লর্ডস টেস্টের পরের ক’টা দিন ভারতীয় দল নিশ্চয়ই চুটিয়ে আনন্দ করেছে। করাই উচিত। লর্ডসে একটা পরিতৃপ্তির জয় পেয়েছে ওরা। তবে জয়ের ধারা বজায় রাখতে হলে আজ থেকে কিন্তু আবার কঠিন লড়াই। সিরিজে এখনও তিনটে টেস্ট বাকি। ধোনি আর ফ্লেচার অবশ্য অভিজ্ঞতা থেকেই জানে, এটা অ্যাকসেলারেটর থেকে পা তুলে নেওয়ার সময় নয়। সামান্যতম ঢিলে দিলেই অ্যাডভান্টেজ হাত থেকে ফস্কে যেতে পারে।
রোজ বোলে নামার আগে দু’টো টিমকেই কয়েকটা ব্যাপার ভেবে দেখতে হবে। সিরিজের এই পর্যায়ে ভারতের তুলনায় ইংল্যান্ডের চিন্তা অবশ্যই বেশি। তবে বাটলারকে বাদ দিলে ইংল্যান্ডের নির্বাচকেরা আগের টেস্টের দল অপরিবর্তিত রেখে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম যে, তোমরাই গাড্ডায় ফেলেছ। এ বার এই টিম নিয়েই সেখান থেকে বার করে দেখাও। এই মুহূর্তে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। এখন নির্বাচকদের এই আস্থাই টিমের প্রেরণা হতে পারে। কুক, বেল, অ্যান্ডারসন, ব্রড প্রত্যেকে জাত ক্রিকেটার। ছোট্ট একটা ঠেলাই ওদের তাতানোর জন্য যথেষ্ট। চাপের মুখেই সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়ে আসে। কিন্তু কখনও কখনও কাঁধে হাত রেখে ‘পাশে আছি’ বোঝাতে পারলে আরও বেশি কাজ হয়।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অবশ্য ঢেলে সাজা দরকার। টপ অর্ডারে কুক, ব্যালান্স আর রবসন, তিন জনই ধরে খেলে। কিন্তু শুরুতেই প্রতিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে হলে এক জন চালিয়ে খেলার ব্যাটসম্যান দরকার। আমার মতে, বেলকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনা উচিত। রোজ বোলের সবুজ উইকেট নিয়েও অনেক জল্পনা হচ্ছে। তাই ক্রিস জর্ডনকে প্রথম এগারোয় দেখলে অবাক হব না। সবুজ উইকেটে সঠিক লাইন-লেংথ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পিচে ঠুকে বল তোলার চেয়েও বলটা ঠিক জায়গায় রাখা বেশি জরুরি। যে কারণে জর্ডন এই উইকেটের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আবার ট্রেন্টব্রিজ কাণ্ডে জাডেজার জরিমানা হওয়ার পর তাঁর নিজের ভাগ্যে কী আছে দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকবে জিমি অ্যান্ডারসন। শুনানি শেষ হবে ১ অগস্ট। শোনা যাচ্ছে, গোটা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ নাকি নেই। দু’পক্ষের কথার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিচারবিভাগীয় কমিশনারকে। গোটা বিতর্কে ভারতীয় শিবিরের প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত দারুণ ইতিবাচক। ঠিক যেমন পার্থের ‘মাঙ্কি গেট’ বা নটিংহ্যামের ‘জেলি বিন’ কাণ্ডের সময় সাহসী ছিল। বরং ইংল্যান্ডের, বিশেষ করে অ্যান্ডারসনের মানসিকতা যেন কিছুটা নড়ে গিয়েছে। লর্ডসে আবার দুই ইনিংসেই জাডেজা ওকে আউট করে। যা নিয়ে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে হাসাহাসি হতে বাধ্য। অ্যান্ডারসনকে মনঃস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে দেওয়া গিয়েছে, এমনটাই দাবি করবে ভারত।
সব মিলিয়ে রোজ বোলে নামার আগে ভারতীয় শিবির ফুরফুরে। দল মনে হয় একই থাকবে। ধোনি ধারাবাহিকতা পছন্দ করে। যা নিয়ে আমার এমনিতে সমস্যা নেই। তবে বিনিকে যদি সে ভাবে বল করানো না-ই হয়, রোহিতকে নিয়ে আসায় ক্ষতি কোথায়? বরং সবুজ উইকেটে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের গভীরতা বাড়বে। অবশ্য ধোনি যে রকম তাস লুকিয়ে রাখতে ভালবাসে, তাতে ভারত অধিনায়ক কী করবে সেটা জানতে টস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ভারতীয়রা, বিশেষ করে আমি চাইব উইকেটটা যেন গ্রিন টপ হয়। এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস তলানিতে। এ রকম টিমকে চেপে ধরার জন্য সবুজ উইকেটই আদর্শ!