বসন্তোৎসবের আবহে ওপার বাংলায় ক্রিকেট-উৎসব

ভারত নিয়ে ‘বিনয়’ প্রদর্শনে ব্যস্ত পাকিস্তান

রাতরাতি কেমন যেন এক মায়াবী আবহ চার দিকে। ঢাকা। চট্টগ্রাম। সিলেট। ওপার বাংলার যে তিন শহর আগামী কুড়ি দিন ধরে দেখবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিভিন্ন মহাযোদ্ধাদের ধুন্ধুমার, দেখবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে শাহিদ আফ্রিদি, শেন ওয়াটসন থেকে ক্রিস গেইল কোনও এক মন্ত্রে পাল্টে ফেলা হয়েছে তাদের পারিপার্শ্বিক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৪:১০
Share:

রাতরাতি কেমন যেন এক মায়াবী আবহ চার দিকে।

Advertisement

ঢাকা। চট্টগ্রাম। সিলেট। ওপার বাংলার যে তিন শহর আগামী কুড়ি দিন ধরে দেখবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিভিন্ন মহাযোদ্ধাদের ধুন্ধুমার, দেখবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে শাহিদ আফ্রিদি, শেন ওয়াটসন থেকে ক্রিস গেইল কোনও এক মন্ত্রে পাল্টে ফেলা হয়েছে তাদের পারিপার্শ্বিক।

ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় এখন বড়দিনের মতো আলো। নতুন করে রং করা হয়েছে জায়গায় জায়গায়।

Advertisement

ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলো দেখলে মনে হবে ক্রিকেট-যুদ্ধ নয়, কারও বিয়ে হবে ওখানে!

নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা হাজার হাজার। স্টেডিয়ামের বাইরে জন-অরণ্যের ছবি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে ইউ টিউবে।

রবিবার এপার বাংলায় যখন ডুবে থাকবে বসন্তোৎসবে, ওপার বাংলায় একই দিনে শুরু হবে ক্রিকেট-উৎসব।

যার পোশাকি নাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

উত্তেজনাও তো শুরু হয়ে গেল। একে তো প্রথম দিনই কোয়ালিফায়ারের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ যুদ্ধে নামছে আফগানিস্তানের। যে আফগানদের কাছে সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে হেরেছে বাংলাদেশ, হেরেছে নিজের দেশেই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিশোধ নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকছে, বাংলাদেশ শক্তিশালীও হচ্ছে এশিয়া কাপের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে। কারণ এ বার টুর্নামেন্টের গোড়া থেকে সাকিব-আল-হাসান আছেন, থাকবেন তামিম ইকবাল, পাওয়া যাবে মাশরাফি মর্তুজাকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলে দিচ্ছেন, টপ অর্ডারকে সময় দেওয়া হবে প্রথমে ক্রিজে জমে যাওয়ার জন্য। তার পর যাওয়া হবে আক্রমণে। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে নয়। আসল উত্তেজনার লাভাস্রোত আগাম বইতে শুরু করছে পাঁচ দিন পরের এক ম্যাচকে ঘিরে।

২১ মার্চের ম্যাচ ঘিরে।

ভারত বনাম পাকিস্তানকে ঘিরে। যে ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে মূলপর্বের খেলা।

বাংলাদেশে পা দিয়েই যে চাপা উত্তেজনাটা টের পাওয়াতে শুরু করেছে পাকিস্তান। মিসবা-উল-হক নন, পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি টিমের অধিনায়কত্ব করেন মহম্মদ হাফিজ। তিনি যুদ্ধের ময়দানে নেমেই ভারতের প্রতি অতিরিক্ত ‘বিনয়’ প্রকাশ করে বলে দিয়েছেন, “আমি সব সময়ই বলে এসেছি যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই আলাদা একটা চাপ। কিন্তু ম্যাচটা যখন আপনি খেলবেন, ভালও লাগে। অধিনায়ক হিসেবে আমি বলব, প্রথম ম্যাচেই ভারতকে পেয়ে ভালই হয়েছে। চাপের দিকটা ধরলে প্রথম ম্যাচেই যদি আপনি ভাল করেন, তা হলে পরের ম্যাচগুলো সহজ হয়ে যায়। কোনও প্রতিপক্ষকেই হালকা করে নেওয়ার জায়গা নেই। কিন্তু ভারত ম্যাচ মানে, ভাল শুরু করতেই হবে। আর এই চাপটাই আমাদের তাতিয়ে দেয়।” চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে বিনয়-প্রদর্শনে অবশ্য অধিনায়ককেও একহাত পিছনে ফেলে দিচ্ছেন পাক পেসার সোহেল তনবীর। যিনি বলে রাখলেন, ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ সবচেয়ে শক্তিশালী।

যদিও টি-টোয়েন্টি যুদ্ধে ভারতের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত খুব বেশি সুবিধে করতে পারেনি পাকিস্তান। দু’দেশের পাঁচ সাক্ষাতে ভারত জিতেছে চার বার। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ধরলে পাকিস্তানের আবার রেকর্ড ভারতের চেয়ে বহুগুণ ভাল। ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রথম বার। আর পাকিস্তান একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, একবার ফাইনালে উঠেছে, দু’বার উঠেছে সেমিফাইনালে। শুধু তাই নয়, সদস্য সমাপ্ত এশিয়া কাপেও তারা ভারতকে হারিয়েছে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে, হারিয়েছে শাহিদ আফ্রিদির একক বিস্ফোরণে। ‘বুম বুম’ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও আছেন। আগমী ২১ মার্চ নামবেনও ভারতের বিরুদ্ধে। আপাতত তিনি ফিটনেস নিয়ে ব্যস্ত। টিমের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন সোমবার।

ভারত কোচ ডানকান ফ্লেচার আবার এ দিনই টিমের সঙ্গে যোগ দিলেন। এমনিতে চোট সারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ধোনি। এবং ভারত অধিনায়কের উপস্থিতিকে বেশ সমীহই করছে হাফিজের পাকিস্তান। পাক অধিনায়ক বলছেন, “দু’টো টিমেই এমন কিছু কিছু প্লেয়ার আছে যারা ম্যাচটা ঘুরিয়ে দিতে পারে। আর ধোনি ভারতকে গত চার-পাঁচ বছর ধরেই বেশ ভাল নেতৃত্ব দিচ্ছে। এশিয়া কাপে ও ছিল না আর এখানে আছে, আমি সেটা বলতে চাইছি না। বলতে চাইছি, যে-ই আমাদের প্রতিপক্ষ হোক আমাদের ভাল খেলতে হবে জেতার জন্য। ভারতের বিরুদ্ধে নামার চাপটা আদতে আমাদের কাছে মোটিভেশন। ও রকম বিশাল দর্শকের সামনে ম্যাচ খেলতে নামাটা আমরা বরাবরই উপভোগ করে এসেছি। ম্যাচটা নিয়ে আমরা তাই বেশ উত্তেজিত।”

উল্টো দিকে তনবীর আবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কেন তিনি ভারতীয় ব্যাটিংকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখছেন। বলছেন, “ওদের টিমে ধোনি, রায়না, যুবরাজ এসে যাওয়ার পর শক্তি যে ভারতের মারাত্মক বেড়েছে বলতেই হবে। আমার মতে ওদের ব্যাটিং লাইন আপটাই সবচেয়ে শক্তিশালী। তবে নাম দিয়ে চলে না। ম্যাচের দিন কে কেমন করল, সেটাই আসল।” সঙ্গে সংযোজন, “আমি প্রচুর ভারতীয় প্লেয়ারের সঙ্গে খেলেছি। অশ্বিন আর যুবির সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছি। মাঠের বাইরে ওরা আমার খুব ভাল বন্ধুও। মাঠের মধ্যে টেনশন বা যে উত্তেজনাটা আপনারা দেখেন, সেটা গত দশ-পনেরো বছর ধরেই চলছে। এখনও পাল্টায়নি। কিন্তু মাঠের বাইরে আমরা সত্যিই খুব ভাল বন্ধু।”

যে মুখগুলো আবার শত্রু হয়ে যাবে। মাত্র পাঁচ দিন পর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন