আটলেটিকোর ভুলে লা ডেসিমা রিয়ালের

বিশ্বকাপ শুরুর আগে রোনাল্ডোকে কিন্তু ফিট মনে হল না

ম্যাচ রিপোর্ট শুরু করতে গিয়ে সাতাত্তরে কসমসের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রয়াত শৈলেন মান্নার একটা কথা মনে পড়ে গেল। ওই ম্যাচের তিন দিন আগে মান্নাদা বলেছিলেন, তারকাদের বিরুদ্ধে বেমক্কা ট্যাকলে গিয়ে অযথা শক্তিক্ষয় না করতে। ট্যাকল করো স্কোরিং জোনে। না হলে, আমাদের ক্লান্তিতে শক্তিশালী বিপক্ষের সুবিধা।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

ইনজুরি টাইমে হেডে গোল শোধ র‌্যামোসের।

আটলেটিকো মাদ্রিদ-১ (গডিন) : রিয়াল মাদ্রিদ-৪ (র‌্যামোস, বেল, মার্সেলো, রোনাল্ডো)

Advertisement

ম্যাচ রিপোর্ট শুরু করতে গিয়ে সাতাত্তরে কসমসের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রয়াত শৈলেন মান্নার একটা কথা মনে পড়ে গেল। ওই ম্যাচের তিন দিন আগে মান্নাদা বলেছিলেন, তারকাদের বিরুদ্ধে বেমক্কা ট্যাকলে গিয়ে অযথা শক্তিক্ষয় না করতে। ট্যাকল করো স্কোরিং জোনে। না হলে, আমাদের ক্লান্তিতে শক্তিশালী বিপক্ষের সুবিধা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে শনিবার রাতে ঠিক এই কারণেই বিরানব্বই মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ইউরোপ সেরা হওয়া হল না দিয়েগো সিমিওনের আটলেটিকোর। চতুর আন্সেলোত্তি ঠিক এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই রিয়ালকে এনে দিলেন বহু আকাঙ্ক্ষিত দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ লা ডেসিমা।

Advertisement

আন্সেলোত্তির মতো পোড় খাওয়া কোচ দিয়েগো সিমিওনে নন। তেমনই বেল, রোনাল্ডো, দি’মারিয়ার মতো তারকাও নেই আটলেটিকোতে। তুরান ছিল না। কোস্তা চোটে কাবু। প্রিভিউতে তাই লিখেছিলাম, মিডল করিডরে শাটার টেনে ধাক্কাধাক্কির প্রেসিং ফুটবলটা খেলবে আটলেটিকো। ৪-৪-২ ছকে কোকে আর গাবিকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে রেখে সেটাই করছিল সিমিওনের ছেলেরা। সর্বশক্তি দিয়ে রোনাল্ডো-বেঞ্জিমাদের বিরুদ্ধে মিডল থার্ডে প্রচুর ট্যাকল আর ধাক্কাধাক্কি। কিন্তু ওই জায়গাটা তো স্কোরিং জোন নয়। তাই খেলার বয়স বাড়তেই ক্লান্তি গ্রাস করল আটলেটিকোকে। র্যামোস যখন তিরানব্বই মিনিটে হেডে গোল করে সমতা ফেরাচ্ছে তখন ওকে ধরার জোশটাই চলে গিয়েছিল কোকেদের। ওখান থেকেই ম্যাচে হারিয়ে গেল ওরা। তার আগে প্রথমার্ধে খেদিরার ক্ষণিকের ভুলে গডিনের হেড থেকে হওয়া গোলে পিছিয়েও আন্সেলোত্তি খেলার ধরন বদলাননি। ফেলিপে লুইস এই সময় গ্যারেথ বেলকে প্রায় বোতলবন্দি করে রেখেছিল।

আন্সেলোত্তি যেন অপেক্ষা করছিলেন বিপক্ষের ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত। যখন সেটা নিশ্চিত হল, ঠিক তখনই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ফ্লপ খেদিরার জায়গায় ইস্কো আর লেফট ব্যাক কোয়েন্ত্রাওকে তুলে নামালেন ব্রাজিলীয় মার্সেলোকে। কিছুক্ষণ পরে বেঞ্জিমার জায়গায় মোরাতা। এতে রিয়ালের গতি বাড়তেই অ্যান্টিসিপেশন এবং ট্যাকলে ভুলচুক শুরু আটলেটিকোর। আর ফেলিপে লুইস উঠে যেতেই সংহারক মূর্তি র্যামোসদের। মার্সেলো-দি’মারিয়া জোড়া ফলা দৌড়ে আরও ক্লান্ত করে দিল আটলেটিকো রক্ষণের ডান দিকটা। মার্সেলোকে দেখে একেক সময় রবার্তো কার্লোসের কথা মনে পড়ছিল। ওর গোলটার সময়ও ক্লান্তির জন্যই আটলেটিকো ডিফেন্স সহজে কেটে গেল।

রেফারির উপর ক্ষিপ্ত আটলেটিকো কোচের মাঠে ঢুকে পড়া।

তবে সিমিওনেকে কোচ হিসেবে খাটো করা যাবে না। বরং বলব, ওঁর জন্যই তরুণ ব্রিগেড নিয়ে আটলেটিকো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। লা-লিগায় চ্যাম্পিয়ন। কেবল আবেগ সংযত করতে হবে ওঁকে। ফাইনালে যেখানে টেক্কা দিয়ে হারতে বসা ম্যাচটা ৪-১ জিতে নিলেন আন্সেলোত্তি। এটা বাদ দিলে সিমিওনের কাউন্টার অ্যাটাক সমৃদ্ধ প্রেসিং ফুটবলের প্রশংসা করতেই হবে।

এই ফাইনাল দেখাল বিশ্বকাপের আগে পুরোপুরি ফিট নয় দিয়েগো কোস্তা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কোস্তা তো হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ন’মিনিটের মধ্যে বসে গিয়ে পরিবর্তনের অপশন একটা কমিয়ে দিল। যা সিমিওনে দলের ক্লান্তি তাড়াতে ব্যবহার করতে পারতেন।

আর রোনাল্ডো! শেষ বেলায় পেনাল্টি থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেকর্ড ১৭ গোল করে বালোতেলির স্টাইলে পোজ দিল বটে, কিন্তু ব্যালন ডি’অর বিজেতার সেই খেলা কোথায়? বল ধরলেই তিন জন তাড়া করছে দেখে হোল্ড করছিল না। চেনা ড্রিবল, হেড, শট কিছুই নেই। একটা বাদে সেই বিখ্যাত ফ্রিকিকও নিখুঁত নয়। মনে হল চোট এখনও রয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ঝুঁকি নিতে চাইল না।

আর সবশেষে এক জনের কথা বলতেই হবে। গ্যারেথ বেল। ২০১৩-১৪ মরসুমে যে দু’জনকে নিয়ে মাতামাতি হয়েছে তারা হল বেল আর নেইমার। ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকারকে কিন্তু ক্লাব লেভেলে টেক্কা দিয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ বেল। চোট নিয়ে গোটা মরসুমে ২২ গোল। আরও ১২ গোল হয়েছে ওর বাড়ানো পাস থেকে। কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে গোল করে জিতিয়েছিল। শনিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ওর গোলের পরেই আশ্বস্ত হয়ে আকাশে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়লেন আন্সেলোত্তি।

ম্যাচের আগে সিমিওনে বলেছিলেন, অর্থ দিয়ে জগতে সব কিছু কেনা যায় না। আমি বলব, বেল তো কেনা যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন