ময়দান কাঁপালেন পাপালি, উচ্ছ্বাসে ভাসল শিলিগুড়ি

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

ঋদ্ধিমানের বাড়ির পাশেই উল্লাস স্থানীয় ক্লাবের ছেলেদের রবিবার রাতে।

দারুণ কিছু একটা করতে হবে! দারুণ কিছু! নাইটদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগের শনিবার রাতে এই প্রত্যাশাটাই বলেছিলেন ঋদ্ধিমান ওরফে পাপালির এক সময়ের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। ২৪ ঘন্টা না কাটতেই শিলিগুড়ির ক্রিকেটপ্রেমী থেকে শহরবাসীর অনেকেরই ফেসবুকে ভেসে আসছে ‘সাহা, আহা....।’ ঋদ্ধিকে দলে না নিয়ে নাইটরা উপেক্ষা করেছে এমনই অভিযোগে কারও বুকভাঙা ক্ষোভ ফেসবুকের টাইমলাইনে ‘নাইট রাইউডার্স কী সারা বাংলার প্রতিনিধি? না ওটা শুধু কলকাতার?’ শিলিগুড়ির কেউ লিখছেন ঋদ্ধির ছবি দিয়ে ‘আমরা গর্বিত’। ‘বাংলার মুখ ঋদ্ধি। তুমি আমাদের গর্ব’। কেউ লিখছেন ‘নো ইডলি, নো দোসা ওনলি ঋদ্ধিমান’। অতিপরিচিত কেউ তাঁর পাড়ার নাম তুলে লিখছেন ‘পাপালি তুই কাঁপালি’। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের ব্যাটিং শেষ হতেই সেই উচ্ছ্বাস শুরু। এর পর যতই সময় গড়িয়েছে ফেসবুক ঋদ্ধিমান ফ্যানদের লেখায় ভেসে গিয়েছে।

Advertisement

শিলিগুড়ির পাকুড়তলা মোড়ে অগ্রগামী ক্লাবের ঘরে অন্যান্য সদস্য এবং ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলেন জয়ন্ত ভৌমিক। ঘন ঘন ফোন আসছিল ঋদ্ধিমানকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর কাছে। কী বলবেন? আপ্লুত তিনি। বললেন, “এটাই তো চাইছিলাম। ও কিছু একটা করে দেখাবে এটা জানতাম। দারুণ খেলেছে।” উচ্ছ্বাসে টানা একদমে কথাগুলি বললেন। জয়ন্তবাবু বলেন, “শনিবার রাতে ফোন করেছিল। কথা হল। বলেছিলাম, দারুণ কিছু একটা করতে হবে। ও বলেছিল, চেষ্টা করব। কথা রেখেছে। আইপিএল ফাইনালে ৫৫ বলে ১১৫ দারুণ বৈকি।”

খুশি সকলেই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দিনভর জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাজ সেরে ফেরেন। ঋদ্ধিমান ভাল খেলছে শুনেই টিভির সামনে বসে পড়েন তিনি। খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে ঘরের ছেলের ব্যাটিং পারফরম্যান্স দেখেছেন। গৌতমবাবু বলেন, “ও দেশের গর্ব। ওর জন্য গর্বিত শিলিগুড়ি।” শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারাও তাঁদের পাপালির ব্যাটিং দেখে উচ্ছ্বসিত। তাঁদের অনেকেও মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ঘরে বসেই খেলা দেখছিলেন ঋদ্ধিমানের। ঋদ্ধিমানকে একের পর এক বল সীমানার বাইরে পাঠাতে দেখে তাঁরাও উৎফুল্ল। ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ কাজে কলকাতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “হোটেলের ঘরে বসে ঋদ্ধিমানের খেলা দেখলাম। এক কথায় দারুণ। ওকে অভিনন্দন জানাবার ভাষা নেই।” উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারাও ঋদ্ধিমানের সাফল্যে খুশি। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্তরা ক্রীড়া পরিষদের অন্য সদস্যদের নিয়ে খেলা দেখছিলেন। অঞ্জনবাবু বলেন, “চমৎকার খেলেছে। দর্শনীয় ব্যাটিং। আমি তো আগে থেকেই ওর ফ্যান।”

Advertisement

ঋদ্ধিমানের পুরনো ক্লাব অগ্রগামীর ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রথম দুই বছর নাইট রাইডার্সে খেলেছেন তাঁদের বন্ধু। দু’বছর চেন্নাই সুপার কিংস-এ। কিন্তু সেখানে প্রাপ্য সুযোগ পাচ্ছিলেন না ঋদ্ধিমান। এ বার পঞ্জাবের হয়ে সুযোগ মিলতেই তাঁর ব্যাট ঝলসে উঠেছে। ক্লাবের ক্রিকেটার সৌগত দত্ত, ইপু সাহারা মজেছেন প্রাক্তন সতীর্থ পাপালিকে নিয়ে।

শিলিগুড়ি অগ্রগামী ক্লাবে ক্রিকেটে হাতে খড়ি ঋদ্ধিমানের। শিলিগুড়িতে এলে এখনও সেখানেই সময় কাটান। কোচ জয়ন্তবাবুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তাঁর পরামর্শ নিয়ে চলেন। সমস্যা হলেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন। শনিবার রাতেও সে ভাবেই ফোন করেছিলেন। অগ্রগামীর ক্রিকেট কোচ বলেন, “কিছু করার জন্য ওকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনে হচ্ছিল। ওকে বলেছিলাম। সুযোগ সব সময় মেলে না। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা সকলেই আজ গর্বিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন