সুপ্রিম কোর্টে নাকচ শ্রীনিবাসনের ফেরার আবেদন

বুকিদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল, স্বীকার গাওস্করের

এ বারের আইপিএল লোকে শুধু ক্রিকেটের জন্য মনে রাখবে, এমন দাবি করলেও ভারপ্রাপ্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট সুনীল গাওস্কর কিন্তু স্বীকার করে নিলেন, আইপিএল সেভেনকেও পুরোপুরি বুকিদের থেকে দূরে রাখা গেল না। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার অফিসার থাকা সত্ত্বেও আইপিএল চলাকালীন অন্তত দু’জন ক্রিকেটার যে বুকিদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন, তা স্বীকার করে নিলেন গাওস্কর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

এ বারের আইপিএল লোকে শুধু ক্রিকেটের জন্য মনে রাখবে, এমন দাবি করলেও ভারপ্রাপ্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট সুনীল গাওস্কর কিন্তু স্বীকার করে নিলেন, আইপিএল সেভেনকেও পুরোপুরি বুকিদের থেকে দূরে রাখা গেল না। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার অফিসার থাকা সত্ত্বেও আইপিএল চলাকালীন অন্তত দু’জন ক্রিকেটার যে বুকিদের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন, তা স্বীকার করে নিলেন গাওস্কর।

Advertisement

এমন সময়ে এই স্বীকারোক্তি, যখন প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনকে আইপিএলে স্পট ফিক্সিং নিয়ে তদন্তের জন্যই আদালতের নির্দেশে বোর্ডের কাজকর্ম শিকেয় তুলে বসে থাকতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় গাওস্কররা যখন বৈঠকে ব্যস্ত, তখন সুপ্রিম কোর্টে তাঁর বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার আবেদন খারিজ হয়ে গেল। অর্থাৎ আইসিসি-তে যাওয়ার যে সেতু ফিরে পেতে চেয়েছিলেন শ্রীনি, তাও আপাতত পাচ্ছেন না। বিচারপতি বলবীর সিংহ চহ্বাণ এ দিন সাফ জানিয়ে দিলেন, যাঁদের এজলাস শ্রীনিকে সরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে, সেই এজলাসেই ফের আবেদন জানাতে।

এ দিকে আবার মঙ্গলবার চেন্নাইয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভা ডেকে বসে আছেন শ্রীনিবাসন। এখন এই সভাই বা কী করে ডাকতে পারেন তিনি, এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি শ্রীনিকে আইসিসি-র সর্বোচ্চ পদে বসতে দেওয়া হয়, তা হলে আইসিসি-র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করবেন বলেও হুমকি দিলেন বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা। এই বক্তব্য জানিয়ে আইসিসি চিফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসনকে চিঠিও পাঠালেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের এক নামী হোটেলে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক সেরে সাংবাদিক বৈঠকে ‘আনন্দবাজার’-এর প্রশ্নের উত্তরে শ্রীনির অস্বস্তি বাড়িয়ে গাওস্কর বলেন, “এটা ঠিকই যে, জনা দুয়েক ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা দু’টি ঘটনার কথাই দুর্নীতিদমন বিভাগের (এসিইউ) অফিসারদের জানিয়েছি। ওঁরাই এখন দেখছেন ব্যাপারটা।”

Advertisement

দুবাইয়ে কেকেআরের পেসার মর্নি মর্কেলের কাছে নাকি এক সন্দেহজনক ব্যক্তি এসে কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন? এসিইউ-কে ব্যাপারটা তিনি জানিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। দুবাইয়ে রাজস্থান রয়্যালসের টিম হোটেলে এক সন্দেহজনক মহিলা জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন, এমন খবরও পাওয়া যায়। এই দুই ঘটনার কথাই বলতে চেয়েছেন কি না, তা অবশ্য এ দিন জানাননি গাওস্কর।

নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালামের সাক্ষ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা যে তাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে, তা জানিয়ে গাওস্কর এ দিন বলেন, “এসিএসইউ-এর কাছে ক্রিকেটাররা সাক্ষ্য দেয় এই ভেবে যে, তাদের কথা বাইরে বেরোবে না। কিন্তু তা-ই হচ্ছে। এটা চিন্তার বিষয়। তবে আমি নিশ্চিত আইপিএল থেকে কোনও কিছু ফাঁস হয়নি।” এ বার আইপিএলে বুকিদের ছায়া থেকে ক্রিকেটারদের আগলে রাখার জন্য প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে একজন করে দুর্নীতি দমন অফিসার নিয়োগ করা হয়েছিল, তাতে কাজ হয়েছে বলে জানান আইপিএলের জন্য ভারপ্রাপ্ত বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তাঁর বক্তব্য, “তেমন কিছু ঘটলে তা জানানোর কোনও অসুবিধা ছিল না ক্রিকেটারদের। আগে সবাইকে একটা নম্বর দেওয়া থাকত। কিন্তু সেই নম্বরে ফোন করলে যদি তার নম্বর তদন্তকারীদের খাতায় উঠে যায়, এই ভয় অনেকেই পেত। এ বার যা হয়নি।” তা সত্ত্বেও যে বুকিদের রোখা যায়নি, তা সুনীল গাওস্করের এ দিনের স্বীকারোক্তিতেই স্পষ্ট। বারবার আইপিএল-কে ‘ক্লিন’ বলে আসা শ্রীনিবাসনের পক্ষে যা মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়।

বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল ও যুগ্ম সচিব অনুরাগ ঠাকুরকে ছাড়াই এ দিন কাউন্সিল বৈঠকে আলোচনা হয় আইপিএল ফাইনাল নিয়েও। ফাইনাল যে বেঙ্গালুরুতেই হচ্ছে, এই খবর দিয়ে এ দিন চেয়ারম্যান রঞ্জীব বিসওয়াল নতুন যুক্তি দেন, “আমরা ক্রিকেটকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাই বলেই মুম্বই থেকে ফাইনাল সরানো হয়েছে। ওখানে রাতে বাজি পোড়ানো যাবে না, লাউডস্পিকার বাজানো যাবে না, এটা একমাত্র কারণ নয়।” তার আগেই অবশ্য গাওস্কর আবার বলেন, “এমসিএ এখন পর্যন্ত বাজি পোড়ানো ও লাউডস্পিকার বাজানোর ব্যাপারে পুলিশের অনুমতিপত্র পেশ করতে পারেনি বলেই ওখানে ফাইনাল করা যাচ্ছে না।” মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য এই ব্যাপারে চুপচাপ। ভাইস প্রেসিডেন্ট রবি সবন্ত জার্মানিতে। প্রেসিডেন্ট শরদ পওয়ারও রাজনীতিতে ব্যস্ত। তাই তাদের হয়ে এখন কিছু বলার বা করার কেউই নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন