সাবধান এবি আসছে: ব্যাটিংয়ের এবিসিডি পাল্টে দিচ্ছেন এবিডি

বিশ্বকাপের আগে বিশ্ব জুড়ে এবি আতঙ্ক

ডক্টর আব্রাহাম পি ডে’ভিলিয়ার্স জন্ম দেওয়ার সময় নিঃসন্দেহে জানতেন না যে, তাঁর পুত্রসন্তানের ডিনএনএ পরীক্ষার দাবি এত বার উঠবে! বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বে সাফল্যের আদ্যক্ষর হিসেবে ‘এবিডি’ ব্যবহৃত হচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানও বলে দিয়েছিলেন, ক্রিকেট-পৃথিবীর সেরা কোহিনুর এখন তিনি আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্স।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জোহানেসবার্গ শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০১
Share:

৪৪ বলে ১৪৯, ১৬x৬, ৯x৪

ডক্টর আব্রাহাম পি ডে’ভিলিয়ার্স জন্ম দেওয়ার সময় নিঃসন্দেহে জানতেন না যে, তাঁর পুত্রসন্তানের ডিনএনএ পরীক্ষার দাবি এত বার উঠবে!

Advertisement

বর্তমান ক্রিকেটবিশ্বে সাফল্যের আদ্যক্ষর হিসেবে ‘এবিডি’ ব্যবহৃত হচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানও বলে দিয়েছিলেন, ক্রিকেট-পৃথিবীর সেরা কোহিনুর এখন তিনি আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্স। বিরাট কোহলির উত্থানকে খেয়ালে রেখেও বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারের তাজ এবি-র মাথাতেই তুলে দিয়েছিল ক্রিকেটবিশ্বের একাংশ। বলত, তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেট তিন রকম ভাবে খেলার ঐশ্বরিক ক্ষমতা একমাত্র ওঁরই আছে, এবি ডে’ভিলিয়ার্সের আছে।

রবিবার বাকি ক্রিকেটবিশ্ব দেখল, সেরা ক্রিকেটারের তাজ কার মাথায় বেশি মানায়। গিলি তিনিও নিশ্চয়ই অলক্ষ্যে একচোট হেসে নিলেন।

Advertisement

৩১ বলে সেঞ্চুরি এল যে!

১৬ ছক্কা, ৯ বাউন্ডারির যে ইনিংসটা দক্ষিণ আফ্রিকার নিউ ওয়ান্ডার্স স্টেডিয়ামে ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ আছড়ে পড়ল, তাকে ইনিংস বলা ঘোরতর অন্যায় হবে। ওটা ঝড়, সুপার-টর্নেডো। ভিভের দেশের বোলিংকে যা মাত্র এগারো ওভারে গুঁড়িয়ে দিল। খড়কুটোর মতো নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসনের রেকর্ডকে উড়িয়ে দিল ক্রিকেট-ইতিহাসের পাতা থেকে। আজকের পর ওয়ান ডে-তে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিকানায় এবি এক, কোরি দুই। কোরি ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন, ডে’ভিলিয়ার্স নিলেন মোটে ৩১ বল! সনত্‌ জয়সূর্য অন্য গোলার্ধের এক প্রাক্তন ক্রিকেট-নায়কও নিজের রেকর্ডটা বাঁচাতে পারলেন না। রবিবারের পর তাঁর দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিকানাও পাল্টে গেল। ১৭ বল লেগেছিল জয়সূর্যের। ডে’ভিলিয়ার্সের লাগল একটা বল কম। শেষ পর্যন্ত থামলেন তিনি ১৪৯ করে, মাত্র ৪৪ বলে, একজোড়া রেকর্ড এক ঘণ্টার মধ্যে চূর্ণ করে।

ডিএনএ পরীক্ষার দাবি এর পরেও ফের না উঠলে আর কবে উঠবে?

ক্রিকেটবিশ্ব এক দিকে যেমন মন্ত্রমুগ্ধ, আর এক দিকে আতঙ্কিত। আতঙ্কিত কারণ, আর ছাব্বিশ দিন পরেই বিশ্বকাপ। তার আগে এমন ফর্মে এবি থাকা মানে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রুপে বাকিদের দফারফার সম্ভাবনা। মিচেল স্টার্ক যেমন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। মেলবোর্নে ভারতকে হারিয়ে উঠে বলে দিয়েছেন, “শুনে বেশ মজাই লাগছে। দলের অনেকেই এটা নিয়ে আলোচনা করছে। তবে বিশ্বকাপের ড্রয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের গ্রুপে পড়েনি। তাই আমাদের চিন্তার কিছু নেই!” অস্ট্রেলিয়া পড়েনি, কিন্তু ভারত পড়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নে এবি-র দক্ষিণ আফ্রিকার মুখে পড়তে হবে ভেবে দুঃখ করে এক ভারতীয় সমর্থক টুইট করেছেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোনও দিনই হারাতে পারিনি। তার উপর আবার ডে’ভিলিয়ার্সকে সামলাতে হবে। বাবা রে!’ এবিকে নিয়ে চিন্তার ছবি এটা হলে কুর্নিশেরটা অনেক বেশি বর্ণময়। প্রায় দু’দশক ধরে ওয়ান ডে-তে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল যাঁর, সেই শাহিদ আফ্রিদি বলে দিয়েছেন, “দারুণ খেলেছ বন্ধু। নতুন বছরের শুভেচ্ছা নিও।” রাহুল দ্রাবিড় টেনশনে, ক্রিকেটের নিয়মকানুনই না পাল্টে যায় এর পর! বলেওছেন সেটা। অনিল কুম্বলেরও একই অবস্থা, “অবিশ্বাস্য! অনবদ্য ব্যাটিং। বিশ্বের দ্রুততম সেঞ্চুরি করার জন্য অভিনন্দন ডেভিলিয়ার্সকে।” ডিন জোন্স এমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না যে ভবিষ্যতে ডে’ভিলিয়ার্সের রেকর্ড ভাঙতে পারবে বলে। মাইকেল ভন বলে দিয়েছেন, “বলতেই হবে ক্রিকেট জিনিয়াস কাকে বলে তার সবচেয়ে ভাল সংজ্ঞা ডেভিলিয়ার্সই।” সেরা মন্তব্য বোধহয় প্রাক্তন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আজহার মেহমুদের“আমরা হাইলাইটস দেখছি না তো!”


মারমুখী। জোহানেসবার্গে ডে’ভিলিয়ার্স। রবিবার। ছবি: গেটি ইমেজেস

ক্যারিবিয়ানরা হাড়ে-হাড়ে টের পেলেন ধ্বংসের ‘হাইলাইটস’ মাঠে দাঁড়িয়ে গিলতে কেমন লাগে। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট ছাড়াও নানা খেলাধুলোতে একই রকম দাপুটে ছিলেন এবি। জাতীয় হকি ও ফুটবল টিমে তাঁর নাম উঠেছিল। দেশের জুনিয়র রাগবি টিমের অধিনায়ক ছিলেন। জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটারের দ্রুততম, জুনিয়র ডেভিস কাপ দলের সদস্য, অনূর্ধ্ব উনিশ ব্যাডমমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, স্কুল সাঁতারে ছ’টা রেকর্ড তিরিশ বছরের ‘জিনিয়াসের’ জীবনে মণিমানিক্য কম কিছু নেই। ভাগ্য ক্রিকেটের, শেষ পর্যন্ত বাইশ গজকেই জীবনে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবি। এ দিন প্রোটিয়াদের দুই ওপেনার হাসিম আমলা (১৫৩ ন.আ) আর রিলি রসোউ (১২৮) এর সেঞ্চুরির দাপটে প্রথমে রেকর্ড ২৪৭ রান উঠেছিল। তার পরই নামেন ডে’ভিলিয়ার্স আর ক্যারিবিয়ানদের দফারফা। আমলার সঙ্গে মাত্র ৫৭ বলে ১৯২ রানে পার্টনারশিপ করে যান ডে’ভিলিয়ার্স! ২০০৬-এ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৪৩৮ রানের রেকর্ড ভেঙে ৪৩৯-২ রানের পাহাড়েও পৌঁছে যায় প্রোটিয়ারা। যা ওয়ান ডে-তে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ ইনিংস। মাত্র চার রানের জন্য ছোঁয়া গেল না শ্রীলঙ্কার ওয়ান ডে-তে ৪৪৩ রানের বিশ্বরেকর্ড। ম্যাচ যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল ১৪৮ রানে, সিরিজ করে রাখল ২-০।

যে জয় স্মরণীয়। যেমন স্মরণীয় মাঠের একটা ফ্রেমও। ক্রিকেট-ম্যানুয়াল দুমড়ে-মুচড়ে এবি যখন ফিরছেন, তখনই দেখা যায় ক্রিস গেইল দু’হাত আর মাথা ঝুঁকিয়ে ডে’ভিলিয়ার্সকে সম্মান জানাচ্ছেন। এক জিনিয়াস কুর্নিশ করছে আর এক জিনিয়াসকে। ক্রিকেটের ‘হল অব ফেমে’ যে ছবিটা অনায়াসে রেখে দেওয়া যেতে পারে। তলায় হয়তো লিখে ফেলা যেতে পারে একটা লাইন।

১৮ জানুয়ারি, ২০১৫-র পর ব্যাটসম্যানের ব্যাখ্যা হয় তিন ভাবে। ভাল, খুব ভাল, আর ডে’ভিলিয়ার্স!

বিধ্বংসী

• ৩১ বলে সেঞ্চুরি। ভাঙলেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসনের বিশ্বরেকর্ড (৩৬ বল)।

• ১৬ বলে হাফসেঞ্চুরি। টপকালেন সনত্‌ জয়সূর্যের বিশ্বরেকর্ড (১৭ বল)।

• ১৬ ছক্কা। ছুঁলেন দু’বছর আগে রোহিত শর্মার (২০৯) ওয়ান ডে-তে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ওভার বাউন্ডারির রেকর্ড।

• ৪০ মিনিট। পৌঁছন সেঞ্চুরিতে। ১৯ মিনিট নেন হাফসেঞ্চুরি করতে।

• ৩৩৯ স্ট্রাইক রেট। ১৪৯ রানের ইনিংসের। একশোর বেশি রানের ইনিংসে তিনশোর বেশি স্ট্রাইক রেট তোলা তিনিই প্রথম ক্রিকেটার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন