বাংলার মাথায় এখন অবনমন বাঁচানোর চিন্তা

দিনের শেষ বলটা হতেই বাউন্ডারির পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় গোটা বাংলা দল। অপরাজিত ঋদ্ধিমান সাহা (৩৯) আর শ্রীবত্‌স গোস্বামীকে (২৮) অভিনন্দন জানাতে! স্কোরবোর্ডে তখন বাংলার দ্বিতীয় ইনিংসে রান ১৮৭-৫। কিন্তু টার্গেট ছ’পয়েন্ট তো দূরের কথা, তিন পয়েন্টও তো এল না। কোয়ার্টার ফাইনাল যাওয়ার আশা প্রায় শেষ। তা সত্ত্বেও কীসের অভিনন্দন! এক সময় ৮৫-৩ হয়ে যাওয়া অবস্থা থেকে হার বাঁচানোর জন্য?

Advertisement

শমীক সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
Share:

বাংলা এখন এ ভাবেই বাঁচার লড়াই লড়ছে। শনিবার ইডেনে ঋদ্ধিমান সাহা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

আঁধার কাটল না শনিবারের বারবেলাতেও। বরং বাংলার ক্রিকেটে আলোটুকু ক্রমশ নিষ্প্রভ হওয়ার দিকে।

Advertisement

দৃশ্য এক

Advertisement

দিনের শেষ বলটা হতেই বাউন্ডারির পাশে দাঁড়িয়ে প্রায় গোটা বাংলা দল। অপরাজিত ঋদ্ধিমান সাহা (৩৯) আর শ্রীবত্‌স গোস্বামীকে (২৮) অভিনন্দন জানাতে! স্কোরবোর্ডে তখন বাংলার দ্বিতীয় ইনিংসে রান ১৮৭-৫। কিন্তু টার্গেট ছ’পয়েন্ট তো দূরের কথা, তিন পয়েন্টও তো এল না। কোয়ার্টার ফাইনাল যাওয়ার আশা প্রায় শেষ। তা সত্ত্বেও কীসের অভিনন্দন! এক সময় ৮৫-৩ হয়ে যাওয়া অবস্থা থেকে হার বাঁচানোর জন্য?

দৃশ্য দুই

ড্রেসিংরুম থেকে টিম বাসে ওঠার মুখে রেলওয়েজের অধিনায়ক মহেশ রাওয়াত বলে গেলেন, “যত দ্রুত সম্ভব কাল সকালে বাংলাকে অলআউট করতে হবে। আমরা ২১০-২২০ রানের টার্গেট আশা করছি।” আর যদি বাংলা তিনশোর কাছাকাছি রান তুলে দেয়? কিছুটা বিরক্ত হয়েই রেলওয়েজ ক্যাপ্টেন বলে দেন, “আমাদের বোলিং এত দুর্বল নয় যে বাংলা এখান থেকে এত রান তুলে দেবে। আমরা ছ’পয়েন্টের লক্ষ্যে ঝাঁপাব, ড্র করার জন্য নয়।”

দুটো দৃশ্যেই পরিষ্কার রঞ্জির কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার মহাযুদ্ধের শেষ দিনের লড়াইয়ে নামার আগে দুই শিবিরের মানসিকতা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে। বাংলার কোচ অশোক মলহোত্রের কথায় যেটা আরও পরিষ্কার হবে, “ছ’পয়েন্ট তুলতে গিয়ে আমরা এক পয়েন্ট খোয়াতে চাই না।” কিন্তু তাতে তো লক্ষ্মীদের শেষ আটে যাওয়ার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটবে। তা হলে? মানেটা পরিষ্কার। বাংলার সামনে এখন কোয়ার্টার ফাইনাল নয়, লক্ষ্য কোনও রকমে অবনমন বাঁচানোটাই। যেখানে ম্যাচ ড্র করে এক পয়েন্ট পেলে কিছুটা নিশ্চিন্ত লক্ষ্মীরা (ছ’ম্যাচে এগারো)। তাতেও যে অবনমন এড়ানো যাবে তা নিশ্চিত নয়। মনোজ তিওয়ারিদের চাপে রাখছে উত্তরপ্রদেশ (ছ’ম্যাচে আট), মুম্বই (ছ’ম্যাচে এগারো) আর জম্মু-কাশ্মীর (আট ম্যাচে বারো)।

প্রশ্ন উঠছে ঘরের মাঠে ঘূর্ণি উইকেটে তিন স্পিনারের সামনে ফেলে রেলকে দুরমুশ করার পরিকল্পনার এই অবস্থা কেন? যেখানে চাপ এতটাই যে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া পর্যন্ত বেশ কয়েক বার ফোন করে টিমের স্কোর কী খোঁজ নিচ্ছেন। অথচ এ দিন খেলা শুরুর পর দিনের শেষে এই পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটা কিন্তু বোঝা যায়নি।

চার উইকেট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে লিড নিতে আরও ৪৯ রান করার লক্ষ্যে নেমেছিল রেল। সৌরাশিস লাহিড়ী (৫-৯৯), অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় (২-৭৩) তিন উইকেট তুলে নিয়ে রেলকে ২৬৫-৯ অবস্থায় এনে চাপেও ফেলে দিয়েছিলেন। তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করতে তখন আর চার রান বাকি রেলের। হাতে মাত্র এক উইকেট। গত বারের রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে ইডেনে একই পরিস্থিতিতে বাংলাকে তিন পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন অশোক দিন্দা। এ বার সেই সুযোগই পেলেন না বাংলার সেরা পেসার। অধিনায়ক লক্ষ্মী তখন কেন নতুন বল নিয়ে দিন্দার হাতে বল তুলে দিলেন না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বরং এলেন ফর্মহীন ইরেশ। যাঁর প্রথম বলই লং অফের উপর দিয়ে সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে অনুরীত সিংহ বাংলার তিন পয়েন্টের স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন। শেষ উইকেটটা সেই দিন্দাই নিলেন নতুন বল নিয়ে। ততক্ষণে বাংলার লড়াই শেষ। বরং আরও ৩৪ রানের ব্যবধান বাড়িয়ে নিল রেলওয়েজের শেষ জুটি।

শুধু পরিকল্পনার অভাব? ম্যাচ জেতার তাগিদও যেন উধাও বাংলার ব্যাটিংয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা শিকেয় তুলে দিয়ে অরিন্দম ‘ডন’ দাস ৩৮ রান করলেন ‘মাত্র’ ১১৪ বলে। ৬৭ ওভার ব্যাট করে বাংলা দিনের শেষে ২.৭৯-এর গড়ে ১৮৭। তাও আবার মনোজ, লক্ষ্মী-সহ পাঁচ ব্যাটসম্যান ‘ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন’।

ইতিবাচক মানসিকতা। এই দুই শব্দও এখন বাংলা শিবিরে অমিল। শেষ দিন এক পয়েন্টের লড়াইয়ে নামার মানসিকতাতেই যা পরিষ্কার। বাংলা দলে ব্রাত্য বাঙালি রেলের অর্ণব গোস্বামী সেটা আঁচ করেই হয়তো ছেলে অরিনকে কোলে নিয়ে ইডেন ছাড়ার আগে মোক্ষম খোঁচাটা দিয়ে গেলেন, “ম্যাচ কিন্তু এখনও আমাদের হাতে।”

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ২৬৮ ও ১৮৭-৫ (ঋদ্ধিমান ৩৯ ব্যাটিং, অর্ণব ২-২৫)
রেলওয়েজ ৩০২ (মহেশ ৭১, সৌরাশিস ৫-৯৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন