একেই লর্ডস, তার উপর আবার সেখানে ‘শেষ’ টেস্ট— মহেন্দ্র সিংহ ধোনির কাছে তাই সোমবারের টেস্ট জয় তাঁর স্মরণীয় জয়গুলির তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে বলে জানাচ্ছেন। সাগরপারে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সংসারে যখন ‘ফিলগুড’ হাওয়া, ইংরেজ ক্রিকেটমহল তোলপাড় সমালোচনার ঝড়ে। যেমনটা হয়েছিল দেড় বছর আগে ধোনিরা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ হারার পর।
যদিও সবে দ্বিতীয় টেস্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে সিরিজ। এখনও তিনটে বাকি। কিন্তু একটা হারেই সাহেবরা যা ‘গেল গেল’ রব তুলেছে, তা হয়তো ধোনিদের প্রত্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে। ভারত অধিনায়ক বলেছেন, “এই সাফল্য দলের সবার। গত দুটো বিদেশ সফর থেকেই তো আমরা এ রকম খেলার জন্য মরিয়া হয়েছিলাম। এত দিনে তার ফল পেলাম”।
তাঁর এত উৎফুল্ল হওয়ার কারণটাও নিজেই জানালেন ধোনি, “লর্ডসে আগামী কয়েক বছরে আর টেস্ট কোথায়? তাই মনে হয় এখানে এটাই আমার শেষ টেস্ট। সে জন্যই এই জয়টা আমার কাছে স্পেশ্যাল।”
যাঁর বোলিং ইংরেজদের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে ধোনির ভারতকে ‘স্পেশ্যাল’ জয় এনে দিল, সেই ইশান্ত শর্মার আবার ব্যক্তির আগে দলকে বড় করে দেখানোর চেষ্টায় যেন খামতি নেই। বলেছেন, “সারা দুনিয়া যখন আমার পাশে ছিল না, তখন শুধু আমার টিম আমাকে সমানে সাহস ও সমর্থন জুগিয়েছে। তাই কে কী বলল, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। সতীর্থরা পাশে। এটাই যথেষ্ট।”
ভারতীয় দলে এই একাত্মতার যেন ঠিক উল্টো ছবি ইংল্যান্ড শিবিরে। দলের বিপর্যয়ের মধ্যেই উইকেটকিপার ম্যাট প্রায়র জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম টেস্টের আগে লাগা চোট নিয়ে তিনি দু’টো টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু বাকি সিরিজে আর খেলবেন না। তাঁর অ্যাকিলিস টেন্ডনের জন্য যে ফর্ম ভাল যাচ্ছে না, তা এত দিনে বুঝতে পেরে প্রায়র অস্ত্রোপচার করাতে চাইছেন বলে জানিয়েছেন বোর্ডকে। ফলে জোস বাটলারকে টেস্ট অভিষেকের সুযোগ দিচ্ছেন ইংরেজ নির্বাচকরা। ও দিকে আবার জাডেজা-বিতর্কে জেমস অ্যান্ডারসনকে ১ অগস্ট প্রথম শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার গর্ডন লিউইস। ফলে তৃতীয় টেস্টের পরে ইংরেজদের সেরা পেসারেরও বাকি সিরিজ থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
ইংল্যান্ড দলের এমনই বেহাল অবস্থা যে, তাঁদের ভরসা দিতে এগিয়ে এসেছেন কেভিন পিটারসেনের মতো ইংরেজ ক্রিকেটের ‘ব্যাড বয়’-ও। কেপি-র কথায়, “অ্যাসেজ ফিরিয়ে আনতে বা বিশ্বকাপে ভাল কিছু করতে ইংল্যান্ডের হয়ে ফের মাঠে নামতেও প্রস্তুত আমি।”
প্রাক্তন ক্রিকেটার জিওফ বয়কট আবার বলেছেন, “এখন বোধহয় একমাত্র অ্যালিস্টার কুকের পরিবারের লোকেরাই চাইছে ও ক্যাপ্টেন থাকুক”। তবু নির্বাচকরা তাঁকে আরও একটা সুযোগ দিয়েছেন। সামনের রবিবার সাউদাম্পটনের রোজ বোলে তৃতীয় টেস্টে কুক-ই ধোনির সঙ্গে টস করতে নামবেন। ইয়ান বোথামও বলেছেন, “কুকের এ বার একটু ছুটি দরকার।” কুক নিজে অবশ্য অনড়, “এত খারাপ সময় আমার জীবনে আসেনি। কিন্তু পালিয়ে যাওয়াটা কোনও সমাধান নয়।”
ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা আবার ঠিক উল্টো মেজাজে। সচিন তেন্ডুলকর যেমন ভারতীয় দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। লন্ডনে টিভি সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তি ক্রিকেটার বলেছেন, “লর্ডসে প্রথম দিনের খেলা দেখেই আমার মনে হয়েছিল, ভারত এই টেস্টা জিতে যেতে পারে।” আর রবি শাস্ত্রীর সার্টিফিকেট, “গত তিরিশ বছরে বিদেশে ভারতীয় টিমকে এত ভাল খেলতে দেখিনি।”