খুদে মেসিকে খুঁজে পেয়েছিলেন যিনি। গ্রান্দোলি টিমের সঙ্গে আপারিসিও (ডান দিকে)।
নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ফ্রি-কিক থেকে ইরান ম্যাচে চোখ ধাঁধানো গোল। ব্রাজিলের মাটি বাঁ পায়ের তালেই নাচাচ্ছেন লিওনেল মেসি!
শ্রেষ্ঠত্বের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে বুধবার রাতে কমলা সিংহদের গুহায় ঢুকবেন এলএম টেন।
কিন্তু তাঁর আগে আর্জেন্তিনা দলকে তাতাতে অভিনব উপায় বেছে নিল এক আর্জেন্তিনীয় দৈনিক। তুলে আনল সেই দৃশ্য, যখন মেসি পায়ে প্রথম ফুটবল ছুঁয়ে ছিলেন। তুলে ধরলেন সেই প্রথম মানুষটিকে, যিনি রোসারিও-র এক বাচ্চাকে চিনিয়েছিলেন ফুটবল। কিংবদন্তির জীবনের সেই প্রথম কোচ, সালভাদর আপারিসিও। ছ’বছর আগে তিনি প্রয়াত। কিন্তু তাঁর সেই হারিয়ে যাওয়া সাক্ষাৎকার আবার নতুন জীবন পেল।
২০০৭-এ গেতাফের বিরুদ্ধে পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করে বিশ্বফুটবলে সাড়া ফেলে দেন মেসি। কিন্তু আপারিসিও এক ঝলকেই বুঝেছিলেন, এই বাচ্চা ছেলেটাই এক দিন ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সব দৈনিকের শিরোনাম। এক দিন শাসন করবে বিশ্ব ফুটবল।
ওই আর্জেন্তিনীয় দৈনিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মেসির প্রথম কোচ আপারিসিও বলেছিলেন, “লিও ওর মা আর ঠাকুমার সঙ্গে মাঠে বসে আমার টিম গ্রান্দোলি-র অনেক ম্যাচ দেখত। তখন ও মাত্র পাঁচ বছরের বাচ্চা। এক দিন এমন হল, আমার দলে একটা ছেলে কম পড়ছিল। বাধ্য হয়েই লিওর মা-কে বলেছিলাম, আপনার ছেলেকে খেলাতে পারব কি না। কিছুই করতে হবে না লিওকে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। প্রথমে লিওর মা আপত্তি করেন। কিন্তু ওর ঠাকুমা বলেন, কোনও সমস্যা নেই। আমি লিওকে খেলাতে পারি।”
সেই ছোট্ট ঘটনাই প্রথম মেসিকে কোনও ফুটবল মাঠ চিনিয়েছিল। আপারিসিও আরও বলেছিলেন, “সে দিন প্রথম বলটা ধরে মেসি বুঝতে পারেনি কী করবে। আমি চিৎকার করে বলি, গোলে শট মারো। কিন্তু ও এতই ছোট ছিল যে, বুঝতে পারেনি। কিন্তু সেই প্রথম দিনই দেখেছিলাম, কী ভাবে ও বল নিয়ে ওর থেকে শরীরে বড় ছেলেদের পিছনে ফেলে দৌড়ে যাচ্ছে! তখন থেকেই ওকে দলে নিয়মিত সুযোগ দিতে থাকি। সব ম্যাচে সাত-আটটা গোল করত।”
বার্সেলোনা জার্সিতে প্রথম ম্যাচ থেকেই মেসি প্রমাণ করেছিলেন, কেন বিশ্বের সেরা প্রতিভার মধ্যে তিনি স্থান পাবেন। তবে বার্সায় এলএম টেনের মন্ত্রমুগ্ধ করে দেওয়া খেলা দেখে মোটেই অবাক ছিলেন না তাঁর প্রথম কোচ আপারিসিও। বলেছিলেন, “আমি জানতাম মেসি এমনটাই অসাধারণ খেলবে। যখন ওকে সিনিয়র লেভেলে খেলতে দেখি আমার আনন্দে কান্না পায়। আমিই প্রথম ওকে ফুটবল মাঠে নামিয়েছিলাম। ও যতই বড় হোক আমার কাছে সেই ছোট্ট লিওই থাকবে, যে বল ধরলেই মনে হতো স্পেশ্যাল কিছু করবে।”
বুধবার রাতে রবেনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে চলেছেন মেসি। এখনও পর্যন্ত রবেন তিনটে গোল করেছেন বিশ্বকাপে। কিন্তু আপারিসিও-র সেই ‘ছোট্ট লিও’-র কাঁধেই যে বর্তাচ্ছে গোটা আর্জেন্তিনার ভাগ্য। আর মাত্র দুটো জয় গ্রান্দোলি ক্লাবের সেই বিখ্যাত বাচ্চাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে!