রানের ভূস্বর্গ নিয়ে ধোনিদের অপেক্ষায় সেডন পার্ক

নিউজিল্যান্ডে এ বারের বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলতে চলেছে ভারত। যে দেশে দিনকয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বোলাররা দাপট দেখিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার সেডন পার্কে ভারত বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচে সে রকম কিছু হওয়ার সুযোগ কম। কারণ পিচ কিউরেটর জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি যা উইকেট বানিয়েছেন তাতে প্রচুর রান উঠবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হ্যামিলটন শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

নিউজিল্যান্ডে এ বারের বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলতে চলেছে ভারত। যে দেশে দিনকয়েক আগেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বোলাররা দাপট দেখিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার সেডন পার্কে ভারত বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচে সে রকম কিছু হওয়ার সুযোগ কম। কারণ পিচ কিউরেটর জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি যা উইকেট বানিয়েছেন তাতে প্রচুর রান উঠবে।

Advertisement

এমনিতে হ্যামিলটনের এই ছোট মাঠ ঐতিহাসিক ভাবে সিম আর সুইং সহায়ক। কিন্তু ‘টার্ফ ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত সেডন পার্কের পিচ কিউরেটর কার্ল জনসন অন্য কথা শোনাচ্ছেন। এবং তিনি জানাচ্ছেন যে, আইসিসির নির্দেশ মেনে ব্যাটিং-বন্ধু উইকেট তৈরি করেছেন ভারত ম্যাচের জন্য। “আইসিসি আমাদের বলেছিল ভাল ব্যাটিং ট্র্যাক তৈরি করতে। যে সব পিচে সিম মুভমেন্ট প্রায় থাকবেই না। টার্নও কম হবে। এখানে যে দুটো ম্যাচ হল, তার পিচ নিয়ে আইসিসি খুশি,” বলছেন তিনি। সেই দু’ম্যাচের মধ্যে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবোয়ে ম্যাচও, যেখানে মোট ৬১৬ রান ওঠে। “এমনিতে আমরা চেষ্টা করেছি পিচের সারফেসটা শক্ত রাখার। যাতে সমান বাউন্স আর ক্যারি থাকে,” বলছেন জনসন।

“অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে ধোনির পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছিল শীতকালে
একটা ভল্লুক পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতেই ও একটা গ্রিজলি ভল্লুক হয়ে গিয়েছে।
যে বিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ওঁত পেতে বসে আছে। ঠিক যেমন নদীতে সাঁতার কাটা
সামন মাছ ধরতে বসে থাকে গ্রিজলি বিয়ার!” —ইয়ান চ্যাপেল।

Advertisement

হ্যামিলটন মাঠের তিন দিক খোলা দেখে মহম্মদ শামিদের মুখে হাসি ফুটতে পারে। কিন্তু উইকেটে তাঁদের জন্য খুব বেশি কিছু থাকার প্রত্যাশা নেই। কারণ উইকেট ঘাসবিহীন। কার্ল বলছেন, “বিশ্বকাপের উইকেট তৈরি করতে প্রায় দু’সপ্তাহ লেগে গিয়েছে। আমরা ন’টা স্ট্রিপ তৈরি করেছি। এই মাঠে দুটো পূর্ণ ম্যাচ-সহ যে তিনটে ম্যাচ হয়েছে, ভারত ম্যাচও সে রকম উইকেটেই হবে। স্ট্রিপ আলাদা, কিন্তু পিচের প্রকৃতি এক রকমের।”

সেডন পার্কের চার দিকের বাউন্ডারিই বেশ ছোট। তাই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শিখর ধবন, সুরেশ রায়নার মতো স্ট্রোকপ্লেয়ারদের আটকে রাখা বেশ কঠিন হতে চলেছে অনভিজ্ঞ আইরিশ বোলারদের জন্য। “সাইড বাউন্ডারিগুলো ৬০ মিটারের একটু বেশি। স্ট্রেট বাউন্ডারির একটা তার চেয়েও কম। এলইডি বাউন্ডারি বোর্ডের জন্য তিন মিটার জায়গা চলে গিয়েছে, তাই বাউন্ডারির সাইজ এতটা ছোট,” বলছেন জনসন। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “সেডন পার্কের সবচেয়ে ভাল জিনিস হল, এখানকার পিচ ড্রপ ইন নয়। অকল্যান্ড বা ওয়েলিংটনের মাঠে রাগবিও খেলা হয়। এখানে কিন্তু শুধু ক্রিকেটটাই হয়। এখানে ক্রিকেট খেলা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ। তাই বছরে মাত্র ছ’মাস পিচ ব্যবহার হয়।”

মঙ্গলবারের ভারত-আয়ারল্যান্ড ম্যাচ স্বাভাবিক ভাবেই হাউসফুল। আইসিসির মিডিয়া অপারেশন্স ম্যানেজার নিকোলাস কাভানাঘ এ দিন জানালেন, মাঠের দশ হাজার দুশো সিটেরই টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। “আসলে অকল্যান্ড থেকে প্রচুর ভারতীয় আসবেন এই ম্যাচটা দেখতে। মঙ্গলবার মাঠ ভর্তি থাকবে বলেই আশা করছি,” বলছেন তিনি।

ভারতীয় সমর্থকরাও তেমন আশা করছেন, মঙ্গলবার আরও একটা দুর্দান্ত জয় পাবেন ধোনিরা। টিম ইন্ডিয়া নিয়ে এখন মজে ক্রিকেট বিশ্ব। পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার আকিব জাভেদ যেমন। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কোচ আকিব বিশেষ ভাবে প্রভাবিত শামির পারফরম্যান্সে। তিন ম্যাচে ৯ উইকেটের মালিক শামি নিয়ে আকিব বলছেন, “এই ভারতীয় লাইন আপের সেরা বোলার হল মহম্মদ শামি। ভাল পেস বোলার হওয়ার সব মশলা ওর মধ্যে আছে। শামি এই টিমের সম্পদ। তবে তরুণ মোহিত শর্মাকে দেখেও বেশ ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে টিমের জন্য ও ভাল অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।”

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন

বিরানব্বইয়ে পাকিস্তানের কাপ-জয়ী টিমের অন্যতম সদস্য বুঝিয়েও দিয়েছেন, কেন তাঁর কাছে শামি সেরা ভারতীয় পেসার। “একজন পেসারের গতিটাই সবাই সবচেয়ে আগে লক্ষ্য করে। শামির কাছে যেটা ভাল রকম আছে। তা ছাড়া গত কয়েকটা ম্যাচে ধারাবাহিক ভাবে ও যে লেংথে বল করে গিয়েছে, সেটাও তফাত গড়ে দিচ্ছে। পাকিস্তান ম্যাচে ওর লাইন-লেংথ অসাধারণ ছিল,” ব্যাখ্যা পাক পেসারের। সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “অস্ট্রেলিয়া এমন একটা দেশ যেখানে পেসারকে পিঠ ভেঙে স্টাম্প তাক করে বল করতে হবে। শামি ঠিকঠাক লেংথে ডেক হিট করতে পারে। এই ফর্মটা যদি নকআউটেও ধরে রাখতে পারে, তা হলে বিশ্বকাপে ভারতকে হারানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।”

আর মোহিতকে কেন পছন্দ আকিবের? “ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়ার একটা সহজাত ক্ষমতা আছে ওর। যে কোনও সিমারের কাছে যেটা খুব ভাল অস্ত্র। দূর থেকে দেখে মনে হয় না মোহিতের বলে গতি আছে। কিন্তু ওর বোলিং খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হঠাৎ করে বলের গতি পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়িয়ে ফেলতে পারে মোহিত। সাধারণ কিছু ডেলিভারির মধ্যে হঠাৎ করে ওই বল সেরা ব্যাটসম্যানদেরও চমকে দেবে। ১৩২-১৩৫ কিমিতে বল করতে করতে হঠাৎ একটা ১৪০ কিমির বল করাটা সত্যিই দুর্দান্ত।”

তবে উমেশ যাদবকে দেখে খুব খুশি নন আকিব। বিদর্ভের পেসারের গতি আছে স্বীকার করলেও আকিব মনে করেন, উমেশ বড্ড বেশি ভুল করেন। “উমেশের ক্ষমতা আছে কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই। ও যে পেসে বল করে, তাতে উইকেটের একটা দিকে বল করা উচিত। চার দিকে বল করলে চলবে না। একটা নির্দিষ্ট লাইন মেনে চলতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন