটা গোল হচ্ছে নিজেই হাততালি দিচ্ছেন, যেটা হচ্ছে না মাথা চাপড়াচ্ছেন। অদ্ভুত গোল-খিদে! মনে হল ধরেই নিয়েছেন, ত্রেজেগুয়ে নয় তিনিই খেলবেন কলকাতার বিরুদ্ধে। ন্যাড়া মাথায় বরফ ঘষতে ঘষতে বলেও ফেললেন, “জানি না ত্রেজেগুয়ের খবর। আজ তো অনুশীলনেই আসেনি।”

ডুডু ইউরোপে খেলেছেন। আই এসএলেও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। কিছু দিন আগে কলকাতা লিগে ‘গোলমেশিন’ ছিলেন। হয়তো সে জন্যই ফুটবলজীবনের পড়ন্ত বিকেলের মহাতারকা ত্রেজেগুয়ের সঙ্গে দলে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে টক্কর দিতে তৈরি হচ্ছেন। “কোচ যদি আমার উপর আস্থা রাখেন, তা হলে আবার গোল করব। আবার কলকাতাকে হারাব।” একটু থেমে আরও যোগ করেন, “শনিবার যদি আবার গোল করতে পারি, মাঠেই নাচব। হৃতিক রোশনের মতো নাচব।”

আইএসএলে তাঁর খেলার কথা ছিল না। নিজেও খেলতে চাইছিলেন না। চেয়েছিলেন ছুটিতে ফিনল্যান্ডে গিয়ে নিজের ‘জরুরি’ কাজগুলো সারবেন। কিন্তু কিছুটা লাল-হলুদ কর্তাদের জোরাজুরিতে শেষমেশ আইএসএল খেলতে রাজি হয়ে যান ডুডু। আইএসএলে নিজেদের প্লেয়ার ছাড়া মানে যে সেই ক্লাবের ভাঁড়ারে কিছু টাকা আসা।

কিন্তু এ দিন ডুডু আবার যা ইঙ্গিত দিলেন, তাতে ফেড কাপে তাঁকে নাও দলে পেতে পারেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো। আপাতত বলা যায় অনিশ্চিত তিনি। “ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আমার কথা শুনতে চাইছেন না। আমার ফিনল্যান্ডে যাওয়া খুবই দরকার। পুণের পরপর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে। না হলে এখনই চলে যেতাম ছুটি নিয়ে। ভাবছি আইএসএল শেষ হলেই ফিনল্যান্ড যাব।”

কিন্তু কত দিনের জন্য? সামনেই তো ফেড কাপ? ভাঙলেন না নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। “কয়েক দিনের জন্যও হতে পারে। আবার কয়েক সপ্তাহও। কয়েক মাসও হতে পারে। তার মধ্যে ফেড কাপ পড়লে কিছু করার নেই। আমি তো কবে থেকে বলছি।” মনে হল ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের উপর যে কোনও কারণেই হোক বিরক্ত তিনি।

আইএসএল সংগঠকরা এ দিন জানালেন, ইতিমধ্যেই দশ লাখ দর্শক মাঠে এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। তাঁদের দাবি, ফুটবলবিশ্বে বুন্দেশলিগা, প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগার পর মাঠে দর্শক উপস্থিতির বিচারে চারে আইএসএল। পুণেতে আই লিগের টিম রয়েছে অনেক দিন। করিম বেঞ্চারিফার পুণে এফসি আলোড়ন তুলতে না পারলেও, এফসি পুণে সিটি ঘিরে কিন্তু উন্মাদনার স্রোত। রাস্তায় হোর্ডিং, ব্যানার ঝুলছে ত্রেজেগুয়ে-ডুডুর সঙ্গে প্রীতম কোটাল, মেহেরাজউদ্দিনের নিয়ে। অনুশীলনের পর প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলেও সইশিকারিদের ভিড়। পুণে কোচ একঝাঁক স্কুল ছাত্রের ছবি তোলার আবদার মিটিয়ে বলছিলেন, “এটা দেখে খুব ভাল লাগছে। আগ্রহ বাড়ছে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে।”

শেষ চারে যাওয়ার জন্য সমর্থকদের এই আগ্রহই বাড়তি মোটিভেশন কি না সেটা অবশ্য বলেননি কোলোম্বা। তবে পুণে-কলকাতা লড়াই বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে নর্থইস্টের কাছে চেন্নাইয়ান এফসি হেরে যাওয়ায়। পরিস্থিতি যা, ডুডুদের হারাতে পারলেই আবার পয়েন্ট টেবিলে এক নম্বরে উঠে আসবে হাবাস-ব্রিগেড। এ দিন বেশি রাতে যাঁরা পৌঁছল পুণেতে।

ত্রেজেগুয়ে-ডুডু আর আর্সেনালে খেলা পেনান্টকে আটকানোর জন্য কলকাতায় গত ক’দিন অনুশীলনে রক্ষণ সংগঠনের উপর জোর দিয়েছেন হাবাস। পুণের কাছে আবার এই ম্যাচটা শেষ চারে যাওয়ার জন্য ডু-অর-ডাই। তাদের অনুশীলনে আবার আক্রমণের উপর জোর দিচ্ছেন কোচ।

হাবাস বনাম কোলোম্বার আটচল্লিশ ঘণ্টা ব্যবধানের সকাল আর বিকেলের প্রস্তুতি বোঝাল, ছত্রপতি শিবাজির নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে ধুন্ধুমার যুদ্ধের অপেক্ষায় থাকা যেতেই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন