ভুবনেশ্বর কুমার।
কিছু কিছু প্রতিভা এমন হয়, যারা হঠাৎ করে নজর কেড়ে নেয়। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ত্রয়ী হিসেবে আমরা এত দিন চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার কথা বলছিলাম। অজিঙ্ক রাহানে বলে ছেলেটাকে তখন তো কেউ খেয়ালই করেনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরির কাছাকাছি স্কোর, নিউজিল্যান্ডে দুটো সেঞ্চুরি আর এখন ইংল্যান্ডে শতরান। মনে হচ্ছে নতুন এক সুপারস্টারকে পেতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট।
আমার যত দূর মনে পড়ছে, লর্ডসে এত সবুজ পিচ কোনও দিন দেখিনি। এ রকম একটা উইকেটে ব্যাট করতে পারাটা বেশির ভাগের কাছেই স্বপ্নের মতো। বিশেষ করে যেখানে তোমাকে বল করতে আসা বোলিং জুটি মিলিত ভাবে ছশো উইকেটের বেশির মালিক। তার উপর তোমার টিম ১৪৫-৭ অবস্থায় যখন ধুঁকছে, তখন টেলএন্ডারদের সঙ্গে ব্যাট করে রাজকীয় একটা সেঞ্চুরি করে যাওয়া। স্বপ্ন ছাড়া আর কী বলব! গোটা বিশ্ব এখন অবাক হয়ে রাহানেকে দেখছে। আর ছেলেটার বয়স মাত্র ২৬!
বিশ্বের সেরা কিছু ক্রিকেটার কিন্তু ছ’নম্বরে ব্যাট করেছে। অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইক হাসি, আমাদের নিজেদের ভিভিএস লক্ষ্মণ। এই গ্রহের নিবাসীদের বৈশিষ্ট্য শুধু রান নয়। এদের কিংবদন্তির ভাস্কর হল এদের সঙ্গে ব্যাট করা টেলএন্ডার-দের সঙ্গ। ক্রিজে যাদের উপস্থিতির ওজন এক টুকরো কাগজের চেয়ে বেশি নয়! ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম: আপনাকে বলা হচ্ছে আপনার গাড়িটা চালাতে, কিন্তু তার টায়ারের জায়গায় রয়েছে আপনার ছোট্ট বাচ্চার খেলনা সাইকেলের চাকা।
বর্ডার-লক্ষ্মণদের মতো রাহানেও টেলএন্ডারদের বাঁচায় না। বরং ওদের প্রতি পরোক্ষে এক রকম আস্থা রাখে। লর্ডসে দেখলাম মাঝে মাঝেই রাহানে টেলএন্ডারের সঙ্গে গল্প করছে। উল্টো দিকে ব্যাট করার সময় শীতল নিয়ন্ত্রণ দেখাচ্ছে। রাহানের মধ্যে একটা প্রখর ক্রিকেট-বুদ্ধিও দেখলাম। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সময় কাছাকাছি আসতে ও গিয়ার পাল্টে ফেলে হঠাৎ আগ্রাসী ভাবে ব্যাট করতে লাগল। তাতে বিপক্ষ বোলিংয়ের ধাঁধা তো লাগলই, হোম ক্যাপ্টেনের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে দাঁড়াল।
তবে রাহানেই একমাত্র তরুণ ভারতীয় নয় যাকে দেখে আমার ভাল লাগছে। ভুবনেশ্বর কুমারও দেখছি ব্যাটসম্যান হিসেবে দিব্যি দাঁড়িয়ে গিয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে বিদেশ সফরের টেস্ট টিমে ওকে রাখা হয়নি। এখন কিন্তু টিমের অন্যতম ভরকেন্দ্র হয়ে গিয়েছে ভুবি। বোলিং অলরাউন্ডার বলব কি ওকে? এ রকম আর কয়েকটা ইনিংস খেলতে পারলে কিন্তু ভারতীয় লাইন-আপ এক জন সত্যিকারের সাত নম্বর ব্যাটসম্যান পেয়ে যাবে।
এই টেস্টে কিন্তু এখন ইংল্যান্ডই পিছিয়ে। ওদের প্রধান বোলারদের প্রচুর ওভার বল করে যেতে হচ্ছে। ওদের স্পিনারটাকে বেশ সন্দেহজনক দেখাচ্ছে। উইকেটকিপারকে দেখে তো মনে হচ্ছে লোহার গ্লাভস পরে কিপিং করতে নেমেছে। অনিয়মিত পেসারের কারও মধ্যে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা দেখছি না। যে পিচটা তৈরি হয়েছিল ইংল্যান্ডের সব খামতি ঢাকতে, সেই পিচই যেন ওদের দোষত্রুটি আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে। নিয়তির পরিহাস আর কাকে বলে!