আইসিসির সর্বেসর্বা চেয়ারম্যানের পদে এন শ্রীনিবাসনের বসে পড়া নিশ্চিত হয়ে গেলেও তাতে দ্বন্দ্বের ছায়া পড়ল। আইসিসি-রই চিফ এগজিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন অনুযোগের সুরে বলেছেন, বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার তিন বড় দাদা (আইসিসিতে যাকে বলা হচ্ছে ‘বিগ থ্রি’) হিসাবে ভারত, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড যে বিশেষ আর্থিক আনুকূল্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে আইসিসি-কে পরিকাঠামো বদল করতে বাধ্য করেছে, তার পিছনে বিসিসিআই তাদের ‘গেমসম্যানশিপ’ প্রয়োগ করেছিল। এবং শেষ পর্যন্ত ‘চালকের আসনে’ চলে এসেছিল।
চলতি বছরের গোড়ায় বিসিসিআই, ইসিবি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একযোগে আইসিসি-তে দাবি তোলে যে, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার লভ্যাংশের সিংহভাগ তাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে, যেহেতু তাদের খেলা সব সিরিজ থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় করে আইসিসি। অন্যান্য টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলো প্রথম দিকে এর বিরোধিতা করলেও ক্রমে নরম হয়ে ‘বিগ থ্রি’-র সব প্রস্তাবই মেনে নেয়। এ দিন রিচার্ডসন অবশ্য অস্বীকার করেননি যে, ভারতীয় বোর্ড তাদের জন্য বিশেষ টেস্ট ম্যাচ প্যাকেজ আইসিসি-র কাছে দাবি করার সময় স্বয়ং তিনিও এর বিরোধিতা করেননি। উল্টে বরং সেই সময় বলেছিলেন, বিসিসিআই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার কোষাগার ভরিয়ে তোলার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
তবে রিচার্ডসন এ দিন সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, “ভারতীয় বোর্ডের দাবি ছিল, আইসিসিতে আমাদের জোর বেশি, সুতরাং আমাদের বেশি টাকা চাই। অতএব ব্যাপারটা একটা বোঝাপড়ার পথে চলে গিয়েছিল এবং শেষমেশ একটা বোঝাপড়াই হয়েছিল। ব্যাপারটা ভারতের একটা গেমসম্যানশিপ ছিল। নিশ্চিত ভাবেই আইসিসিতে কিছু লোকের অন্যদের চেয়ে বেশি প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে।” আর ‘বোঝাপড়া’ প্রসঙ্গে রিচার্ডসন বলেছেন, “বোঝাপড়ার টেবিলে ভারত অবশ্যই চালকের আসনে ছিল। আসলে এটাই বিসিসিআইয়ের গলার জোর ছিল যে, অন্য যে কোনও দেশের সঙ্গে ভারতের খেলা সিরিজই সবচেয়ে বেশি আর্থিক লাভের মুখ দেখায় আইসিসি-কে।” পাশপাশি রিচার্ডসন ‘বিগ থ্রি’-র বাইরের টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলোকেও সতর্কবার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, “বিগ থ্রি-র আবির্ভাব আইসিসি-র অন্য টেস্ট খেলিয়ে সদস্য দেশের কাছে একটা শিক্ষাও বটে। বিশেষ করে সে সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যারা বড়-বড় সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বৈঠকে চুপচাপ পিছনের সিটে বসে সব কিছু ঘটতে দেখে। আইসিসি-র বৈঠকে এমন কিছু প্রতিনিধি থাকেন, যাঁদের মাঝেমধ্যে সভার মধ্যেই ঝিমোতে দেখা যায়। এঁদের না আছে কোনও বক্তব্য, না আছে অংশগ্রহণ। এ রকম হলে তো ক্ষমতা-শূন্যতার একটা পরিস্থিতি তৈরি হবেই। আর সে ক্ষেত্রে যে দেশের বোর্ডের ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি বেশি, তারাই কন্ট্রোল নিয়ে নেবে সব কিছুর।”