মার্কো মাতেরাজ্জি কেমন মানুষ, জিনেদিন জিদান খুব ভাল জানেন।
মার্কো মাতেরাজ্জি কেমন মানুষ, শিল্টন পালরাও এখন বলে দিতে পারবেন।
মুশকিল হল লম্বা, কাঠখোট্টা চেহারার ইতালীয় ডিফেন্ডারকে যে ভাবে ফুটবল বিশ্ব চেনে, যে ভাবে জানেন জিদান, সেটা বোধহয় সম্পূর্ণ নয়। বড়জোর একটা মাতেরাজ্জিকে ধরা যাবে। যিনি ফুটবলার জীবনে পঁচিশ বার মার্চিং অর্ডার পেয়েছেন। যিনি জিদানের মতো ফুটবলের প্রবাদপ্রতিম চরিত্রকেও ছাড়েননি। বিশ্বকাপ ফাইনালে অশ্লীল গালিগালাজে রাগিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য করেছেন। ২০০৬-এর কুখ্যাত ‘হেডবাট’ আর কে ভুলেছে? যিনি আজও মনে করেন একটা যুদ্ধ জিততে গেলে যা যা করা প্রয়োজন, সব করবেন। কোনও কিছু নিয়ে ‘কার্পণ্য’ করবেন না।
শিল্টন পাল-অভিজিত্ মণ্ডলদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে আবার আরও এক মার্কোর খোঁজ পাওয়া যাবে। যিনি স্বভাব-বিনয়ী। যিনি প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে তির্যক মন্তব্য না করে সম্মান দেখাবেন। যিনি ছাত্রদের দাবি মেটাবেন অক্লেশে, উপহার নিয়ে আসবেন দেশ থেকে এবং এসে বলবেন, “তোমাদের চাহিদা তো মেটালাম। এ বার কিন্তু তোমাদেরও জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা চলবে না!”
সহজে, সোমবার চেন্নাইয়ান সংসার ঘুরে দু’জন মাতেরাজ্জির খোঁজ পাওয়া গেল।
বকাঝকা এখনও একই রকম আছে। সেটা সাংবাদিকই হোক বা টিমের ফুটবলার। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে নামার ঠিক আগে কী কুক্ষণে হাসছিলেন জেজে। ব্যস, মুহূর্তে মার্কোর রোষানলে। সোজা গিয়ে জেজে-কে শুনিয়ে দেন, “এত হাসি কীসের? মাঠে নেমে কী ভাবে প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করবে সেটা ভাবো!” মুম্বই ম্যাচে আবার ধমকটা খেয়েছেন খাবরা। মুম্বই তখন চার গোলে এগিয়ে। ড্রেসিংরুমে ঢুকে হালকা মেজাজে জল খাচ্ছিলেন খাবরা সহ চেন্নাইয়ানের কয়েক জন। আচমকাই মার্কোর আবির্ভাব এবং গর্জন, “এত হালকা মেজাজ আসছে কী ভাবে তোমাদের? ওরা মাঠে সেকেন্ড বলগুলো পাচ্ছে কী ভাবে? সেকেন্ড হাফে ওরা যেন একটা বলও না ধরতে পারে।” কিন্তু সেই একই লোক আবার নিদ্বির্ধায় শিল্টন-অভিজিত্দের আবদার মেটান। মাতেরাজ্জি ইতালি যাচ্ছেন শুনে ওঁরা বলেছিলেন, ভাল একটা গ্লাভস এনে দিতে। মাতেরাজ্জি দিয়েছেন। দিয়ে বলেছেন, “যা চাইলে দিলাম, এ বার শুধু জেতার কথা ভাবো।”
কড়া হেডস্যার? অর্ধসত্য।
পরিবারের বড়দা? সেটাও ঠিক।
এ দিন আবার ‘মার্কো টু’-কেই বেশি পাওয়া গেল। ট্যাটু নিয়ে জিজ্ঞেস করতে এক সাংবাদিক শুনলেন ঠিকই যে, “আপনি কাল কী দেখতে মাঠে আসবেন? আমার ট্যাটু?” কিন্তু আবার একই লোককে আটলেটিকো কলকাতার তুমুল প্রশংসা করতেও শোনা গেল। “ফিকরু তো গোয়ার সঙ্গে বেশ খেলেছে। গার্সিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ওদের টিমটাও শীর্ষে। সেখানে আমার দল সিন্ডারেলার মতো। বৃষ্টি, ক্লান্তি লেগেই রয়েছে। প্র্যাকটিসের মাঠও পাই না...।”
পঁচিশ বার মার্চিং অর্ডার পাওয়া ফুটবলারের কণ্ঠস্বরে যা বোধহয় মানায় না। আইএসএল কভার করতে আসা ইতালির সাংবাদিক কার্লো পিজ্জাতি বলছিলেন, “মার্কোর আগ্রাসন ওকে জিতিয়ে দেয়। কিন্তু ওটাই ওর সব নয়।” ঠিকই বোধহয়। তাঁর পাল্লায় পড়ে তুমুল ধমক-ধামক হজম করা এক ফুটবলারকেও তো বলতে শোনা গেল, “থাকুক না আগ্রাসন। তাই বলে ডাউন টু আর্থ লোকটাকে ভুলে যেতে হবে?”
জিদান, শুনছেন?