তারিখটা ছিল ১৬ অক্টোবর ২০০৪। ম্যাচটা ছিল লা লিগায়। এস্প্যানিয়লের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ার্ধে ডেকোর পরিবর্তে নামলেন এক সতেরো বছরের তরুণ ফুটবলার। দশ বছর কেটে গিয়েছে সেই দিনের পর। আজ তরুণ ফুটবলারই বিশ্বফুটবলে রাজত্ব করছেন। যাঁর ক্যাবিনেটে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে লা লিগা, রয়েছে সব কিছুই। সঙ্গে আছে চার চারটে ব্যালন ডি’অরও। তিনিলিওনেল মেসি। বার্সা জার্সিতে যাঁর দশ বছর পূর্ণ হল।
ছ’টা লা লিগা। তিনটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ৪৩৪ ম্যাচে ৩৬১ গোল। প্রতিটাই অক্ষরে অক্ষরে লেখা থাকবে বার্সার ইতিহাসে। তবে বার্সা জার্সিতে সফল হওয়ার রহস্য হিসাবে এলএম টেনের বাবা হোর্জে মেসি সাফ জানিয়ে দিলেন, বিতর্ককে তোয়াক্কা না দিয়ে ফুটবলের উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছেন মেসি। “লিও সব সময় জানত ভাল খেললে যেমন প্রশংসা পাবে, খারাপ খেললে ততটাই কটাক্ষ শুনতে হবে ওকে। ও জানত এগুলো জীবনের অঙ্গ। তাই কারও কথায় মন না দিয়ে ও এগিয়ে গিয়েছে লক্ষ্যের দিকে,” বলেন মেসি সিনিয়র। আর্জেন্তিনার এক ছোটখাটো ছেলের ফুটবল রাজপুত্র হওয়ার পিছনে তাঁর বিনয়ী স্বভাবও সহায়ক ছিল। “সবাই ভাবে মেসি প্রচারে থাকতে ভালবাসে। কিন্তু এ রকম কিছুই না। ও সময় পেলে পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটায়। বাড়িতে থাকতে ভালবাসে। মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে ভালবাসে।”
দশক-পূর্তিতে যেমন প্রশংসা পেলেন বাবার থেকে তেমনই আবার সতীর্থরাও কোনও দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলেন না তাঁদের আদরের মেসিকে শুভেচ্ছা জানাতে। আন্দ্রে ইনিয়েস্তা যেমন বলে দিলেন, বার্সেলোনা ভাগ্যবান মেসির মতো ফুটবলারকে পেয়ে। “আমার মনে হয় বার্সেলোনার অপরিহার্য অঙ্গ মেসি। ঠিক তেমনই এই ক্লাবটাও ওর জন্য খুব পয়া। আমাকে আলাদা করে বলতে হবে না মেসি কত বড় ফুটবলার। কিন্তু মেসি আর বার্সা একে অপরের পরিপূরক। আশা করছি ও এখানেই নিজের কেরিয়ার শেষ করবে।” আবার জাভি বলে দিলেন, দশ বছরে যা না করেছেন এলএম টেন, পরের কয়েক বছর সেই উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যাবেন মেসি। “কোনও সন্দেহ নেই বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসি। সবাই জানে ও কত ভাল ফুটবলার। ও এখনও আরও কয়েক বছর চুটিয়ে খেলতে পারবে। আশা করছি আরও বেশি সাফল্য পাবে ও।”
মেসি যখন দশক-পূর্তি করলেন তাঁর প্রিয় ক্লাবে, পাশাপাশি আবার তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ডোকে সই করানোর ফাঁদ পাততে চলেছেন হোসে মোরিনহো। রোনাল্ডো ও মোরিনহোর এজেন্ট একজনই- হোর্জে মেন্ডেস। শোনা যাচ্ছে, মেন্ডেসকে এখন থেকেই ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ বলে রেখেছেন, রোনাল্ডো বিক্রি হলে প্রথম দাবি থাকবে তাঁদেরই। কিছু দিন আগেই মেন্ডেস জানিয়েছিলেন, রিয়ালেই কেরিয়ার শেষ করবেন রোনাল্ডো। কিন্তু রিয়াল মহাতারকা নাকি তাঁর বন্ধুদের ব্যক্তিগত ভাবে বলেছেন, তিনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন পরের মরসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ফিরতে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তাঁদের পুরনো ফুটবলারকে ফেরাতে চাইলেও, রোনাল্ডোকে সই করানোর দৌড়ে রয়েছে চেলসিও। ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী রোনাল্ডোকে সই করাতে এতটাই মরিয়া চেলসির পর্তুগিজ কোচ যে, সুর বদলে ‘শত্রুকেও’ বুকে টেনে নিচ্ছেন তিনি। “রোনাল্ডোর মতো ফুটবলার আর আসবে না ফুটবলবিশ্বে। জিনেদিন জিদানের মতো রোনাল্ডোও ওর প্রজন্মের সেরা ফুটবলার।” তবে মোরিনহোর এই ফন্দি কতটা কাজে লাগে, এখন সেটাই দেখার। কারণ সিআর সেভেনের রিয়াল চুক্তিতে ‘রিলিজ-ক্লজ’ যে ১০ কোটি পাউন্ড।