আজ থেকে প্রিমিয়ার ‘টু’, প্রথম দু’দিনেই মাঠে তিন প্রধান

মিনি ডার্বিতে র‌্যান্টিকে সামনে রেখেই মাঠে নামছেন আর্মান্দো

মহম্মদ রফিকের বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকটা জালে জড়াতেই বারো বছর আগের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে করিয়ে দিলেন আর্মান্দো কোলাসো! পার্থক্য হল, সে দিন ম্যাচ জেতার পরে লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জার্সি উড়িয়েছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। আজ, শনিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্র্যাকটিসের ফাঁকেই জার্সি খুলে মাথার উপর সটান তুলে ধরলেন লাল-হলুদ কোচ।

Advertisement

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫০
Share:

মাঠে নামার আগে র‌্যান্টির কামান দাগা। শনিবার ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

মহম্মদ রফিকের বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকটা জালে জড়াতেই বারো বছর আগের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে করিয়ে দিলেন আর্মান্দো কোলাসো! পার্থক্য হল, সে দিন ম্যাচ জেতার পরে লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জার্সি উড়িয়েছিলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। আজ, শনিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্র্যাকটিসের ফাঁকেই জার্সি খুলে মাথার উপর সটান তুলে ধরলেন লাল-হলুদ কোচ। দেখে মনে হল, কলকাতা লিগে প্রথম বল গড়ানোর চব্বিশ ঘণ্টা আগেই ‘মিনি ডার্বি’ জয়ের উৎসব শুরু করে দিলেন! আর্মান্দোর যুক্তি, “নতুনদের উৎসাহ দিতেই করেছি। একটা ভাল মুভ বা গোলের যদি প্রাণ ভরে প্রশংসা করা হয়, তাতে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।”

Advertisement

জিতেন মুর্মুর সঙ্গে আঠার মতো সেঁটে র‌্যান্টি মার্টিন্স। বল ছাড়া দৌড়ের সময় বিপক্ষ বক্সের আশেপাশে কী ভাবে জায়গা নিতে হয়, প্রধান স্ট্রাইকারের সঙ্গে কতটা দূরত্ব রাখা উচিত এই সব টোটকাই ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব-১৯ স্ট্রাইকারকে দিয়ে চলেছেন লাল-হলুদের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। এত দিন ঠিক যেমন আর্মান্দোর অ্যাটাকিং থার্ডে ‘অভিভাবক’ এডে চিডি তাতাতেন বলজিৎদের। র‌্যান্টি বলছিলেন, “আমার গোড়ালিতে চোট আছে, তবু খেলব। আর কোনও বিদেশি নেই বলে আমাকেই দায়িত্ব নিয়ে ফুটবলারদের গাইড করতে হবে।”

ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনের ফাঁকে আর কোনও ‘বিকট চিৎকার’ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না! বড় ম্যাচের আগে দলকে উদ্বুদ্ধ করতে যা নিয়মিত ব্যবহার করতেন উগা ওপারা। তবে নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার না থাকলেও সফর সর্দারদের মতো দলে নতুন আসা ফুটবলারদের অসুবিধা হচ্ছে না। আর, অর্ণব মণ্ডল-সৌমিক দে-র মতো ‘দাদা’-রা যখন ‘ভাই’দের পথ নির্দেশক, তখন আর সমস্যা থাকবে-ই বা কেন? লাল-হলুদের বর্ষসেরা ফুটবলার অর্ণব বলছিলেন, “কোচ যে স্টাইলে খেলাতে চাইছেন সেটা রপ্ত করতে দু’একটা ম্যাচ লাগবে। তবে নতুনদের মধ্যে যে সব ফুটবলার এসেছে, তাদের ভিতরে শেখার প্রবল ইচ্ছা আছে। আর সেটাই একটা ব্যালান্সড টিম গড়তে সাহায্য করছে।”

Advertisement

লাল-হলুদ ব্রিগেড সামলানোর আগে খোশমেজাজ। যুবভারতীর

ড্রেসিংরুমের সামনে মহমেডান ফুটবলাররা। ছবি: উৎপল সরকার

গত চার বছর ধরে যে সব বিদেশি ইস্টবেঙ্গলের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিলেন, এই মরসুমে তাঁরা সবাই বাতিল হয়ে গিয়েছেন। ওপারা নেই। চিডি নেই। নেই সুয়োকাও। তবে লাল-হলুদের অনুশীলন দেখলে তাঁদের সেই অভাব টের পাওয়ার জো নেই। কেননা এই ‘নেই’-টাকে সম্ভব করে তুলেছেন র‌্যান্টি-অর্ণব-সৌমিকরা। যাঁরা কোচের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাচ্ছেন দলের জন্য। হয়তো সেটাই কারণ যে, আর্মান্দোর দলের বহিরঙ্গে তো বটেই, অন্দরমহলেও টেনশনের কোনও চোরা স্রোত নেই। না হলে মরসুমের শুরুতেই ‘মিনি ডার্বি’-র সামনে দল আর লাল-হলুদ কোচের মুখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফুলঝুরি। “আই লিগের আগে কলকাতা লিগকে টিম তৈরির জন্য ব্যবহার করতে চাই। আইএসএল শুরু হলে অনেক ফুটবলার চলে যাবে। সেখানে অন্য কোচ থাকবেন ওদের। বদলাবে খেলার স্টাইলও। তাই টিম কম্বিনেশন ধরে রাখতে রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি বাড়িয়ে রাখতে চাই,” আর্মান্দোর কথা শুনে মনে হল, কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলে ফুটবলার তৈরির রসায়নাগার বানাতে চাইছেন তিনি!

তবে কলকাতা লিগকে গুরুত্ব না দিলেও, আর্মান্দোর কি উচিত নয় ময়দানের ‘মিনি ডার্বি’-কে সমীহ করা? লাল-হলুদ কোচ বলছিলেন, “ডার্বি মানে আমার কাছে শুধু ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। আমি মহমেডানকে অসম্মান করছি না। তবে এই ম্যাচকে ডার্বিও ভাবতে পারছি না।” মহমেডানের ইদানীং যা অবস্থা, তাতে র‌্যান্টি-মেহতাবদের আতঙ্কে ভোগার মতো পরিস্থিতি হয়তো নেই। এমনকী সাদা-কালো কোচ ফুজাতোপে নিজেও বলছিলেন, “একেবারেই নতুন টিম। একজন বিদেশি স্টপার শুধু খেলতে পারবে। অসীমের রেজিষ্ট্রেশন সময়ে হয়নি বলে খেলতে পারবে না। এই অবস্থায় রবিবার আমরা ড্র করতে পারলেই খুশি।”

আর্মান্দোর কাছে মহমেডানের গুরুত্ব না থাকলেও, অর্ণব থেকে র‌্যান্টি-- সবাই ‘মিনি ডার্বি’ হিসেবেই নিচ্ছেন ম্যাচটাকে। “প্রথম পনেরো মিনিট দেখে খেলতে হবে। মহমেডানে বড় কোনও নাম না থাকলেও, মাঠে কোনও টিমই ছোট-বড় হয় না,” অর্ণবের কথাতেই পরিষ্কার ফুটবলাররা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এখন দেখার, জিতেন-দীপকদের মতো তরুণ-ব্রিগেড বাস্তবে চিডি-ওপারাদের ছায়া মুছে ফেলতে পারেন কি না!

প্রিমিয়ারের দ্রোণাচার্যরা

ইস্টবেঙ্গল: আর্মান্দো কোলাসো

মোহনবাগান: সুভাষ ভৌমিক

মহমেডান:ফুজা তোপে

টালিগঞ্জ অগ্রগামী: সুব্রত ভট্টাচার্য

সাদার্ন সমিতি: স্নেহাশিস চক্রবর্তী

বিএনআর: নবনীল বন্দ্যোপাধ্যায়

আর্মি একাদশ: সাজি

পুলিশ এসি: চিমা ওকোরি

এরিয়ান: রঘু নন্দী

সাই: সঞ্জীব পাল

কালীঘাট এম এস: অরুণ সাহা

রবিবারে

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ- ইস্টবেঙ্গল : মহমেডান (যুবভারতী, ৪-০০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন