প্রতিপক্ষ। টিম হোটেলে হঠাৎ দেখা পাঠান ভাইদের। ছবি: রাজীব ঘোষ।
বাইপাসের ধারে টিম হোটেলের মাঝখানে খোলা আকাশের নীচে যে সবুজ লন, সেখানে এসে বসে পড়লেন দু’ভাই। দু’জনেরই হাতে দুধ-চা। তা-ও আবার গ্লাসে এবং ‘মালাই মারকে’! কোনও পাঁচতারা হোটেলে এমন দৃশ্য বিরল।
বর্তমানে আড়াই কোটির বাংলোর মালিক ইরফান ও ইউসুফ পাঠান তখন মান্ডভির কিশোরবেলার সেই দিনগুলো ফেরানোর মুডে। বডোদরার জামা মসজিদের পিছনের মাঠে বসে তো এ ভাবেই চা খেতে খেতে আড্ডা মারতেন। নাইট অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর মিনিট দুয়েকের জন্য সেই আড্ডায় ঢুকেও বেরিয়ে এলেন। পারিবারিক আড্ডায় তাঁর কাজ কী? এই ভেবেই বোধহয়। কফি শপেও এক টেবিলে বসে একপ্রস্ত গল্পগুজব হল দুই পাঠানের। এমন ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যের দৃশ্য বেশ অপ্রত্যাশিত। তা-ও আবার ব্যাট হাতে দাঁড়ানো এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপর ভাইয়ের বল বর্ষণের সম্ভাব্য দৃশ্যের আগের দিনই।
দুপুরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ হোটেলে ঢোকার পর শিখর ধবন ও তাঁর সতীর্থরা যখন রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ সারছেন, তখন কেকেআর কর্তা জয় মেটা ও ইরফানকে মুখোমুখি বসে গল্প করতে দেখা গেল। শিখরদের অন্যতম মেন্টর কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত ও কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোরও খোশমেজাজে গল্পগুজবে মেতে। শিখরও সেখানে বাচ্চা কোলে খোশগল্প শুরু করে দিলেন মর্নি মর্কেলের সঙ্গে। চব্বিশ ঘণ্টা পর যে ইডেনে এঁদেরই ক্রিকেট দ্বৈরথ, কে বলবে?
নাইটরা প্লে অফে জায়গা করে নিলেও সানরাইজার্স শিবিরে সূর্যোদয়ের আশা কম। নাইটদের মতোই কোহলির বেঙ্গালুরু ও ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে এসেছে সানরাইজার্স। সেই ছন্দ স্যামি-শিখর-স্টেইনরা শনিবার বজায় রাখলেও বড়জোর মঙ্গলবারের কোয়ালিফায়ারে ইডেনকে তার প্রিয় নাইটদের খেলতে দেখা থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন। তবে ছ’দিন আগেই যাদের কাছে ঘরের মাঠে গো-হারান হেরেছে, তাদের পাড়ায় এসে নিজেদের নাক বাঁচিয়ে নাইটদের যাত্রা ভঙ্গ করতে পারবে সানরাইজার্স?
ইডেনে গত ম্যাচের নায়ক সাকিব আল হাসান এ দিন বিকেলে স্ত্রী-কে আনতে বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে যেমন বললেন, “কোয়ালিফায়ারটা ঘরের মাঠে খেললেই ভাল হয়।” গোটা শিবিরেরই তাই ইচ্ছে, জানালেন মাইসোর। বিকেলে টিম হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে বললেন, “ইডেনে খেলার চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? সব ম্যাচই ইডেনে হলে আরও ভাল হত।” শনিবারও জয় ছাড়া কোনও ভাবনা নেই নাইট শিবিরে। কোয়ালিফায়ার নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দলের তরুণ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদবেরও চোয়াল শক্ত। “কোথায়, কার বিরুদ্ধে খেলব, তার চেয়ে বড় কথা আমরা ভাল খেলব। ব্যস,” বললেন সচিন তেন্ডুলকরের স্নেহধন্য মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যানটি।
দলের এই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে যে ইডেন মাতাতে আসতে পারেন নাইটদের এসআরকে-দা, এই সুখবর দিলেন জুহি চাওলা। এ দিন বিকেলে তিনি জানিয়ে দেন, “আমি তো জানি শাহরুখ কাল আসছে। দেখা যাক।” শাহরুখ এলে লড়াইটা শুধু এসআরএইচ বনাম কেকেআর নয়, এসআরএইচ বনাম এসআরকে-ও হয়ে উঠতে পারে। গম্ভীর অ্যান্ড কোং ছাড়াও ইডেন পেয়ে যাবে বাদশাকে। তাঁর সামনেই হোক হতাশা দিয়ে শুরু করা লিগ পর্যায়ের মধুরেণ সমাপয়েৎ। এমনই তো চায় কেকেআরের শহর।