রূপকথা মাথায় রেখেই বলছি, শেষ হাসি ডাচদের

কোস্টারিকা টিমটার ডাকনাম শুনলাম ‘লা টিকোস’। কোস্টারিকানরা নাকি যে কোনও ছোট জিনিস বোঝাতে তার সামনে ‘ইকো’ জুড়ে দেন। সে দিক থেকে দেখলে ডাকনামটা ওদের টিমের জন্য এক্কেবারে আদর্শ। ছোট্ট একটা দেশ আর তাদের অপেক্ষাকৃত অনামী ফুটবল টিম। অথচ সেই টিমটাই এ বারের বিশ্বকাপের সব হিসাব ওলটপালট করে দিয়েছে!

Advertisement

পিটার শিল্টন

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৩
Share:

কোস্টারিকার গোলমেশিন জোয়েল ক্যাম্পবেল।

কোস্টারিকা টিমটার ডাকনাম শুনলাম ‘লা টিকোস’। কোস্টারিকানরা নাকি যে কোনও ছোট জিনিস বোঝাতে তার সামনে ‘ইকো’ জুড়ে দেন। সে দিক থেকে দেখলে ডাকনামটা ওদের টিমের জন্য এক্কেবারে আদর্শ। ছোট্ট একটা দেশ আর তাদের অপেক্ষাকৃত অনামী ফুটবল টিম। অথচ সেই টিমটাই এ বারের বিশ্বকাপের সব হিসাব ওলটপালট করে দিয়েছে!

Advertisement

এই বিশ্বকাপে ওরা যে রকম ভয়ডরহীন, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে বড় বড় টিমের ছুটি করে দিয়েছে, তার পরে অবশ্য কোস্টারিকাকে কেউ আর ছোট দল বলবে না। ওদের স্বপ্নটাও আর ছোট নেই। কোচ হর্জে লুই পিন্টোর দক্ষ পরিচালনায় কোস্টারিকাই এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় বিস্ময়! এমন একটা টিম যারা লম্বা পাস খেলতে ভয় পায় না। অত্যন্ত দ্রুত গতির জমাট, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। সঙ্গে এদের গোলে রয়েছে কেলর নাভাসের মতো গোলকিপার। যার কিপিংকে আমি এক কথায় অসাধারণ বলব।

আক্রমণে পটু হলেও কোস্টারিকার রক্ষণটাও কিন্তু জমাট। লক্ষ্য করে দেখবেন, দুর্গ আগলাতে ওরা সাধারণত তিন জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের উপর নির্ভর করে থাকে। আর রয়েছে জোয়েল ক্যাম্পবেল। ছেলেটা শুধু অসাধারণ ফুটবলারই নয়, অসম্ভব খাটিয়েও। আমরা যাকে বলে থাকি ‘আনসেলফিশ রানিং’ বা নিঃস্বার্থ দৌড়, প্রতিটা ম্যাচেই ক্যাম্পবেলকে আমি সেটা করতে দেখছি। যা শেষ পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজি হিসাবে দারুণ। আর এটাই কোস্টারিকার সাফল্যের একটা বড় কারণ। সঙ্গে টিমটা অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী খেলছে। ওদের এখান থেকে হারানোরও আর কিছু নেই। আর এই দুইয়ের মিশেলই কোস্টারিকাকে দারুণ বিপজ্জনক করে তুলছে।

Advertisement

তবে এর পরেও বলব, কোস্টারিকা খুব পরিশ্রমী আর উঁচুদরের টিম হলেও ওরা কিন্তু এখনও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেনি। যে জন্য আজকের কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধে নেদারল্যান্ডসকেই এগিয়ে রাখছি। সোজা কথায়, কমলা-বাহিনী ফুটবলের সব বিভাগেই ওদের থেকে শক্তিশালী। ওদের ফুটবল ঐতিহ্যের দিকে একবার তাকানযোহান ক্রুয়েফ, মার্কো ফান বাস্তেন, রুড খুলিট, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড—বহু ফুটবল রোম্যান্টিকই চাইছেন, এটা যেন নেদারল্যান্ডসের বছর হয়ে থাকে। কারণ বলা হয়, ডাচরা ফুটবলের সেই বিশ্বশক্তি, যাদের ঝুলিতে শুধু বিশ্বকাপটা নেই।

কারও যদি মনে হয় এই চাওয়াটা অতিরিক্ত আবেগ-তাড়িত, তা হলেও বলব, এ বারের মতো কোস্টারিকার ঝুলিতে আর কোনও চমক বাকি নেই। ওরা প্রত্যাশা ছাপিয়ে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। কিন্তু কোস্টারিকার রূপকথা মাথায় রেখেই বলছি, রবিন ফান পার্সি, আর্জেন রবেন, ওয়েসলি স্নেইডার অ্যান্ড কোম্পানিকে হারানোটা ওদের ক্ষমতার বাইরে।

যে টিমগুলো আজ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে, তাদের মধ্যে কোস্টারিকা বাদে বাকি তিনটের বিরুদ্ধে আমি খেলেছি। স্বাভাবিক ভাবেই আমার নিজের এবং আমার দেশবাসীর আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে খেলার স্মৃতি খুব সুখের নয়। আমরা আজ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারিনি, সে দিন রেফারি আর তাঁর সহকারীরা কী ধরতে পারেননি যে, আমাদের চোট্টামি করে ’৮৬ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেওয়া হয়েছিল। সে সবই অবশ্য এখন ইতিহাস। আর্জেন্তিনার এখনকার টিমটার অন্য একগুচ্ছ সমস্যা। যার সবচেয়ে বড়টার নাম অতিরিক্ত মেসি-নির্ভরতা। বেলজিয়ামের মহড়া নিতে মাঠে নামার আগে এই সমস্যাটার সমধ্যান খুঁজে বের না করলে কিন্তু ওদের দুঃখ আছে।

বেলজিয়াম টিমটা প্রতিটা ম্যাচের সঙ্গে উন্নতি করেছে। অন্য দিকে অনেকেই বলছে, আর্জেন্তিনা সেট পিস খেলতে পারছে না। এমনকী ওদের দেখে মনেই হচ্ছে না টিমটার কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে। ওরা খালি বলটা যে করে হোক মেসির কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। আর তার পর ও কী করে দেখার অপেক্ষায় থাকছে। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে এই স্ট্র্যাটেজি খাটা মুশকিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচে বেলজিয়ামকে চাপের মুখে একটু নড়বড়ে দেখিয়েছিল। ফলে চাপে পড়লে বেলজিয়াম কী করবে সেটা দেখার। তবে বড় কোনও তারকা না থাকলেও টিমটা দারুণ জমাট। আর ওরা আর্জেন্তিনাকে সমস্যায় ফেলবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন