আরসিএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবরে মোদী শিবিরের উল্লাস।
ললিত মোদীর ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে ফেরার সেতু তৈরি হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিল বোর্ড।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষক মোদীকে রাজস্থান ক্রিকেট সংস্থার (আরসিএ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করার কিছুক্ষণ পরই বিসিসিআই-এর অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদব আরসিএ-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। এই ঘোষণার পরই অবশ্য মোদী ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা বোর্ড তথা এন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেন। তার উপর দেশের ক্রিকেট রাজনীতিতে শ্রীনিবাসন-বিরোধী বলে পরিচিত হেভিওয়েটরাও যে ভাবে এ দিন মোদীকে সামনে রেখে এক এক করে মুখ খুলেছেন, তাতেও স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, স্পট ফিক্সিং মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই শ্রীনিবাসনকে আর এক আইনি যুদ্ধে নামতে হবে। এবং সেই যুদ্ধ আদালতের পাশাপাশি যে বোর্ডের অভ্যন্তরে আরও তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়বে, তার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে।
দুই প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও কট্টর শ্রীনি-বিরোধী আইএস বিন্দ্রা এবং শরদ পওয়ার এ দিন বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরা মোদীর পাশে রয়েছেন। এ দিন লন্ডনে পওয়ার মন্তব্য করেন, “বোর্ডের সিদ্ধান্তে চমকে গিয়েছি। একজনের জন্য একটা গোটা রাজ্য সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত তো চমক দেওয়ার মতোই। শিবলাল যাদবের সঠিক মনোভাবের পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল। আইন ব্যবস্থাকেও শ্রদ্ধা জানানো উচিত ছিল ওর।” অন্য দিকে বিন্দ্রা এক টিভি চ্যানেলকে বলেন, “ললিত মোদীকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নির্বাচিত করেছে আরসিএ। আইনত মোদীর আরসিএ প্রেসিডেন্ট হওয়া আটকানো যায় না। ওই সংস্থাকেও সাসপেন্ড করার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ড এই ব্যাপারে এত তাড়াহুড়ো করল কেন, বুঝছি না। আমার তো মনে হচ্ছে, বোর্ডই নিয়ম না মেনে আরসিএ-কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল।” বোর্ডের অন্দরমহলে অনেকে মনে করছেন, কোনও বৈঠক না ডেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার নেই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের। এক কর্তা যেমন এ দিন বললেন, “ওয়ার্কিং কমিটি বা এসজিএম ডেকে সিদ্ধান্তটা নেওয়া উচিত ছিল।”
বোর্ড সচিব অবশ্য সঞ্জয় পটেল এ দিন বলে দেন, “বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ৩২(৭) ধারা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদব আরসিএ-কে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের কোনও সংস্থাকে সাসপেন্ড করার অধিকার আছে।” কিন্তু এক বোর্ড কর্তার বক্তব্য, “প্রেসিডেন্টের পদই যেখানে অস্থায়ী, সেখানে এই ধারায় তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।” এ দিন সচিব পটেল জানান, “রাজস্থানের ক্রিকেটাররা যাতে খেলা চালিয়ে যেতে পারে, তা দেখার জন্য বোর্ড অ্যাড-হক কমিটি গড়বে।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরই নবনির্বাচিত আরসিএ পদাধিকারীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স সেরে ফেলেন মোদী। তার পরই একের পর এক টুইট করে জানিয়ে দেন, “এখন অনেক কাজ করতে হবে। ফিক্সিং আর ফিক্সারদের এ বার সোজা করতে হবে।” দেশে নতুন সরকার গঠনের পর ভারতে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে মোদী এক টিভি চ্যানেলে এ দিন বলেন, “শীঘ্র দেশে ফিরছি। আশা করি, নতুন সরকার এসে ফের আমার ঘাড়ে সব দোষ চাপাতে ঝাঁপাবে না।”
টুইটারে কার্যত শ্রীনি শিবিরকে হুমকি দিয়ে মোদী লেখেন, “যাঁরা ভাবছেন বিসিসিআই তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং আরসিএ-কে সাসপেন্ড করে পার পেয়ে যাবেন, তাঁদের ছাড়ব না।” যুদ্ধ যে চলবে, নবনিযুক্ত আরসিএ ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ও মোদীর আইনজীবী মেহমুদ আবদি সেই ঘোষণাও করে দেন। “বোর্ডের সিদ্ধান্তকে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাব আমরা,” জানিয়ে দেন আবদি। বোর্ডের একাংশের ধারণা, আদালতে গেলে আরসিএ তাদের নির্বাসনের উপর স্থগিতাদেশ পেয়ে যেতে পারে। সম্ভবত এই অঙ্ক কষেই শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে আইনি খেলায় নামবেন মোদী।
আমাদের সাসপেন্ড করে পার পেয়ে যাবেন বলে যদি কেউ ভেবে থাকেন, আর বোর্ডকে যাঁরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন তাঁদের বলছি...অপেক্ষা করুন...আমরা সেটা হতে দেব না।
টুইটারে ললিত মোদী