ইউরোপ জুড়ে জার্মান আতঙ্ক

সাত ম্যাচ বাকি থাকতে বুন্দেশলিগা বায়ার্নের

খুব তাড়াতাড়ি ঠিকানা বদলাতে চলেছেন বায়ার্ন মিউনিখের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং টিমের কারিগর উলি হোয়েনেস। তহবিল তছরুপের দায়ে আগামী বেশ কিছু বছর জেলে কাটাতে হবে তাঁকে। তার আগে যেন তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীই বাস্তব করে দিল বায়ার্ন মিউনিখ। ২০০৭ মে-তে হোয়েনেস বলেন, “লিগ টেবলে বাকিদের যেন আমাদের দূরবিন নিয়ে দেখতে হয়। আর দেখে যেন ওরা প্রচুর কান্নাকাটি করে।” আর মঙ্গলবার রাতে সাত-সাতটা ম্যাচ বাকি থাকতেই বুন্দেশলিগা জিতে তাঁর প্রাক্তন টিম বুঝিয়ে দিল, লিগের বাকি টিমের থেকে তাদের দূরত্ব কতটা। যা দেখে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপ বলেই ফেললেন, “বায়ার্ন অবিশ্বাস্য টিম। সত্যিই ওদের দেখতে দূরবিন দরকার হচ্ছে!”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

দুরন্ত বায়ার্ন বিগ্রেড

খুব তাড়াতাড়ি ঠিকানা বদলাতে চলেছেন বায়ার্ন মিউনিখের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং টিমের কারিগর উলি হোয়েনেস। তহবিল তছরুপের দায়ে আগামী বেশ কিছু বছর জেলে কাটাতে হবে তাঁকে। তার আগে যেন তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীই বাস্তব করে দিল বায়ার্ন মিউনিখ।

Advertisement

২০০৭ মে-তে হোয়েনেস বলেন, “লিগ টেবলে বাকিদের যেন আমাদের দূরবিন নিয়ে দেখতে হয়। আর দেখে যেন ওরা প্রচুর কান্নাকাটি করে।” আর মঙ্গলবার রাতে সাত-সাতটা ম্যাচ বাকি থাকতেই বুন্দেশলিগা জিতে তাঁর প্রাক্তন টিম বুঝিয়ে দিল, লিগের বাকি টিমের থেকে তাদের দূরত্ব কতটা। যা দেখে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপ বলেই ফেললেন, “বায়ার্ন অবিশ্বাস্য টিম। সত্যিই ওদের দেখতে দূরবিন দরকার হচ্ছে!”

মঙ্গলবার হার্থা বার্লিনের বিরুদ্ধে ৩-১ জয়ের সঙ্গে আসা ২৪তম লিগ খেতাব যে বায়ার্নের দখলেই যাবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। ২৭ ম্যাচ থেকে ৭৭ পয়েন্ট, ৫২ ম্যাচ (টানা ২০টা) জেতার রেকর্ড এ সব পরিসংখ্যান দিয়ে দুই দলের ব্যবধান বোঝানো অসম্ভব। চ্যাম্পিয়নশিপ জয় এ বার এল গত বারের চেয়েও কম সময়ে। এত কম সময়ে ইউরোপের কোনও বড় লিগই কেউ জিততে পারেনি। লিগ জয়ের ট্রফিটা মার্চ মাসে এলে কী হবে, বাকিদের পিছনে ফেলে দেওয়ার কাজটা শুরু হয়ে গিয়েছিল গত অগস্টে প্রথম কিক-অফ থেকেই। শাসনে, কর্তৃত্বে, ঠান্ডা মাথার ফুটবলে, আভিজাত্যে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি অন্য কেউ।

Advertisement

এত মসৃণ ভাবে চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে বায়ার্ন যে, গত শীতে তাদের দুটো ড্র হয়ে যাওয়া ম্যাচ (ফ্রেইলবার্গ এবং লেভারকুসেনের সঙ্গে) এখন অঘটনের মতো দেখাচ্ছে। আর তাদের এ রকম একপেশে জয়ে প্রশ্ন উঠছে, লিগের লড়াইটা কি বড্ড বেশি ভারসাম্যহীন হয়ে গিয়েছে? ডর্টমুন্ড সিইও হান্স-জোয়াকিম ওয়াজকে তো এমন অপবাদও দিয়েছিলেন যে, বাকি টিমদের ‘ধ্বংস’ করে দিচ্ছে বায়ার্ন। আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, গুয়ার্দিওলার ফুটবল-মস্তিষ্ক, ফুটবলারদের মান আর ক্লাবের আর্থিক শক্তির ত্রিফলায় লিগ খেতাবের লড়াইটাই না অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়! যার জন্য আবার বায়ার্ন প্রেস অফিসার মার্কাস হরউইককে বলতে হয়েছে, “মনে হয় ভাল খেলার জন্যও আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!”

গত ক’দিন ধরে অবশ্য বায়ার্নের অপ্রতিরোধ্যতা নিয়ে হা-হুতাশের জায়গায় তৈরি হয়েছে তাদের কৃতিত্ব নিয়ে বিস্ময়-মেশানো শ্রদ্ধা। মাঠে থাকা জার্মানির ম্যানেজার জোয়াকিম লো যেমন প্রশংসা করেছেন বায়ার্নের অদম্য খিদে আর আপস না করার মনোভাবের। প্রথম দিকে গুয়ার্দিওলা ঘরানার ফুটবল নিয়ে জার্মানিতে বেশ অসূয়া থাকলেও এখন সেখানে তাঁর প্রশংসার ঢেউ। বলা হচ্ছে, গত পঞ্চাশ বছরে বুন্দেশলিগা এই ধরনের ফুটবল দেখেনি। বলা হচ্ছে, জার্মানিতে কেউ ফুটবলের সঙ্গে শিল্পের এই মিশ্রণ ঘটাতে পারেনি, যা গুয়ার্দিওলা করে দেখাচ্ছেন। বায়ার্নের পাসিং গেম আর নিখুঁত টেকনিক্যাল ফুটবল নিয়ে মুগ্ধ জার্মান ফুটবলমহল। শুধু তাই নয়, ইউরোপ জুড়ে একটা বায়ার্ন-ভীতি তৈরি হয়েছে। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা এখনই বলতে শুরু করেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা আবার বায়ার্নই তুলে নেবে।

অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বার্লিন-বায়ার্ন যুদ্ধের ফল কী হবে, সবাই জানত। সে দিক দিয়ে ম্যাচটার কোনও বৈশিষ্ট্য না থাকলেও এটা হয়ে থাকল বায়ার্নের কর্তৃত্বের অসাধারণ উদাহরণ। বল পজেশনের রেকর্ড গত দশ বছর ধরে রাখছে বুন্দেশলিগা। যার মধ্যে মঙ্গলবার বায়ার্নের ৮২.৪ শতাংশ পজেশন রেকর্ড। দশ বছর আগে কোনও টিম রেকর্ডটা ভাঙতে পারত কি না, সেই তর্ক অর্থহীন। কারণ বায়ার্ন এখন যা খেলছে, অতীতে কোনও টিম তার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। মঙ্গলবার তারা বল পাস করেছে ১,০৭৮ বার। যেখানে বুন্দেশলিগার কোনও টিম চার অঙ্কই ছুঁতে পারেনি। বায়ার্নের অস্বাভাবিক নিখুঁত ফুটবলের চলমান ম্যানুয়াল ক্যাপ্টেন ফিলিপ লামকে আবার মিডফিল্ডে খেলিয়েছিলেন বায়ার্ন কোচ। যেখানে ১৩৪টা পাস করেন লাম, এবং সবগুলোই নিখুঁত।

শেষ বাঁশি বাজার পর বায়ার্ন টিম নাচানাচি করলেও ঠান্ডার জন্য ‘বিয়ার স্নান’-টা মুলতবি রাখতে হয়েছিল। উৎসবের মধ্যেও গুয়ার্দিওলার গলায় ছিল সংকল্প। হোয়েনেসকে এই জয় উৎসর্গ করে তিনি বলেন, “জয়ের ভিত গত মরসুমে জুপ হেইঙ্কেস তৈরি করে গিয়েছিলেন। পরের সাত ম্যাচে আমাদের গতি আর ছন্দ আরও ভাল করতে হবে।”

বুন্দেশলিগার ইতিহাসে এটা কালজয়ী পারফরম্যান্স হতে পারে। কিন্তু টিম গুয়ার্দিওলার কাছে লিগ-জয় হয়তো প্রধান লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ মাত্র। বায়ার্ন যে এখন জার্মান লিগের চেয়েও অনেক বড়। তাদের আসল পরীক্ষা ইউরোপীয় ইতিহাস নতুন করে লেখা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন